চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে অবস্থান ও আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও রেলপোষ্য এবং রেলওয়ের গেটকিপাররা। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টা থেকে শুরু হওয়া এ অনশন গড়িয়েছে ষষ্ঠ দিনে। এরমধ্যে মায়ের সঙ্গে আসা ১ শিশুসহ ১২০ জন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজসহ (ঢামেক) বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দীর্ঘ সময় অনশনের ফলে ইতোমধ্যে ‘ছয় জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক’ বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। তাদের মধ্যে সিলেট সেকশনের ফাতেমা আক্তার, মনিরুল ইসলাম, কুলাউড়া সেকশনের সাজ্জাদ, টঙ্গীর লাকী আক্তার, লিজা, ফেনীর হালিমা খাতুন, ফাতেমা আক্তার, কাওসার, রুবেল, যশোর সেকশনের চামেলি বেগম, সুমাইয়া, শ্রীমঙ্গলের আকুল মন্ডল, কাউছার আহম্মেদ অনিক, জামালপুরের কাকলি বেগম, লালমনিরহাটের হালিমা আক্তার, পলাশ, হাফিজ মিয়া, শায়েস্তাগঞ্জের ফরহাদসহ কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। রাজধানীর বারডেম হাসপাতাল, নিওরো সায়েন্স হাসপাতাল, রেলওয়ে হাসপাতাল, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও মুগদা মেডিক্যাল কলেজসহ বিভিন্ন হাসপাতালে তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বাকিদের অনশনস্থলেই প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আর এদের মধ্যে ‘অন্তত ছয় জনকে আশঙ্কাজনক’ অবস্থায় মুগদা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা। রাজস্ব খাতে চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে গঠিত ‘রাজস্বকরণ বাস্তবায়ন ঐক্য পরিষদ পূর্ব ও পশ্চিম অঞ্চলের’ শ্রমিকেরা এ কর্মসূচি পালন করছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের মানোন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের ১ হাজার ৮৮৯ গেটকিপারের চাকরি স্থায়ীকরণের দাবিতে এই কর্মসূচি পালিত হয়।
অনশন আহ্বানকারী সংগঠনের দফতর সম্পাদক মো. আল মামুন বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ের মান উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্প থেকে ১ হাজার ৮৮৯ জন গেইট কিপার অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে নিয়োজিত আছি। এরমধ্যে ৫৭২ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, ৫৫৫ জন রেলপোষ্য এবং ৩২৫ জন নারী গেইট কিপার রয়েছেন। ২০১৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী প্রকল্পের কর্মরত গেইট কিপারদের রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করে চাকরি স্থায়ীকরণে রেলপথ মন্ত্রণালয়কে জরুরি ভিত্তিতে উদ্যোগ গ্রহণ করতে নির্দেশ দেন। কিন্তু রেলপথ মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। আমরা রেলপথ মন্ত্রণালয়ে বহুবার স্মারকলিপি দিয়েছি। চিঠি দিয়েছি। আমাদের দুর্দশার কথা জানিয়েছি। কিন্তু তারা আমাদের কোনও কথায় কর্ণপাত করেনি।
আন্দোলনকারীরা বলছেন, নিয়োগের সময় গেইট কিপারদের বেতন নির্ধারণ করা হয় সর্বসাকুল্যে ১৪ হাজার ৪৫০ টাকা। বিগত পাঁচ বছরে এ বেতন বাড়েনি। বেশির ভাগ গেইটকিপার তাদের নিজ জেলা ব্যতীত অন্য জেলায় চাকরি করেন। বর্তমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে বাসা ভাড়া পরিবারের ভরণপোষণ, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া, চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে তাদের হিমশিম খেতে হয়। অপরদিকে প্রায় সকলের বয়স ৩২ বছর অতিক্রম করার জন্য চাকরিতে ঢোকার সুযোগ নেই। এ অবস্থায় অস্থায়ীভাবে সৃজনকৃত পদ হতে রাজস্ব খাতে প্রেরণ করা সম্ভব। অথচ আমাদের চাকরির মেয়াদ প্রায় ৫ বছর অতিক্রম হয়েছে। তাই অবিলম্বে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে আমাদের চাকরি রাজস্বখাতে স্থানান্তর করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
গত ১৪৪ ঘণ্টা ধরে কমলাপুরের খোলা আকাশের নিচে গেইট কিপাররা অনশন চালিয়ে আসলেও এখনও পর্যন্ত রেলপথ মন্ত্রণালয় অথবা বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষ থেকে দাবি মেনে নেওয়ার কোন সুর্নিদিষ্ট ঘোষণা আসেনি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত গেইট কিপাররা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। অনশনের কারণে কোনও প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনার সৃষ্টি হলে তার দায় রেলপথ মন্ত্রণালয়কে নিতে হবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।