মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক আব্দুল আহাদের পৈত্রিকসূত্রে প্রাপ্ত শ্রীমঙ্গল উপজেলার লাংলিয়াছড়া মৌজার লাখাইছড়া দত্ত বস্তিতে ২৫ দশমিক ৯৩ একর আয়তনের ফলদ বাগান জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা, বাগানের ফলদ বৃক্ষ কেটে ধ্বংস, ফল লোটপাট, হুমকি-ধামকি এবং ১০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ অভিযোগ উঠেছে । বিবাদীপক্ষের হুমকি-ধামকির কারনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক আব্দুল আহাদ চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন বলে দাবি করেছেন। আব্দুল আহাদ অভিযোগে করেন, ঘটনার ব্যাপারে একাধিকবার থানায় অভিযোগ ও মামলা দায়ের করার পর মামলাভূক্ত আসামীরা জামিনে বেরিয়ে এসে পুনরায় তাঁর মালিকানাধীন বাগান দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আসামীগণ বাগানের গাছ কেটে, বাগানের প্রবেশের রাস্তা কাটাতার দিয়ে বন্ধ করাসহ তাঁকে ও তাঁর কেয়ারটেকারকে হত্যার হুমকি প্রদর্শন করে চলেছে। এসব ব্যাপারে স্থানীয়ভাবে শালিস-বিচারের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের দ্বারস্থ হলেও বিবাদীপক্ষ শালিস বিচারে উপস্থিত হচ্ছে না। উপরন্ত তাঁর বাগানের একের পর এক ক্ষতি সাধন অব্যাহত রেখেছে। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক আব্দুল আহাদ জানান, তাঁর পিতা শ্রীমঙ্গল শহরের জালালিয়া রোডস্থ বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মৃত হাজী আব্দুল কাদির প্রায় অর্ধশত বছর পূর্বে উপজেলার লাংলিয়াছড়া মৌজার লাখাইছড়া দত্ত বস্তিতে দখল ক্রয়সূত্রে ২১ দশমিক ৬৮ একর জমিতে ফলদ বাগান সৃজন শুরু করেন। পরবর্তীতে ৪নং সিন্দুরখান ইউনিয়নের সাইটুলা গ্রামের মৃত হাফিজ মিয়া জীবিত থাকাবস্থায় তাঁর নিকট হতে আরো ৪ দশমিক ২৫ একর জমি লিখিত স্ট্যাম্পে দখলমূলে ক্রয় করেন। এতে সর্বমোট জমির পরিমাণ দাঁড়ায় ২৫ দশমিক ৯৩ একর। ২০০৮ সালে উক্ত অকৃষি খাস ভূমি হাজী আব্দুল কাদির তাঁর বড়পুত্র প্রবাসী আব্দুল হান্নান, ছোটপুত্র প্রবাসী আব্দুল আহাদ এবং স্ত্রী মোছা. শাকিলা বেগমের নামে দীর্ঘমেয়াদী লিজ প্রদানের জন্য মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসকের নির্দেশপ্রাপ্ত হয়ে তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. নুরুল হুদার নির্দেশে সার্ভেয়ার ও ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা সরজমিনে তদন্ত করে ২০১৪ সালে প্রতিবেদন দাখিল করেন। বর্তমানে উপরোক্ত তিনজনের নামে বন্দোবস্ত প্রদানের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ২০২১ সালের ১৮ জুলাই হাজী আব্দুল কাদির মৃত্যুবরণ করেন। তিনি মারা যাবার পর মৃত হাফিজ মিয়ার পুত্রদ্বয় আরজত মিয়া(৪৫) ও মনির মিয়া(৪০)গং ভূমি তাদের দাবি করে বাগানে অনাধিকার প্রবেশ করে বাগানের কেয়ারটেকারসহ অন্যান্য লোকজনদের কাজ করতে বাধা প্রদান করতঃ জোরপূর্বক বেশ কিছু আম, আকাশীসহ অন্যান্য জাতের গাছ কেটে নিয়ে যায়। এ ব্যাপারে আব্দুল আহাদ স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে বিচার প্রার্থী হলে বিবাদীগণ বিচার অমান্য করে। এরইমধ্যে চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি রাত ৮ টায় বাগানে প্রবেশ করে কেয়ারটেকার ইউনুছ মিয়া, তার পুত্র রুবেল মিয়াকে পিটিয়ে জখম করে এবং বাগানের প্রায় ৫শত আনারসের চারা কর্তন, অফিস ভাংচুর করে নগদ দেড় লক্ষ টাকাসহ বাগানে ব্যবহৃত নানা সামগ্রী, ঔষধ লুটপাট করে নিয়ে যায়। এ ব্যাপারে ঘটনার পরদিন আব্দুল আহাদ বাদি হয়ে ১১ জনের নাম উল্লেখপূর্বক আরো অজ্ঞাতনামা ৫/৭ জনকে আসামী করে শ্রীমঙ্গল থানায় মামলা দায়ের করেন। পুলিশ মামলাভূক্ত দুই আসামীকে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত আসামীগণসহ মামলার সকল আসামী বিজ্ঞ আদালত হতে জামিনপ্রাপ্ত হয়ে আব্দুল আহাদ ও তাঁর কর্মচারীদের প্রাণনাশের হুমকি এবং পুরো বাগান দখল করার অপচেষ্টা করতে থাকে। ২৮ জানুয়ারি সকাল ১০টায় আরজত মিয়া, মনির মিয়া, জাহাঙ্গীর মিয়া, সুজন মিয়া, ময়নুল মিয়া, সেলিম মিয়া, মোশাহিদ মিয়া, সোহেল মিয়া, জুয়েল মিয়াসহ তাদের ভাড়া করা আরো ১৫/২০ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি দা, ছুলফি, লাঠিসহ দেশিয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আব্দুল আহাদের স্বত্ত্ব দখলীয় বাগানে অনাধিকার প্রবেশ করে বাঁশ, মূল্যবান গাছ কর্তন করে বাগানে প্রবেশের পথে বেড়া দিয়ে অনেকগুলো গাছ কেটে ফেলে এবং ফলদ গাছ বিনষ্ট করে। আব্দুল আহাদ ও তার কর্মচারীরা এতে বাধা প্রদানের চেষ্টা করলে উপরোক্ত ব্যক্তিরা বাগান তাদের বলে দাবি করে ব্রিটিশ নাগরিক আব্দুল আহাদকে প্রাণে হত্যার হুমকি এবং ১০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে চলে যায়। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি দুপুর অনুমান ১ ঘটিকার সময় সমূদয় আসামীগণ পুনরায় বাগানে অনাধিকার প্রবেশ করে বাগান মালিক আব্দুল আহাদের নাম ধরে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে এবং তার কর্মচারীদের বাগানের কাজে বাধা প্রদান করে। খবর পেয়ে আব্দুল আহাদ দ্রুত বাগানে গেলে আসামীরা পুনরায় ১০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে নতুবা আব্দুল আহাদসহ বাগানের কর্মচারী ইউনুস মিয়া ও রুবেল মিয়াকে প্রাণে হত্যা করে লাশ গুম এবং জোরপূর্বক বাগান দখল করবে বলে হুমকি প্রদান করে। এসময় হাল্লা-চিৎকারে এলাকার লোকজন এগিয়ে আসলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। রবিবার ৬ মার্চ সরজমিনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক আব্দুল আহাদের ফলদ বাগানে গেলে বাগানের কেয়ারটেকার ইউনুস মিয়া ও তার পুত্র রুবেল মিয়া জানান, প্রায় তিন দশকের বেশি সময় ধরে তারা এখানে বসবাস করে বাগানের পরিচর্যা করে আসছেন। এতো বছর কেউ বাগানটি তাদের বলে দাবি করেনি। বাগানের মূল মালিক হাজী কাদির মিয়া মৃত্যুবরণ করার পরপরই আরজত মিয়া, মনির মিয়া প্রমুখরা বাগান তাদের বলে দাবি করা শুরু করে। তবে তারা কোন কাগজপত্র কোথাও দেখাতে পারেনি। এখন শুরু হয়েছে ১০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি। তাদের দাবিকৃত চাঁদা না দিলে তারা মালিকসহ কর্মচারীদের প্রাণে হত্যার হুমকি দিয়ে চলেছে। বর্তমানে বাগানের কর্মচারীরা চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে বাগানে বসবাস করছেন। প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক আব্দুল আহাদ বলেন, ‘আমি সপরিবারে বৃটেনে বসবাস করছি। আমার বড়ভাইও সপরিবারে প্রবাসী। আমাদের পিতা জীবিত থাকাবস্থায়ও মাঝে-মধ্যে দেশে এসে আমি পিতার ব্যবসা দেখাশুনা করতাম। ২০২১ সালে আমি দেশে আসার কয়েকদিন পর আমার পিতা মারা গেলে আমি পিতার সমূদয় ব্যবসার হাল ধরি। আমাদের পারিবারিক ব্রিক ফিল্ডসহ নানা ব্যবসায় প্রায় ৫ শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। ভেবেছিলাম আরো কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবো। যাতে আমার এলাকার বেকারদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়, কিন্তু আমি হতাশ। আমি ও আমার বাগানের কর্মচারীরা এখন দখলদার-চাঁদাবাজদের কাছে অনেকটা জিম্মি। যে কোন সময় আমাদের হত্যা করে লাশ গুম করার হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছে। আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তিনি বলেন,‘আমরা প্রবাসীরা প্রতি বছর হাজার-হাজার কোটি টাকা রেমিটেন্স দিয়ে সরকারকে সহযোগিতা করে থাকি। আমি আমার জীবনের নিরাপত্তা চাই। এ ব্যাপারে আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ উর্ধতন মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। সমূদয় ঘটনার ব্যাপারে বাগান দখল ও হত্যার হুমকির ঘটনায় অভিযুক্ত আরজত মিয়ার সাথে কথা বলতে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।