সংসার সামলে অফিস করতে অনেক নারীই হয়ে পড়েন হতাশ। তার উপর নিজেকে সময় দেয়া হচ্ছে না একটু। চলুন জেনে নেই কর্মজীবী নারীর সবদিক সামলানোর কিছু করণীয় সম্পর্কে-
১) কর্মজীবনে নারী: কর্মজীবনে নারীরা হতাশায় ভোগেন, তার বড় একটা কারণ হচ্ছে পরিবারের অসহযোগিতা। ফলাফল, হয় ব্যক্তিগত জীবনে টানা অশান্তি, নয় শেষমেশ কাজটাই ছেড়ে দেয়া! ভাবুনতো, একজন পুরুষকে তো তার বাইরের কাজের জন্য এত ভেবেচিন্তে পা ফেলা লাগে না, তবে একজন নারীকে কেন ভাবতে হবে প্রতি পদে? অথচ, চাইলেই পরিবার সবচেয়ে বড় সমর্থন হয়ে উঠতে পারে মেয়েদের কাজের ক্ষেত্রে। বিষয়টা খুব কি কঠিন হলেও একটু কৌশুলী হলেই পাওয়া যায় পরিবারের সহযোগিতা।
২) সাংসারিক কাজে ভূমিকা: একজন নারী যদি স্বভাবতই সাংসারিক হয়ে থাকেন, বাইরের কাজ সামলেও সংসারের খুঁটিনাটি কাজে তার অংশগ্রহণ থাকবে। এটা যেমন তাকে বলে দিতে হবে না, তেমনি নারী যদি সংসারের কাজে শুরু থেকেই অনাগ্রহী হয়ে থাকেন, তবে তাকে জোর করে এসব কাজে যুক্ত করা বাড়ির লোকের কর্ম নয়। তাছাড়া, একজন নারী যদি উপার্জনক্ষম হন তাহলে তিনি ঘর সামলানোর জন্য সাহায্যকারী হিসেবে মানুষ রাখতে পারেন। সেক্ষেত্রে তার সিদ্ধান্তকে পরিবারের সম্মান দেখানো উচিত।
৩) বাইরের কাজ নিয়ে পরিবারের অমত: অনেক সময় পরিবারের মেয়ের বাইরে কাজ করা নিয়েও বাকি সদস্যরা অসন্তুষ্ট থাকে। নিরাপত্তাহীনতার ভয় থেকে মেয়ের কাজকে অপ্রয়োজনীয় ভাবা, সব রকম চিন্তাই এর জন্য দায়ী। বাবা কিংবা ভাইদের যথেষ্ট টাকা আছে, মেয়ে ঘরে বসে রাজকন্যা হয়ে থাকবে আর বিয়ের পর রাজরানী হয়ে সংসার করবে, এটা অনেক পরিবারেরই চাওয়া। আবার, কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষ একসাথে কাজ করার বিষয়টা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়, সেই কারণেও ঘরের মেয়ে-বৌকে বাইরে কাজে যেতে দিতে অনীহা দেখা যায়।
৪) কাজের ব্যাপারে পরিবারকে জানানো ভালো: কর্মজীবী নারী তার কাজের ধরণ নিয়ে পরিবারে খোলাখুলি কথা বলে রাখতে পারেন। যেমন, নির্ধারিত সময়ের বাইরেও যদি কখনো বাড়তি সময় থাকা লাগে অফিসে, সেটা আগেভাগেই ঘরে বলে দেয়া ভালো। তখন পরিবারের মানুসের কাছে বিষয়টি স্পষ্ট থাকবে।
৫) চাকরিজীবী মায়ের করণীয়: মা অফিস কিংবা ব্যবসার কাজে ব্যস্ত থাকলে বাচ্চাদের ছোটবেলা থেকেই স্বনির্ভর হতে শেখানো উচিত। গৃহিণী একজন মা যেমন গোটা দিন সংসার ও সন্তানের পরিচর্যায় কাটাতে পারেন, একজন কর্মজীবী মা সেটা পারেন না। এই বিষয়টার সাথে বাচ্চাদের অল্প বয়সেই অভ্যস্ত করে নেয়া বুদ্ধিমানের কাজ। স্বনির্ভর হবার অর্থ এই নয় যে প্রতিটা কাজই বাচ্চারা নিজের হাতে করবে, কিন্তু বেশিরভাগ কাজ নিজে করতে পারার মত শিক্ষা তাদের দিতে হবে। সকালে মুখহাত ধুয়ে নাস্তার টেবিলে আসার অভ্যাসটা তাদের নিজেদের হোক। স্কুলের ব্যাগটা মা এক ফাঁকে গুছিয়ে দিলেন। মাকেও অফিসের জন্য বের হতে হবে, স্কুলের মতো অফিসে যাবারও নির্দিষ্ট সময় থাকে, দেরি হলে অফিসেও বকুনি শোনা লাগতে পারে বা কাজের ক্ষতি হতে পারে, সহজ কথায় এই জিনিসগুলো বাচ্চাদের বোঝানো উচিত।
৬) ঘরের কাজ করবে সবাই: গৃহস্থালির দায়িত্ব পরিবারের সদস্যরা ভাগাভাগি করে নিলে সংসারের অর্ধেক অশান্তি এমনিতেই কমে যায়। সব কাজ একজনের নয়, সে যদি পুরোদস্তুর ঘরে থাকা মানুষ হয়, তবুও না। আর বাইরের কাজ সামলে একজন মেয়ে ঘরের বেশিরভাগ কাজ করবে, এমনটা ভাবা অন্যায় বটে। বিবাহিত মেয়েদের বেলা স্বামীর সমর্থন এই ক্ষেত্রে খুবই জরুরি। দিনভর অফিসে খেটে এসে ঘরের কাজে টানা লেগে থাকা, শারীরিক আর মানসিক উভয় বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে।