বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০৪:২১ অপরাহ্ন

কৃত্রিম সংকটে অস্থির বাজার: পটলসহ চার সবজির সেঞ্চুরি

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১১ মার্চ, ২০২২

ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট সদস্যদের ধরতে গোয়েন্দারা মাঠে 

বাজারে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে দ্রব্যমূল্য বাড়ানো ও অবৈধভাবে মজুত করার বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এদিকে,গত কিছুদিনে দেশের বাজারে নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা সাধারণ মানুষ। নি¤œবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত হয়ে উচ্চবিত্তরাও হিমশিম খাচ্ছেন নিত্যপণ্যের চাহিদা মেটাতে গিয়ে। এবার নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির সেই ছোঁয়া লাগলো রাজধানীর কাঁচা বাজারগুলোতেও। গতকাল শুক্রবার (১১ মার্চ) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে নতুন পুরোনো বেশিরভাগ সবজির দামই চড়া। তবে কিছুটা স্বস্তি আছে মুরগি বা গরুর মাংসসহ পেয়াজের দামে। বাজার ঘুরে দেখা যায়, গ্রীষ্মের নতুন সবজি পটলের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১১০-১২০ টাকায়। এছাড়া ঢেঁড়সের কেজি বিক্রি হছে ৯০-১০০ টাকায়।
এদিকে বাজারে বরবটির কেজি আগের চেয়ে কিছুটা কমলেও সেই দামও রয়ে যাচ্ছে সাধারণের ধরা ছোঁয়ার বাইরে। বাজারে বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা কেজি দরে। এদের সাথে আরও আছে করোলা। এ সপ্তাহের বাজারে করোলার কেজি ১০০-১১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৬০ টাকা, ফুলকপি ৫০-৬০ টাকায়। বাজারে লাউয়ের দামও ঊর্ধ্বমুখী, প্রতি পিস লাউ বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা দরে। বাজারে সবজির দামে আগুন লাগলেও কিছুটা স্বস্তি এসেছে পেঁয়াজের দামে। গেলো সপ্তাহের চেয়ে প্রায় ১৫ টাকা কমে এই সপ্তাহে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫৫ টাকা কেজি দরে।
এদিকে এই সপ্তাহের বাজারে মুরগির দাম রয়েছে আগের সপ্তাহের মতোই। ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৬৫ টাকা আর সোনালী মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৯০-৩২০ টাকা। মুরগির মতো গরুর মাংসের দামও রয়েছে অপরিবর্তিত। বাজারে গরুর মাংসের কেজি ৬৫ও টাকা করে। এছাড়া মাছের বাজারও আছে আগের মতো অপরিবর্তিতই। এক কেজি বা তার ওপরের সাইজের ইলিশ মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০০-১২০০ টাকায় আর ছোট ইলিশের কেজি ৫০০-৬০০ টাকা। রুই মাছ আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৪৫০ টাকা কেজিদরে। চিংড়ির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৮০-৬৫০ টাকা করে।
ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট সদস্যদের ধরতে গোয়েন্দারা মাঠে: বাজারে কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে দ্রব্যমূল্য বাড়ানো ও অবৈধভাবে মজুত করার বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, ইতোমধ্যে তারা সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের তালিকা করেছেন। তালিকা অনুযায়ী প্রত্যেকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও গুদামে নজরদারি করা হচ্ছে। একইসঙ্গে প্রতিটি পাইকারি বাজারে সাদা পোশাকে নজরদারি করা হচ্ছে। যেসব ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের সদস্য হয়ে অধিক মুনাফার আশায় বাজারে সংকট তৈরি করছেন, তাদের বিরুদ্ধে মামলাসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশনায় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে একাধিকবার বৈঠকও করেছেন।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার বলেন, ‘আমরা বাজারের অসাধু ব্যবসায়ীদের কর্মকা- মনিটরিংয়ের কাজ শুরু করেছি। গোয়েন্দা পুলিশের সব ইউনিটকে এ বিষয়ে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে সিন্ডিকেট তৈরি করে কোনও পণ্যের দাম বাড়াতে না পারে, সেজন্য নজরদারি চলছে। প্রয়োজনে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।’
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, স¤প্রতি সয়াবিন তেলের দাম বাড়ার পর আরও সংকট দেখিয়ে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী বেশি দামে বিক্রি করছে। বিষয়টি নিয়ে দেশজুড়ে সমালোচনা শুরু হলে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিষয়টি দেখতে বলা হয়। এই নির্দেশনার পরপরই ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ গোয়েন্দা ইউনিটকে অসাধু ব্যবসায়ীদের ধরতে নজরদারি করতে বলে।
গোয়েন্দা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, তারা ইতোমধ্যে রাজধানী ঢাকার ভেতরে যত পাইকারি বাজার রয়েছে, সেই তালিকা করে বাজার অনুযায়ী আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের তালিকা করা শুরু করেছেন। কে কোন পণ্য আমদানি-রফতানি করে, সেই তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি কার কোথায় গুদাম রয়েছে, তা জানার চেষ্টা চলছে। ছদ্মবেশে বা ক্রেতা সেজে সাদা পোশাকে গোয়েন্দারা এসব পাইকারি মার্কেট থেকে পণ্য কেনার পর, সংকট তৈরির মূল হোতাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, প্রতি বছর রমজান আসার আগে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী পণ্য গুদামজাত করে বাজারে সংকট তৈরি করে। পরে তা বেশি দামে বিক্রির চেষ্টা করে। চলতি বছরও আসছে রমজানের আগেই বাজার কিছুটা অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে ঢাকার বাইরে থেকে আনা পণ্য কেন দ্বিগুণ বা তিনগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে, তার কারণ অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।
পুলিশের বিশেষ শাখার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্যান্য বছরের মতো চলতি বছরেও রমজান মাসে বিভিন্ন পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতিতে তোলার জন্য একটি সিন্ডিকেট কাজ করছে। এখন থেকেই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা ও নজরদারি করা না হলে পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে সরকারের ভাবমূর্তি ব্যাপকভাবে ক্ষুণ্ন হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এই সিন্ডিকেট সরকারকে বেকায়দায় ফেলে রাজনৈতিক ফায়দা নিতে পারে। এজন্য গোয়েন্দা প্রতিবেদনে কয়েকটি সুপারিশও করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকার বাইরে থেকে পণ্য আসার ক্ষেত্রে পথের সব ভোগান্তি, বিশেষ করে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। এছাড়া বিদেশ থেকে যারা পণ্য আমদানি করে, তাদের পণ্য খালাসে ওয়ান স্টপ সার্ভিসের মাধ্যমে সেবা দিয়ে দ্রুত পণ্য খালাস করে বাজারে নেওয়ার কথা জোর দিয়ে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে টিসিবির মাধ্যমে ভর্তুকির মাধ্যমে আরও বেশি পণ্য বিক্রির ব্যবস্থা করতে পারলে অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। একইসঙ্গে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বাজারে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার বিষয়ে জোর দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, তারা ইতোমধ্যে নজরদারির মাধ্যমে যেসব ব্যবসায়ীর বিষয়ে সিন্ডিকেট তৈরি করে দ্রব্যমূল্য বাড়ানোর বিষয়ে তথ্য পেয়েছেন, তাদের প্রতিষ্ঠানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়ে অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যেকোনও সময় ঝটিকা অভিযানের মাধ্যমে অসাধু সিন্ডিকেট সদস্যকে আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি তার গুদামে থাকা অবৈধভাবে মুজত পণ্য প্রয়োজনে জব্দের পর নিলামে বিক্রি করা হবে।
কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘বাজারে এমনভাবে নজরদারি করতে হবে যাতে ভীতিকর পরিবেশ তৈরি না হয়, আবার অসাধু ব্যবসায়ীরাও যাতে কোনও কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে না পারে। অর্থাৎ দুষ্ট দমনের পাশাপাশি শিষ্টের পালন করতে হবে। ভালো ব্যবসায়ীদের উৎসাহ দিতে হবে। আর খারাপ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।’ তাহলেই বাজারে একটা স্থিতিশীল পরিবেশ আসতে পারে বলে মনে করেন তিনি।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com