বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৮ অপরাহ্ন

করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দরিদ্র ও মেয়ে শিশুরা

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় সোমবার, ১৪ মার্চ, ২০২২

জিইইএপির প্রতিবেদন

করোনা মহামারির আগে ২০১৭ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করা বাংলাদেশি শিশুদের অর্ধেকেরও বেশি একটি সাধারণ পাঠ্য পড়তে ও বুঝতে পারত না। তবে সিমুলেশনের (কৃত্রিমভাবে তৈরি ব্যবস্থা) মাধ্যমে এখন দেখা যাচ্ছে, স্কুলগুলো বন্ধ থাকার কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করার পরও ৭৬ শতাংশ শিশু ন্যূনতম পড়ার দক্ষতা অর্জন করতে পারবে না। করোনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দরিদ্র ও মেয়ে শিশুরা। তারা ঝরে পড়ার উচ্চ ঝুঁকিতে ছিল।
‘কভিড-১৯-এর সময় পড়াশোনাকে অগ্রাধিকার প্রদান’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। যুক্তরাজ্যের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস, ইউনিসেফ ও বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় গ্লোবাল এডুকেশন এভিডেন্স অ্যাডভাইজারি প্যানেল (জিইইএপি) এ প্রতিবেদন তৈরি করে। গতকাল রবিবার এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে জিইইএপি, এফসিডিও, বিশ্বব্যাংক, ইউনিসেফ, উন্নয়ন অংশীদার ও সরকারের প্রতিনিধিত্বকারী বিশেষজ্ঞ প্যানেলিস্টদের উপস্থিতিতে এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মহামারি চলাকালে তৃতীয় গ্রেডের যে শিশুটির স্কুলে যাওয়া এক বছর ব্যাহত হয়েছে, জরুরি পদক্ষেপ না নিলে দীর্ঘ মেয়াদে ওই শিশুটি পড়াশোনার ক্ষেত্রে তিন বছরের সমপরিমাণ ক্ষতির শিকার হতে পারে।
মহামারি চলাকালে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে স্কুল বন্ধ থাকা দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশে তিন কোটি ৭০ লাখ শিশুর পড়াশোনা ব্যাহত হয়েছে। ২০২০ সালের মার্চ মাসে বন্ধ হওয়ার পর বাংলাদেশের স্কুলগুলো ১৮ মাস ধরে বন্ধ ছিল। স্কুলগুলো ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে পুনরায় খুলে দেওয়া হয়েছিল, তবে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে আবার এক মাসের জন্য বন্ধ রাখা হয়।
প্যানেল আলোচনায় শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, ‘মহামারিকালে বিশ্বের অন্য যেকোনো জায়গার মতো বাংলাদেশেও নজিরবিহীন মাত্রায় লাখ লাখ শিক্ষার্থীর পড়াশোনা ব্যাহত হয়েছে। এই শিশুদের ভবিষ্যৎ ও বর্তমানে তাদের সার্বিক কল্যাণের স্বার্থে পড়াশোনার ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য বিনিয়োগ করা এবং সব শিশু যাতে স্কুলে ফিরে আসে ও পড়াশোনা চালিয়ে যায়, তা নিশ্চিত করা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমরা মিশ্র শিক্ষার দিকে অগ্রসর হচ্ছি এবং সরকার তার অংশীদারদের সহযোগিতায় সেই লক্ষ্য পূরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ’
বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, এই সংকটের কারণে পড়াশোনায় যে ক্ষতি হচ্ছে তার অর্থনৈতিক মূল্য হবে ভয়াবহ। জরুরি ভিত্তিতে সঠিক পদক্ষেপ না নেওয়া হলে আজকের স্কুলগামী শিশুদের প্রজন্মটি সারাজীবন ধরে তাদের আয়-রোজগারের ক্ষেত্রে ১৭ ট্রিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ আর্থিক ক্ষতির শিকার হবে।
শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের অর্থনীতি বিষয়ের সহযোগী অধ্যাপক রাচেল গ্লেনারস্টার বলেন, ‘এই প্রতিবেদন প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত গোষ্ঠীর প্রয়োজনগুলো পূরণে যাতে পদক্ষেপ নেওয়া হয় তা নিশ্চিত করতে শিক্ষাব্যবস্থা কিভাবে সাড়া দিতে পারে, সে বিষয়ে প্রায়োগিক দিকনির্দেশনা প্রদান করবে। ’
ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনের ডেভেলপমেন্ট ডিরেক্টর জুডিথ হারবার্টসন বলেন, ‘আধুনিক ইতিহাসে পড়াশোনায় সবচেয়ে বড় ব্যাঘাত ঘটিয়েছে কভিড-১৯। স্কুল বন্ধ থাকার সময়ে ১৬০ কোটি শিশু ও তরুণ স্কুলের বাইরে ছিল। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা পুনর্র্নিমাণ করার এখনই সময়, যা সব শিশুকে অন্তর্ভুক্ত করবে এবং ভবিষ্যতের উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণে তাদের আশাবাদী করে তুলবে। ’ বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই শ্রেণিকক্ষ খুলে দেওয়ার চেয়েও বেশি কিছু করতে হবে। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে, যাতে স্কুলগুলো সম্পূর্ণ খোলা থাকে এবং সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া শিশুসহ সব শিশু স্কুলে ফিরে যেতে সক্ষম হয়। ’
প্রতিবেদনে শিশুদের পড়াশোনার ক্ষতি ঠেকাতে ও কাটিয়ে উঠতে চারটি সুপারিশ করা হয়। সেগুলো হচ্ছে স্কুল ও প্রি-স্কুল সম্পূর্ণ খোলা রাখাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। সশরীরে শিক্ষার বিকল্প হিসেবে দূরশিক্ষণ কৌশলগুলোর অপর্যাপ্ততা এটা স্পষ্ট করে যে স্কুল বন্ধ করা একেবারে শেষ উপায় হওয়া উচিত। কভিড-১৯ টিকার জন্য শিক্ষকদের অগ্রাধিকার দেওয়া এবং যেখানে উপযুক্ততা নির্ধারণ করা হয়, সেখানে মাস্ক ব্যবহার করা এবং বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা উন্নত করা।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com