গত কয়েক দিন ধরে দেশে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতি। হু হু করে বাড়ছে প্রায় প্রতিটি জিনিসের দাম। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারেই জিনিসপত্রের দাম চড়া। এর প্রভাব পড়েছে দেশের বাজারেও। এছাড়া এক শ্রেণির সুবিধাভোগী ব্যবসায়ী পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বাজার অস্থির করে তুলছে। এতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস ওঠেছে। জনমনে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ। পবিত্র রমজানকে সামনে রেখে নিত্যপণ্যের দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই অবস্থায় নড়েচড়ে বসেছে সরকার। নিত্যপণ্যের দামের লাগাম টেনে ধরতে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ।
পণ্যমূল্য যেন সহনীয় পর্যায়ে থাকে সে বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে রোববার (১৩ মার্চ) বিকেলে বৈঠকে বসেন সরকারের উচ্চপর্যায়ের নীতিনির্ধারকরা। সেখানে নিত্যপণ্যের মূল্য সহনীয় রাখতে ওএমএস কার্যক্রম বাড়ানোসহ বেশ কিছু সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া নিত্যপণ্যে ভ্যাট ও ট্যাক্স কমাতে বিশেষ আদেশ বা প্রজ্ঞাপন (এসআরও) জারির সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামীকাল সোমবার এই আদেশ জারি করা হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। অসাধু ব্যবসায়ীরা যেন ফায়দা নিতে না পারে সেজন্য দুই একদিনের মধ্যে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হবে বলেও জানান মন্ত্রী। বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য মজুদ রয়েছে, কোনো পণ্যের ঘাটতি নেই।
মন্ত্রী জানান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর এবং মাঠ প্রশাসন বাজার মনিটরিং জোরদার করেছে। যৌক্তিক মূল্য নিশ্চিত করতে সরকার সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। উৎপাদনকারী এবং ভোক্তার স্বার্থরক্ষায় সবকিছু করা হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুদ, সরবরাহ এবং মূল্য স্বাভাবিক রাখতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এজন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে। বৈঠকের পর কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও। তিনি বলেন, ইউক্রেন রাশিয়া থেকে আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ গম চাউল আমদানি করা হয়। বর্তমানে যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে এই খাদ্যশস্য আমদানিও হুমকির মুখে। তবে বিকল্প পদ্ধতিতে সংকট মোকাবেলার বিষয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী রমজান মাসে কোনো প্রকার খাদ্য সংকট যাতে না হয় সেজন্য সাপ্লাই চেইন মেইনটেইন করা হবে। যাতে কেউ স্টক করে দাম বাড়াতে না পারে। এমনকি স্বল্পমূল্যে পণ্য পাওয়ার জন্য ওএমএস আরও বৃদ্ধি করা হবে। তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান খান বলেন, সারা বিশ্বে তেলের দাম বেড়েছে এর প্রভাব আমাদের দেশেও পড়েছে। সে কারণে তেলের দাম কিছুটা বেড়েছে। এদিকে ভোজ্যতেলের সরবরাহ চেইন স্বাভাবিক রাখতে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন আমদানিকারক থেকে শুরু করে অন্য কোনো ব্যবসায়ী ভোজ্যতেলের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে কি-না সেই তথ্য নিতে শুরু করেছে। কেউ কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করলে, দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সংস্থাটি।
রোববার (১৩ মার্চ) বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসন মো. মফিজুল ইসলাম জানান, দেশে ভোজ্যতেলের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মাত্র কয়েকটি। তাই আমদানিকারক থেকে শুরু করে উৎপাদক, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী কেউ প্রতিযোগিতা বিরোধী কর্মকা- করছে কি-না সেই তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। কারোর বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতাবিরোধী কর্মকা-ের প্রমাণ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। নিত্যপণ্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতির বিষয়টি উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। রোববার (১৩ মার্চ) সয়াবিন তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যারা কুক্ষিগত করে রেখে জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলে সেই সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন। একই সঙ্গে সয়াবিন তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে দায়ের করা রিটের আদেশের জন্য আগামীকাল সোমবার দিন ধার্য করেছেন আদালত।
এর আগে, গত ৬ মার্চ সয়াবিন তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে মনিটরিং সেল গঠন এবং নীতিমালা তৈরি করতে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের তিন আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনির হোসেন, অ্যাডভোকেট সৈয়দ মহিদুল কবীর ও অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ উল্লাহ এ রিট দায়ের করেন। বাণিজ্য সচিব, ভোক্তা অধিকার কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের রিটে বিবাদী করা হয়েছে।