বুধবার, ০২ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:৩১ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
কিশোরগঞ্জে ভাসমান সবজি চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা চৌদ্দগ্রামে আদালতের নির্দেশ অমান্য করে জোরপূর্বক সীমানা প্রাচীর নির্মাণের অভিযোগ কালিয়ায় কন্যা শিশু দিবস পালিত ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে সহকারী শিক্ষকদের মানববন্ধন তারাকান্দায় ১০ গ্রেডে উন্নীতের দাবিতে শিক্ষকদের মানববন্ধন ও স্মারকলিপি কালীগঞ্জে বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রেখে শিক্ষকদের মানববন্ধন : মিশ্র প্রতিক্রিয়া ডিমলা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মিলন সম্পাদক পাভেল কালের বিবর্তনে বিলুপ্তির পথে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী কাচারি ঘর মানিকগঞ্জে সাড়ে ৪লাখ ছাগলের বিনামূল্যে টিকাদান কর্মসূচী শুরু আন্দোলনে নিহত নয়নকে বীরের মর্যাদা দেয়া হবে-দুলু

নিরুপায় ট্রাফিক পুলিশ: দেড় ঘণ্টার রাস্তায় ৪ ঘণ্টা পার

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বুধবার, ১৬ মার্চ, ২০২২

১৬ মার্চ, ২০২২। গুগল ম্যাপে গেলে রাজধানী ঢাকার সবুজ রাজপথ এতোটাই লালে রঞ্জিত যে, বাস্তবতার সঙ্গে গুগল ম্যাপ যেন মিলছে না। প্রায় দুই বছর পর গত মঙ্গলবার ১৫ মার্চ থেকে সশরীরে পুরোদমে দেশের সব স্কুল-কলেজে শুরু হয়েছে ক্লাস। এ কারণে রাজধানীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের নিয়ে ছুটে যান অভিভাবকরা। অফিসগামী ও সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সকাল থেকেই হাজার হাজার শিক্ষার্থী-শিক্ষকের যাতায়াত শুরু হয়। একদিকে দিনের তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করেছে, অন্যদিকে বাড়তি মানুষের চলাচল রাজধানীর সড়কের যানজটে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে। সেই চাপ পড়েছে ফ্লাইওভারেও।
গতকাল বুধবার ১৬ মার্চ বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কচ্ছপ গতিতে চলছে যানবাহন। সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে শুরু হয়েছে তীব্র যানজট। রাজধানীর উত্তরা, এয়ারপোর্ট, বনানী, মহাখালী, মিরপুর, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, গুলিস্তান ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, সব এলাকায়ই অন্যান্য দিনের চেয়ে যানজট তীব্র। যানবাহন নিয়ন্ত্রণে সকাল থেকেই ট্রাফিক পুলিশকে দেখা গেছে হিমশিম খেতে। সড়কে ট্রাফিক পুলিশ অনেকটা নিরুপায় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেও দেখা যায়।
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর ফার্মগেট থেকে উত্তরার বাসে উঠেছিলেন কামরুল ইসলাম। ফার্মগেট থেকে মহাখালী পার হতে তার সময় লাগে প্রায় এক ঘণ্টা। মহাখালীতে তীব্র যানজটের কারণে বাসের গতি না বাড়ায় বাধ্য হয়ে নেমে পড়েন তিনি। এরপর একটি পাঠাওচালককে ডেকে উত্তরার পথে রওনা হন কামরুল ইসলাম। সিদ্দিকুর রহমান থাকেন যাত্রাবাড়ী এলাকায়। সেখান থেকে সকাল ৮টায় তিনি বাসে উঠে আড়াই ঘণ্টা পর সকাল সাড়ে ১০টায় তিনি বিমানবন্দরে আসেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, এতো জ্যাম হলে কীভাবে ঢাকা শহরে চলবো। এভাবে চলতে থাকলে তো অসুস্থ হয়ে যাবো। আমাদের বয়সীরা যানজট কিছুটা সহ্য করতে পারলেও শিশু ও অসুস্থদের জন্য খুবই দুরূহ বিষয়।
খিলক্ষেত এলাকা সকাল ৯টায় বাসে উঠেছেন সৈকত সরকার। এক ঘণ্টা পর তিনি মাত্র বিশ্বরোড ক্রস করেন। তিনি বলেন, স্কুল-কলেজ তো আগেও ছিল কিন্তু আগে এতো যানজট ছিল না। এখন কেন যানজট। ট্রাফিক পুলিশও সড়কে দেখলাম অসহায়ের মতো দাঁড়িয়ে আছে। তারাও কিছুটা নিরুপায়।
স্বাধীন পরিবহনের চালক মেহেদী বলেন, এই গরমে জ্যাম বাড়লো। সবার মাথাই গরম। যাত্রীদের ভোগান্তি, আমাদেরও। কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। জ্যামে ট্রিপের সংখ্যা কমে, আমাদের ইনকামও কমে যায়। মোহাম্মদপুরে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এই এলাকায় স্কুল-কলেজের সংখ্যা অনেক বেশি। সকালে যে যানজটের সৃষ্টি হয়, এর মূল কারণ এটাই। একেকজন শিক্ষার্থীর জন্য একেকটা প্রাইভেটকার। পাবলিক ট্রান্সপোর্ট থাকলে যানজট কম হতো। এই এলাকায় যানজটের মূল কারণ প্রাইভেটকার। অনেকেই আবার রাস্তায় গাড়ি পার্কিং করে রাখছেন। ট্রাফিক উত্তরা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মো. বদরুল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, আজ যানজটে সড়কে ভয়াবহ অবস্থা। গাড়ি মন্থর গতিতে চলছে। মহাখালী থেকে শুরু হয়ে বনানী, উত্তরা থেকে যানজট একেবারে গাজীপুর এলাকা পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। যানজটে সবারই সমস্যা হচ্ছে। যানজট নিরসনে ট্রাফিক পুলিশ সকাল থেকে টানা কাজ করছে।
মহাখালীতে বাস-মালিক সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সকাল থেকে মহাখালী রোডে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হয়। জানতে চাইলে ট্রাফিক গুলশান বিভাগের মহাখালী জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) আশফাক আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, মহাখালীতে বাস-মালিক সমিতির নির্বাচনের কারণে সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে ট্রাফিক পুলিশ ধীরে ধীরে গাড়িগুলো স্বাভাবিক চলতে সহায়তা করায় এখন কিছুটা স্বাভাবিকভাবেই গাড়ি চলছে।
যানবাহনের চেয়ে হাঁটার গতি বেশি: ঘড়িতে তখন সকাল ৯টা। রাজধানীর খিলগাঁও রেলগেট থেকে দৈনিক বাংলার উদ্দেশে হাঁটা শুরু করেছেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সোলাইমান হোসেন। একই সময়ে তার অপর সহকর্মী ইকবাল উদ্দিন একটি লেগুনায় ওঠেন। সোলায়মান হোসেন কর্মস্থলে পৌঁছে গেলেও ইকবালের লেগুনাটি তখনও ফকিরাপুল মোড়ে যানজটে আটকা রয়েছে।

সোলায়মান হোসেনের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, ‘একদিন-দুই দিন নয়, সপ্তাহের ছুটির দিন ছাড়া প্রায় প্রতিদিনই অফিস সময়ে এমন যানজট থাকে। তাইলে এখন আর যাতায়াতে যানবাহনের ওপর ভরসা করি না। হেঁটেই গন্তব্যে পৌঁছার চেষ্টা করি।’
একই সময়ে নগরীর মগবাজার মৌচাক উড়াল সেতুর মৌচাক অংশে যানজটে কয়েকশ’ গাড়ি আটকে থাকতে দেখা গেছে। এই গাড়িগুলোর একটির যাত্রী তানভীর উদ্দিন। অসহ্য হয়ে বাস থেকে নেমে বারবার হাতঘড়ির দিকে তাকাচ্ছেন। সামনের দিকে তাকিয়ে দেখেন দৃষ্টি যতদূর পড়ে ততদূর যানজট। আরও কিছু সময় অপেক্ষা করে মালিবাগ পৌঁছার পর বিরক্তি নিয়ে বাস থেকে নেমে গন্তব্যে হাঁটা শুরু করেন। কাকরাইল মোড়ে যাত্রী নামিয়ে সড়কের ভয়াবহ যানজটের কথা বর্ণনা করেছন পাঠাও চালক গিয়াসউদ্দিন। রামপুরা ব্রিজ থেকে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত আসতে সময় লেগেছে ৫৫ মিনিট। তাকে সমর্থন জানিয়ে যাত্রী আমির হোসেন বলেন, যদি সম্ভব হতো মোটরসাইকেল থেকে নেমে হেঁটে যাত্রা শুরু করতাম। পায়ে ব্যথার কারণে যানবাহন ছাড়া চলাচলের উপায় নেই তার।
ইকবাল উদ্দিন, তানভীর উদ্দিন বা গিয়াস উদ্দিনের মতো প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ যানজটে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। অফিস বা কাজের উদ্দেশে প্রতিদিনই অতিরিক্ত সময় নিয়ে বের হতে হয়। নগরীতে যানজটের ঘটনা পুরনো হলেও অনেক দিন পর গত কয়েক দিন হঠাৎ যানজটের এই মাত্রা তীব্র হয়ে উঠেছে। এতে ভোগান্তির পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে কর্মঘণ্টা, বাড়ছে অর্থনৈতিক ক্ষতি।
সরেজমিনে ঢাকার দৈনিক বাংলা, কাকরাইল, পল্টন, মালিবাগ, ফকিরাপুল, মতিঝিল, গুলিস্তান, আজিমপুর, মিরপুর, ফার্মগেট, রামপুরা, মগবাজার, শান্তিনগর, বিমানবন্দর সড়কসহ বেশ কিছু এলাকার প্রধান সড়ক ঘুরে যানজটের প্রায় একই রকম চিত্র দেখা যায়।যানজটের এমন চিত্রের জন্য রিকশাসহ ধীরগতির যানবাহন ও যানবাহনের রেজিস্ট্রেশনকে দায়ী করছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি, উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে সড়ক বন্ধ থাকা, মাত্রাতিরিক্ত ব্যক্তিগত গাড়ি, গাড়ি চলাচলের পথ ছোট হয়ে আসা এবং সড়কে মাত্রাতিরিক্ত মোটরসাইকেল বেড়ে যাওয়াকেও দায়ী করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ও গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ শামসুল হক বলেন, ‘অতিমাত্রার যানজটের পেছনে অনিয়ন্ত্রিত ছোট ছোট যানকেও দায়ী করা যায়। সড়কের ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যানবাহন রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নতুন আপদ হিসেবে দাঁড়িয়েছে মোটরসাইকেল। আমাদের এখনই উচিত এসব যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা।
ঢাকা শহরের পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা দেখে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনায় (আরএসটিপি) আশঙ্কা করে বলা হয়, ২০৩০ সালের দিকে সড়কে যানবাহনের গতি মানুষের হাঁটার গতির চেয়েও কমে আসতে পারে। ২০২০ সালে করা বুয়েটের এক গবেষণায় দেখা যায়, সড়কে পিক টাইমে চলাচল করা যানবাহনের গড় গতি ছিল ঘণ্টায় সাড়ে ৬ কিলোমিটার। চলতি বছরে এই গতি নেমে এসেছে প্রায় ৪.৮ কিলোমিটারে।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০-২৯ বছর বয়সী মানুষের হাঁটার গতি ঘণ্টায় ৪ দশমিক ৯ কিলোমিটার। ৩০ থেকে ৫০ ঊর্ধ্ব বছর বয়সী মানুষের হাঁটার গতি ঘণ্টায় ৫ দশমিক ১ কিলোমিটার। ষাটোর্ধ্বদের ক্ষেত্রে এই গতি ঘণ্টায় ৪ দশমিক ৮২ কিলোমিটার। এই সব বয়সী মানুষের হাঁটার গড় গতি দাঁড়ায় ঘণ্টায় ৪ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার। যেটি বর্তমানে পিক টাইমে ঢাকার সড়কে চলা গাড়ির গতির চেয়েও বেশি।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com