বুধবার, ০২ অক্টোবর ২০২৪, ০৪:২৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
কিশোরগঞ্জে ভাসমান সবজি চাষে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা চৌদ্দগ্রামে আদালতের নির্দেশ অমান্য করে জোরপূর্বক সীমানা প্রাচীর নির্মাণের অভিযোগ কালিয়ায় কন্যা শিশু দিবস পালিত ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে সহকারী শিক্ষকদের মানববন্ধন তারাকান্দায় ১০ গ্রেডে উন্নীতের দাবিতে শিক্ষকদের মানববন্ধন ও স্মারকলিপি কালীগঞ্জে বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রেখে শিক্ষকদের মানববন্ধন : মিশ্র প্রতিক্রিয়া ডিমলা রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মিলন সম্পাদক পাভেল কালের বিবর্তনে বিলুপ্তির পথে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী কাচারি ঘর মানিকগঞ্জে সাড়ে ৪লাখ ছাগলের বিনামূল্যে টিকাদান কর্মসূচী শুরু আন্দোলনে নিহত নয়নকে বীরের মর্যাদা দেয়া হবে-দুলু

পানিশূন্য হয়ে পড়েছে উত্তরাঞ্চলের ৮৫টি নদী

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বুধবার, ২৩ মার্চ, ২০২২

প্রমত্তা পদ্মা বর্ষার দুই মাস ছাড়া বাকি সময় শুকিয়ে মরা নদীতে পরিণত হচ্ছে। নদীর বুকে জেগে উঠেছে বড় বড় চর। সেই সঙ্গে পদ্মা সংযুক্ত প্রধান শাখা-প্রশাখা নদী বড়াল, আত্রাই ও গড়াইসহ অন্তত ৮৫টি নদী পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। শুকনো নদ-নদীতে চাষ হচ্ছে বোরো ধানসহ গম, সরিষা ও ডালের। এসব নদীতে পানি না থাকায় একসময়ের মৎস্যজীবীরা পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছেন। কারণ বরেন্দ্র অঞ্চলে দ্রুত নিচে নামছে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর। শুষ্ক মৌসুমে পানির জন্য হাহাকার বাড়ছে। আগামীতে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
‘ভূগর্ভস্থ পানি: অদৃশ্য সম্পদ, দৃশ্যমান প্রভাব’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে মঙ্গলবার (২২ মার্চ) পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব পানি দিবস’। এই দিবসে পানিতে সব মানুষের অধিকার নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন বরেন্দ্র অঞ্চলের গবেষকরা। জানা গেছে, বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতি বছরই নিচে নামছে। ফলে ব্যাহত হচ্ছে কৃষি জমিতে সেচ কার্যক্রম। চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল ও গোমস্তাপুর, রাজশাহীর তানোর ও গোদাগাড়ী এবং নওগাঁর পোরশা, সাপাহার এবং নিয়ামতপুর সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে কমপক্ষে ৪৭ মিটার উঁচু। শুষ্ক মৌসুমে এলাকাগুলোতে ব্যবহারযোগ্য পানির চরম সংকট দেখা দেয়। বিশুদ্ধ খাবার পানি সংগ্রহ নিয়ে উৎকণ্ঠায় দিন কাটে হাজারো মানুষের।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক, ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক বর্তমান ভিসি ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ‘ভূগর্ভস্থ পানির সঙ্গে নদীর স্তরের একটা সংযোগ রয়েছে। কোনও কোনও সময় ভূগর্ভস্থ পানি নদীতে আবার নদী থেকে পানি ভূগর্ভস্থ স্তরে রিচার্জ হয়ে থাকে। জলবায়ু পরিবর্তন ও অনাবৃষ্টির কারণে প্রকৃতির এসব স্বাভাবিক কাজে বিঘœ ঘটছে। এছাড়া নদীর উৎসের অববাহিকায় বৃষ্টিপাত কম ও ভারতের অভ্যন্তরে সময়ে অসময়ে বাঁধ দিয়ে পানি প্রত্যাহার করে নেওয়ায় আজ আত্রাই নদীর এই অবস্থা। নদীটির অস্তিত্ব হারিয়ে গেলে জীবন-জীবিকার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নদীর গতিপথ ঠিক রাখতে যত্রতত্র বালু উত্তোলন বন্ধসহ বিশ্ব নদী আইন মেনে পানির সুষম বণ্টন হলে শুধু আত্রাই নয়; অন্যান্য নদীর অস্তিত্ব বিলীন হবে না।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের খনিজ পানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক চৌধুরী সারোয়ার জাহান বলেন, ‘দিন দিন পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। কারণ ভূগর্ভস্থ পানিতে সব মানুষের অধিকার থাকলেও অল্প কিছু লোক তা নিয়ন্ত্রণহীনভাবে তুলে নিচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রায় ২৩ বর্গকিলোমিটার এলাকার ঝিলিম ইউনিয়নে কমপক্ষে ৩৫টি অটোরাইস মিল আছে; যেগুলো প্রতিনিয়ত ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করছে। এর ব্যাপক প্রভাব পড়ছে মাটির নিচের পানির স্তরে। ২০১৮ সাল পর্যন্ত সাত বছরে এই অঞ্চলের বার্ষিক বৃষ্টিপাত কখনও এক হাজার ৪০০ মিলিমিটার অতিক্রম করেনি। যা জাতীয় গড় দুই হাজার ৫৫০ মিলিমিটার থেকে ৪৫ শতাংশ কম।’
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) এক হিসাব অনুসারে, বরেন্দ্র অঞ্চলের বার্ষিক ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের পরিমাণ ১৩ হাজার ৭১০ মিলিয়ন ঘনমিটারের বেশি। যার প্রায় ৭০ শতাংশই বেসরকারি গভীর নলকূপ দিয়ে উত্তোলিত হচ্ছে। প্রকৌশলীদের হিসাব অনুযায়ী, এই পরিমাণ পানি এক বিঘা আয়তনের দুই মিটার গভীরতা বিশিষ্ট ১৮ লাখ পুকুর ভরে ফেলার জন্য যথেষ্ট।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) রাজশাহী জেলা কমিটির সভাপতি জামাত খান বলেন, ‘গোটা উত্তরাঞ্চলের পাতাল প্রায় পানিশূন্য। সরকারি সংস্থার জরিপে এই চিত্র উঠে এসেছে। শুধু রাস্তা আর বিল্ডিং মানে উন্নয়ন নয়। উন্নয়নের পূর্বশর্ত পানি, অথচ পদ্মায় পানি নেই।’
জামাত খান আরও বলেন, ‘চার বছর পরই ফারাক্কা চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তার আগেই পানির নায্য হিস্যা নিশ্চিত করে নতুন চুক্তি করতে হবে। পদ্মায় প্রাণ ফিরিয়ে আনতে হবে। তা না হলে কৃষিভা-ার নষ্ট হয়ে যাবে। আমরা অনাহারে থাকবো। দেশ খাদ্য সংকটে পড়বে। তাই পদ্মায় পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। বাস্তবায়ন করতে হবে উত্তর রাজশাহী সেচ প্রকল্প।’ বাপার জেলা কমিটির উপদেষ্টা দেবাশিষ প্রামাণিক দেবু বলেন, ‘২০০১ সাল থেকেই আমরা বলে আসছি ভূগর্ভস্থ পানিতে চাষাবাদ বন্ধ করুন। তা না হলে উত্তরাঞ্চল মরুভূমিতে পরিণত হবে। আমাদের কথা কোনও সরকারের কানে পৌঁছে না। এখন ঠিকই এই অঞ্চলে মরুকরণ শুরু হয়েছে।’
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বেগম আখতার জাহান বলেন, বরেন্দ্র এলাকার কৃষি, ‘পরিবেশ ও জনসাধারণের জীবনমান উন্নয়নে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ ১৯৯২ সালে গঠিত হলেও এ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানের মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করা হয়নি। আগামী ৫০ বছরে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বল্প ব্যয়ে ও স্বল্প সেচের মাধ্যমে অধিক কৃষিপণ্য উৎপাদন করতে মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন প্রয়োজন। খরাপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর কমে যাওয়ায় ভূউপরিস্থ পানির সর্বোত্তম ব্যবহার ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যেমে বরেন্দ্র অঞ্চলের কৃষকের পানির চাহিদা পূরণেও যথাযথ পরিকল্পনার এখনই প্রয়োজন।’
ওয়াটারএইড বাংলাদেশ জোনালের কোঅর্ডিনেটর মো. রেজাউল হুদা মিলন বলেন, ‘এই অঞ্চলে শুকনো মৌসুমে পানির স্তর ক্রমশই নিচে নামছে। একই সঙ্গে এই অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগও বাড়ছে। সামনে দুর্ভোগ আরও জটিল আকার ধারণ করবে। এ বিষয়ে এখন সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। একই সঙ্গে সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে হবে। পানির অপচয় রোধ ও যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতকরণে পানি দিবসে আমরা শিক্ষার্থীদের এই বিষয়ে শপথবাক্য পাঠ করিয়েছি।’-বাংলাট্রিবিউন




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com