হারুনের ওয়াক আউট
স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোতে স্থানীয় সরকারে প্রশাসক নিয়োগের বিধান নিয়ে জাতীয় সংসদে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিরোধী দলের একাধিক সংসদ সদস্য। এই বিধানের বিরোধিতা করে তাঁরা বলেছেন, এই বিধান অসাংবিধানিক। তবে তাঁদের বিরোধিতার মুখে মেয়াদোত্তীর্ণ পৌরসভায় সরকারি কর্মকর্তা বা উপযুক্ত ব্যক্তিকে প্রশাসক নিয়োগের বিধান রেখেই পৌরসভা আইনের সংশোধনী জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। এতে সরকারের দেওয়া নির্দেশ পালনে ব্যর্থ হলে পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলরদের অপসারণের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদের ওয়াকআউটের মধ্য দিয়ে স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইনের সংশোধনী পাস হয়। বিল পাসের আলোচনায় অংশ নিয়ে হারুন প্রশাসক নিয়োগের কারণ, সরকারের কোন কোন নির্দেশ পালন করতে হবে—এ বিষয়গুলোর স্পষ্ট ব্যাখ্যা দাবি করেন। তিনি বলেন, এসবের ব্যাখ্যা না পেলে তিনি ওয়াকআউট করবেন। পরে বিলটি পাসের সময় তিনি সংসদকক্ষ থেকে ওয়াকআউট করেন। এর আগে বিল পাসের আলোচনায় বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো ক্যানসারে আক্রান্ত। স্থানীয় সরকারগুলোর বিরাট একটি অংশের প্রতিনিধি বিনা ভোটে নির্বাচিত, বিরাট অংশ প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে নির্বাচিত। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর মানুষ এমন স্থানীয় সরকার আশা করেনি। সংবিধানে সব পর্যায়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির কথা বলা আছে। নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন করতে না পারলে সে জন্য সরকার দায়ী। প্রতিনিধিদের সরিয়ে দিয়ে সরকারদলীয় লোকদের বসানোর জন্য এই সংশোধন করা হচ্ছে। তিনি এটাকে ‘বাকশালি পদ্ধতি’ চালুর চেষ্টা হিসেবে বর্ণনা করেন।
সংসদ সদস্য হারুন আরও বলেন, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা এখন আওয়ামী লীগের দলীয় কর্মসূচি পালন করছেন। জনগণকে সেখানে অংশ নিতে বাধ্য করা হচ্ছে। ভিন্নমতের কেউ সেখানে না গেলে তাঁদের সরিয়ে দেওয়া হবে, এই উদ্দেশেই এই আইন করা হচ্ছে। সরকারের কোন কোন নির্দেশ পালন করতে হবে, তা আইনে স্পষ্ট করার দাবি জানান তিনি।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, যেখানে নির্বাচিত প্রতিনিধি থাকার কথা, সেখানে অনির্বাচিত কেউ বসতে পারবেন না। এটা সংবিধানের চেতনা। তত্ত্বাবধায়ক সরকার অনির্বাচিত বিধায় এটি বাদ দেওয়া হয়েছে। সেখানে কেন স্থানীয় সরকারে অনির্বাচিত ব্যক্তিকে বসানো হবে, এই প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, এটা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, সংবিধানে বলা হয়েছে নির্বাচিত ব্যক্তিদের দ্বারা স্থানীয় সরকার পরিচালিত হবে। প্রশাসক নিয়োগের বিধান সংবিধানের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ। নতুন পৌরসভা গঠনের পর প্রথমবার নির্বাচনের আগে একজন প্রশাসক নিয়োগ করা যেতে পারে, সেটা জরুরি প্রয়োজনে।
বিরোধী দলের সদস্যদের বক্তব্যের জবাবে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, প্রশাসক নিয়োগের বিধান রাখার বিষয়টি যৌক্তিক। বিভিন্ন কারণে অনেক সময় নির্বাচন করা নিয়ে আইনগত জটিলতা তৈরি হয়। অনেকে এর সুযোগ নিয়ে থাকেন। বিভিন্ন কারণে রিট মামলা বা অন্য কোনো মামলা করে মেয়াদোত্তীর্ণ পরিষদ অনির্ধারিত সময়ের জন্য পৌর প্রশাসন পরিচালনা করে। সচিব পদটিকে পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা নামাকরণের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, মন্ত্রণালয়ে সচিব থাকেন। পদটি নিয়ে অনেক সময় সংশয় দেখা দেয়। কিছু ক্ষেত্রে এই পদের অপব্যবহারও দেখা গেছে।
বিদ্যমান আইনেও পৌর এলাকা ঘোষণার পর পৌরসভা গঠন না হওয়া পর্যন্ত প্রশাসক রাখার বিধান আছে। এখন পৌরসভার মেয়াদ শেষে নতুন পরিষদ গঠন না হওয়া পর্যন্ত প্রশাসক নিয়োগের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। বিদ্যমান আইনে বলা আছে, পৌরসভা ঘোষণা করতে হলে জনসংখ্যার ঘনত্ব প্রতি বর্গকিলোমিটারে গড়ে দেড় হাজার হতে হবে। সংশোধনে তা বাড়িয়ে দুই হাজার করা হয়েছে। বিলে পৌরসভার সচিবের পদের নাম বদলে ‘পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা’ করা হয়েছে। বিলে পৌরসভার পরিষদ বাতিল–সংক্রান্ত ধারায় নতুন বিধান যুক্ত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাধিক্রমে ১২ মাস বেতন বকেয়া থাকলে পরিষদ বাতিল হবে। স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) (সংশোধন) বিল ২০২২ সংসদে পাসের প্রস্তাব করেন। পরে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। এর আগের বিলের ওপর দেওয়া জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলোর নিষ্পত্তি করা হয়।