জীবন যত আধুনিক হচ্ছে, ততই যেন চেয়ার-টেবিলে স্থবির হচ্ছি আমরা। প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় প্রজন্ম এতটাই শুয়ে-বসে সময় কাটাচ্ছে যে দেহের নড়াচড়া বা ব্যায়ামের গুরুত্ব প্রচ-ভাবে উপলব্ধি হচ্ছে। অফিস-আদালতেও দিনের কর্মঘণ্টাগুলো প্রায়ই একটানা বসে কাটাতে হয়। এতে পিঠে ব্যথা, মুটিয়ে যাওয়াসহ নানা ধরনের স্বাস্থ্যগত সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে।
জীবনে গতি এলেও কেমন যেন স্থবিরতা এসেছে মানুষের মাঝে। অনেক কাজই করা হচ্ছে, কিন্তু তার বেশির ভাগটাই চেয়ার-টেবিল কিংবা বিছানায় বসে। কাজ ফেলে তো আর ব্যায়াম সম্ভব না। তাই এক্সপার্টরা ‘ডেস্ক এক্সারসাইজে’ বেশ জোর দিচ্ছেন। এতে যেখানে সারা দিন বসে কাজ করছেন, সেখানেই অতি জরুরি কিছু শারীরিক কসরত সেরে নিতে পারবেন। এতে শরীরটা ঝরঝরে থাকবে। এখানে চেয়ার-টেবিলে বসেই করা যায় এমন সহজ ব্যায়াম শেখাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
ঘাড়ের ব্যায়াম : অফিসের চেয়ার ও টেবিলের উচ্চতা, আপনার উচ্চতা এবং টেবিলে স্ক্রিনের অবস্থানের কারণে ঘাড়ে বড় ধরনের চাপ নিতে হয়। বুঝে ওঠার আগেই ঘাড়ে ব্যথা বা জড়তা চলে আসতে পারে। এ নিয়ে বেশ ভোগান্তিতে পড়বেন। এ জন্য যা করতে পারেন-
১. সাইড-টু-সাইড : আরাম করে শিরদাঁড়া সোজা করে বসুন। বায়ে তাকাতে ঘাড়টা বাঁয়ে ঘোরান, একটানা পাঁচ সেকেন্ড এভাবেই থাকুন। খেয়াল রাখবেন, এভাবে তাকানোর সময় আপনার দৃষ্টি যেন কাঁধের সমান্তরালে থাকে। ওপর বা নিচের দিকে তাকাবেন না, সোজা তাকাবেন। এবার বাঁ থেকে ঘাড় ঘুরিয়ে ডানে একইভাবে তাকান। দুদিকে পাঁচবার করে মোট দশবার করুন।
২. আপ অ্যান্ড ডাউন : এটা অনেকটা দোলকের নড়াচড়ার ভঙ্গির মতো। ওপরের দিকে তাকাতে হবে পাঁচ সেকেন্ডের জন্য, এরপর একইভাবে নিচের দিকে।
৩. রোটেশন স্ট্রেচ : ঘাড়টাকে সামান্য নিচের দিকে নিয়ে মেঝের দিকে তাকান। এবার ঘাড়টাকে ঘড়ির কাঁটার দিকে ঘোরাতে থাকুন। ধীরে ধীরে এমনভাবে ঘোরাবেন যেন খুব ভালো একটা স্ট্রেচ হয়। ঘড়ির কাঁটার দিকে পাঁচবার এবং একইভাবে বিপরীতে পাঁচবার করুন। দেখবেন, ঘাড়ের সব জড়তা চলে গেছে। যদি এমনটা করতে গিয়ে বিশেষ কোনো স্থানে ব্যথা অনুভূত হয় কিংবা পেশিতে টান লাগছে বলে মনে হয়, তবে যেভাবে আরাম পাবেন সেভাবেই ঘোরাবেন।
কাঁধ ও হাতের ব্যায়াম : চেয়ারে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার পর দেহে জড়তা বোধ হতে পারে। তখন বসে থাকাটা কষ্টদায়ক হয়ে ওঠে। এ সময় চেয়ারে বসেই একটু ঝরঝরে ভাব আনতে পারেন।
১. শোল্ডার রোটেশন : যদি চেয়ার থেকে দাঁড়াতে পারেন তবে দুই হাত দুই পাশে ছেড়ে দিন। যদি বসেই করতে চান তবুও উপায় রয়েছে। দুই হাত বাঁকিয়ে আঙুল দিয়ে কাঁধ স্পর্শ করুন। এবার দুই হাত সামনের দিকে ঘোরাতে থাকুন, এভাবে কয়েকবার ঘোরান। একইভাবে বিপরীতে ঘোরান কয়েকবার।
২. ফিস্ট ক্লিঞ্চ : আপনার হাতের আঙুলগুলো কি-বোর্ডে যতটাই জাদু দেখাক না কেন, এদের একটু বিশ্রাম দিন। আঙুলগুলো মুঠো করে বন্ধ করুন এবং খুলে সটান সোজা করুন। এভাবে কয়েকবার করলে আঙুল ও কবজির ব্যায়াম হবে।
৩. রিস্ট রোটেশন : মুঠো করে বুড়ো আঙুল অন্যান্য আঙুলের মাঝ বরাবর রাখুন, ঘুষি পাকানোর মতো। এবার দুই হাতের মুষ্ঠি ঘড়ির কাঁটার দিকে কয়েকবার ঘোরান। এবার একইভাবে বিপরীতে ঘোরান। দুই হাতে একযোগে করতে অসুবিধা হলে প্রয়োজনে একহাত দিয়ে অন্য হাতের কবজির একটু নিচের দিকে শক্ত করে ধরে রাখুন।
পায়ের ব্যায়াম: কাজের টেবিলে বসেই পায়ের স্বাস্থ্যে নজর দেওয়া সম্ভব। একটানা অনেকক্ষণ বসে থাকলে পায়ে জড়তা চলে আসে। হালকা ব্যায়াম না করলে ধীরে ধীরে পায়ে নানা সমস্যা দেখা দেবে। যা করবেন-
১. ফোল্ডেড লেগস : একেক ভঙ্গিমায় দাঁড়ানোতে পায়ের একেক ব্যায়াম হতে পারে। এক পা আরেক পায়ের ওপর দীর্ঘ সময় ধরে রাখবেন না। ব্যায়ামের জন্য দুই মিনিট সময় নিন। ইয়োগার ঢংয়ে চেয়ারে দুই পা তুলে বসে থাকুন কিছুক্ষণ। এতে পা দুটি ভালো থাকবে।
২. ফুট রোটেশন : এটা অনেকটা দুই হাত ঘোরানোর মতোই। এক পা সামনে বাড়িয়ে দিন। এবার এটাকে ঘড়ির কাঁটার দিকে কয়েকবার এবং তার বিপরীতে কয়েকবার ঘোরান।
কোমর ও পিঠের ব্যায়াম: যদি সঠিকভাবেও চেয়ারে বসে থাকেন, তবুও একটা সময় পর পিঠ আর কোমর ধরে আসবে। এ ক্ষেত্রে যা করতে পারেন-
১. এক্সটেন্ডেড হ্যান্ড : হাত দুটো মেঝের সঙ্গে সমান্তরাল রেখে পেছনে নিন, আবারও আগের পজিশনে আনুন। কাজটা দাঁড়িয়ে করলে ভালো। কয়েকবার করলে পিঠের ওপরের অংশ এবং কাঁধের জড়তা একেবারে কেটে যাবে। আরাম পাবেন।
২. অ্যাবডোমিনাল স্কুইজ : পেট সংকোচন বলতে পারেন এটাকে। শ্বাস জোরালোভাবে টেনে পেট সংকোচন করে ফেলুন। প্রথমে কাজটা একটু ঝামেলার মনে হবে, তবে হতাশ হবেন না। চর্চা চলতে থাকলে পেটের অস্বস্তি অবস্থা কেটে যাবে।