বারো মাসের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ মাস রমজান। এই মাসেই বিশ্বের বিস্ময় শ্রেষ্ঠ অলৌকিকত্ব মহাগ্রন্থ আল কুরআন নাজিল হয়েছে যা আঁধারের ঘনঘটা দূর করে আলোর কিরণ প্রসারণের মধ্য দিয়ে রাহমাতুল্লিল আলামিন হজরত মুহাম্মদ সা:-এর ওপর নাজিল হয়। এর মাধ্যমেই অন্ধকারে নিমজ্জিত পথহারা পথিকরা আলোর দিশা পেয়েছিলেন। আজও সেই পথহারা পথিকদের আহ্বান করে যাচ্ছে পুরো মাসটি যেন আলোর সন্ধানে ছুটে আসতে পারে।
রমজান নিজেকে এক অনন্যরূপে রূপায়িত করার মাস, নিজেকে গোছানোর মাস, নিজ আত্মায় প্রশান্তি জোগানোর মাস। আর এই মাস হলো রবের সবচেয়ে বেশি নিকটবর্তী হওয়ার মাস। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘রমজান মাস, যাতে কুরআন নাজিল করা হয়েছে মানুষের জন্য হিদায়াতস্বরূপ এবং হিদায়াতের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলি ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে।’ (সূরা বাকারাহ-১৮৫)
পৃথিবীর যত পড়াশোনা, যত জ্ঞান-বিজ্ঞান, যত জানাশোনা রয়েছে সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু এই মহাগ্রন্থ আল কুরআন। মানুষ কখনো সর্বদিকে পারদর্শিতা অর্জন করতে পারবে না যতক্ষণ না এর সংস্পর্শে না আসবে। এতে রয়েছে সর্বস্তরের জ্ঞান। এমন কোনো জ্ঞানের শাখা বাদ পড়েনি যা এর মধ্যে লিপিবদ্ধ হয়নি। সুতরাং নিজের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করতে, নিজেকে বুঝতে, নিজেকে জানতে, বিশ্বকে জানতে এবং নিজের অস্তিত্বের রহস্য সম্পর্কে অবগত হতে হলে এর সংস্পর্শে আসা ছাড়া বিকল্প কোনো উত্তম উপায় নেই।
তাই আসুন না, এই বিশেষ মাহিমান্বিত মাসে মহা এই বিস্ময়কর গ্রন্থটি একটু অধ্যয়নে লিপ্ত হই এবং নিজেদের একটু গোছানোর চেষ্টা করি। আর কত অনীহা! আর কত দ্বীনবিমুখতা! আর কত রবের অকৃতজ্ঞতায় ডুবে থাকা! আর কত করুণ পরিণতির ইতিহাস দেখে আমাদের টনক নড়বে! আর কত নিজেদের সাথে প্রতারণা করে যাবো! আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা তোমাদেরকে ভুলিয়ে রেখেছে। যতক্ষণ না তোমরা কবরে পৌঁছবে।’ (সূরা তাকাছুর : ১-২) অতএব, আমাদের ফিরতে হবে আমাদের সঠিক উদ্দেশ্যের দিকে। আর নয় আগামীকাল, এখনই হোক আমাদের পরিবর্তনের সূচনা।
বিশেষ এই মাসে আমরা নিয়মিত কিছু কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারি যা আমাদের পরবর্তনের পথকে আরো সুগম করে তুলবে : ক. মাসজুড়ে পবিত্র কুরআন একবার সম্পূর্ণ তিলাওয়াত শেষ করা; খ. অন্তত ৩০তম পারা থেকে ১০টি সূরার অর্থ মুখস্থ করা; গ. বেশি বেশি দান করার চেষ্টা করা; ঘ. হাসিমুখে সবার সাথে কথা বলার চেষ্টা করা; ঙ. বেশি বেশি জিকির ও নফল ইবাদত করার চেষ্টা করা; চ. রাসূল সা:-এর ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা; ছ. গিবত, পরনিন্দা, মিথ্যা ও চোগলখুরি ইত্যাদি সব ধরনের পাপকর্ম থেকে নিজেকে বিরত রাখার চেষ্টা করা; জ. নিয়মিত সাহরির আগে অন্তত দুই রাকাত তাহাজ্জুতের সালাত আদায় করার চেষ্টা করা; ঝ. মহামানব রাসূল সা:-এর জীবনী একবার সম্পূর্ণ অধ্যয়ন করার চেষ্টা করা; ঞ. সর্বোপরি জাকাত ফরজ হলে তা সম্পূর্ণ আদায় করার মধ্য দিয়ে নিজেদের সম্পদকে পবিত্র করা।
একটি ভালো নিয়ত বা সিদ্ধান্ত আপনার পরকালীন জীবনকে উপভোগ্য করে তুলতে পারে। আর দ্বীনবিমুখতায় ডুবন্ত জীবন শুধু দুনিয়ার জীবনকে নয়; বরং পরকালীন জীবনকেও ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেবে। তাই এই মাসকেই করা হোক পরিবর্তনের এবং প্রশিক্ষণের হাতিয়ার যাতে উভয় জাহানের কল্যাণ লাভ করতে সক্ষম হওয়া যায়।
লেখক : শিক্ষার্থী, সরকারি সিটি কলেজ চট্টগ্রাম, সদস্য, বাংলাদেশ নবীন লেখক ফোরাম