পড়াশোনা শেষে নিজিকে বিসিএস ক্যাডার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে অনেক কঠিন পথ পাড়ি দিতে হয় মো. শাহিনকে। ৪০তম বিসিএসে কৃষি ক্যাডারে মেধা তালিকায় ১৭তম স্থান অর্জন করেন তিনি। তবে নিজের সফলতার পেছনে মায়ের অবদান সবচেয়ে বেশি বলে জানিয়েছেন শাহিন। তিনি বলেন, ‘আমার পড়ালেখার হাতেখড়ি মা। তিনি সব সময় আমাকে সাহস যোগাতেন। বলতেন তুমি একদিন পারবে, মায়ের কথাই সত্যি হলো। মায়ের অনুপ্রেরণায় আজ আমি বিসিএস ক্যাডার হতে পেরেছি।’
শাহিনের বাড়ি টাঙ্গাইলের গোপালপুর পৌরসভার তামাকপট্টি এলাকায়। বাবা মো. আসলাম ও নূরজাহান দম্পতির পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিনি তৃতীয়। স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাবার ছোট্ট একটি মুদি দোকান আর মায়ের সেলাইয়ের কাজ থেকে আসা টাকায় চলতো শাহিনদের পরিবার। অন্যদিকে শাহিনও বাবার মুদি দোকানে সময় দিয়েছেন, কাজকে কখনও ছোট মনে করেননি। পাশাপাশি চালিয়ে গেছেন পড়াশোনা। তাদের জীর্ণ ঘরের একটি অংশে দোকান, পেছনের অংশে তাদের পড়াশোনার কক্ষ ছিল। আবার থাকার কক্ষে মা নূরজাহান সেলাইয়ের কাজ করেন। একসঙ্গে জোড়া লাগানো দুটি পড়ার টেবিলে ভাইবোনরা পড়াশোনা করতেন। তবে শাহিনের বাবা স্ট্রোক করায় এখন আর তেমন কাজ বা ঠিকমতো কথা বলতে পারেন না। সংসারের বড় ছেলে এখন দোকানটি সামলাচ্ছে। মুদি দোকান আর মায়ের সেলাইকাজের উপার্জন দিয়েই চলেছে তাদের সংসার।
চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে শাহিন তৃতীয়। শাহিন ২০১০ সালে গোপালপুর দাখিল উলুম কামিল মাদরাসা থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে দাখিল পাস করেন। এরপর গোপালপুর কলেজ থেকে ২০১২ সালে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করে ২০১২-২০১৩ শিক্ষাবর্ষে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখানে ২০১৭ সালে কৃষি অনুষদ থেকে প্রথম বিভাগ পেয়ে অনার্স শেষ করেন। পরে উদ্যানতত্ত্ব বিভাগ থেকে প্রথম বিভাগ পেয়ে মাস্টার্স শেষ করেন তিনি। শাহিনের মা নূরজাহান বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে ছেলেকে পড়াশোনা করিয়েছি। আশা ছিল সে একদিন পরিবারের হাল ধরবে। আজ আমি খুবই খুশি। ছেলে বিসিএস ক্যাডার হয়েছে, আর আমাদের কষ্ট থাকবে না।’ নিজের আজকের অবস্থান ও পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতার বিষয়ে শাহিন বলেন, ‘জীবনে কষ্ট কী এটা আমি ভালো করেই জানি। তবে মা আমাকে সাহস যোগাতেন। তিনি আমাদের সব ভাই-বোনদের পড়াশোনা করিয়েছেন। তার জন্যই আমাদের আজকের অবস্থান।’ পরিবার ও মানুষের কল্যাণে কাজ করে যেতে সবার সহযোগিতা ও দোয়া চান তিনি।