সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৩০ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::

শ্রীবরদীতে আকস্মিক ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি দিশেহারা কৃষক

রাশেদুল ইসলাম রাশেদ, শ্রীবরদী (শেরপুর) প্রতিনিধি:
  • আপডেট সময় বুধবার, ২০ এপ্রিল, ২০২২

শেরপুরের শ্রীবরদীতে আকস্মিক ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ৪ হাজার ১৯১ হেক্টর বোরো ধানসহ অন্যান্য সবজি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দিশেহারা হয়ে পড়েছে কৃষক। ভঙ্গ হয়েছে কৃষকের স্বপ্ন । মঙ্গলবার সেহেরি শেষে মানুষ যখন ফজর নামাজ পড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল ঠিক তখনই প্রায় আধঘণ্টার ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে লণ্ড-ভণ্ড হয়েছে কৃষকের ধানক্ষেত, সবজি বাগান ঘর-বাড়িসহ অন্যান্য ফসল। এতে উপজেলার পৌরসভা, তাতিহাটী, গোশাইপুর, কুড়িকাহনিয়া, কাকিলাকুড়া, রাণীশিমুলসহ ১০টি ইউনিয়নের ফসলের মাঠ সম্পূর্ণ ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দিশেহারা হয়ে পড়েছে কৃষক। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও পৌরসভায় ১৬ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও অর্জিত হয়েছে ১৭ হাজার ৫ হেক্টর। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার জমির ফসলও ভালো দেখা দিয়েছিল। ফসলের ক্ষেত দেখে কৃষকের মন ভরে গিয়েছিল।
কিন্তু গত কয়েক দিনের গরম বাতাসে হঠাৎ ধানে চিটা হওয়া শুরু করে। এটা নিয়েই প্রান্তিক কৃষক হতাশায় ছিলেন। মঙ্গলবার হঠাৎ ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ফসলের এমন ক্ষতিতে দিশেহারা হয়েছেন কৃষক।
সরেজমিনে উপজেলার পোড়াগড়, মাটিয়াকুড়া, জঙ্গলখিলা, বাদে ঘোনাপাড়া, ধাতুয়া, জালকাটা, ষাইটকাকড়া, দক্ষিণ মাটিয়াকুড়া, কুরুয়া, কুড়িকাহনিয়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, আকস্মিক ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ধান, পাট, শসা, ডাটা, কলাবাগান, কুমড়াসহ বিভিন্ন সবজি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। ভেঙ্গে গেছে ঘরবাড়ি, ছিদ্র হয়েছে বসতঘরের টিনের চাল। জালকাটা গ্রামের আলম মিয়া বলেন, আমি ধার দেনা করে প্রায় দুই একর ধান ও ৫০ শতাংশ জমিতে শসা লাগিয়েছিলাম। আমার ধান এবং শসা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। এ ছাড়াও আমার ঘরেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পোড়াগড় গ্রামের সাংবাদিক জাকির হোসেন বলেন, আমার ধান ক্ষেত সম্পূর্ণ নষ্ট হয়েছে। আমার বসতঘরের টিন ছিদ্র হয়ে গেছে। এখন কোথায় থাকব? কি করব বুঝতে পারছি না। তিনি উপজেলা শহরে বাসা ভাড়া খুজছেন।
মাটিয়াকুড়া গ্রামের লিয়াকত হোসেন বলেন, আমি ৬০ শতাংশ জমিতে শসা চাষ করেছিলাম। এখন সব শেষ হয়ে গেল। কৃষক খলিলুর রহমান বলেন, মাটিয়াকুড়া গ্রামের বিল্লাল হোসেন, জঙ্গলখিলা গ্রামের ছানোয়ার হোসেনের স্ত্রী শিমা কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, আমরা খুবই কষ্ট করে জমি চাষ করেছিলাম। হঠাৎ শিলা বৃষ্টিতে আমাদের ধানের ক্ষেত ও সবজি ক্ষেত সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা কিভাবে চলবো? কী করবো বুঝতে পারছি না। একই গ্রামের তাসলিমা বলেন, আমাদের ঘর বাড়ি ঝড়ে ভেঙ্গে তছনছ হয়েছে। এখন থাকার ঘরও নেই।
এদিকে মঙ্গলবার সকালে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এডিএম শহিদুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিলুফা আক্তার, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো: জিয়াউর রহমান উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার মো: হুমায়ুন দিলদার বলেন, হঠাৎ ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে উপজেলায় ২৫১৪ হেক্টর জমির বোরো ধান ও ২৭৯ হেক্টর জমির সবজি ও অন্যান্য আবাদ ১২৬ হেক্টর সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে এবং ১৬৭৬ হেক্টর বোরো ধান, ৩১ হেক্টর সবজি ও অন্যান্য আবাদ ৫৪ হেক্টর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরির কাজ চলমান রয়েছে। পরবর্তী সময় প্রণোদনা এবং পুনর্বাসন কার্যক্রমে এসব ক্ষতিগ্রস্ত কৃষককে অগ্রাধিকার দেয়া হবে এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বিঘা প্রতি পাঁচ কেজি পটাশ সার প্রয়োগের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিলুফা আক্তার বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছি। কৃষি বিভাগ ও স্থানীয় চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় ফসল ও ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এডিএম শহিদুল ইসলাম বলেন, হঠাৎ ঝড় ও বৃষ্টিতে উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমরা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের মাঠ ও ঘরবাড়ি পরিদর্শন করে এসেছি। কৃষি অফিসের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা তৈরি করে কৃষকদের সহযোগিতা করা হবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com