শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:২৬ অপরাহ্ন

হাওরে আধাপাকা ধান কেটে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বুধবার, ২০ এপ্রিল, ২০২২

সুনামগঞ্জে নদ-নদী ও হাওরের পানি ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে পানিতে ফসল তলিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় হাওরে আধাপাকা ধান কেটে নেওয়ার হিড়িক পড়েছে। বিশেষ করে সুনামগঞ্জ জেলার হাওরে চলছে ধান কাটা। এছাড়া যেসব এলাকায় ফসল ডুবে গেছে সেখানকার চাষিরাও নিজেদের ফসল রক্ষায় আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

জানা গেছে, গতকাল বুধবার (২০ এপ্রিল) সকালে সুনামগঞ্জের ওপর দিয়ে প্রবাহিত সুরমা নদীর পানি বিপদসমীর ২৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার সাতটি উপজেলার ১৭টি হাওরের প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমি ইতোমধ্যে পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে ফসলি জমি ডুবে যাওয়ায় ওই এলাকাগুলোর কৃষকরা নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। কোনো কোনো হাওরে নাম মাত্র কৃষকরা ধান কাটলেও নিমিষেই তলিয়ে যায় হাওরের সব ফসল।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, হাওরের এখনো পুরোধমে ধান পাকেনি। ধান পাকতে আরো সময়ের প্রয়োজন। বন্যার ভয়ে তাই বাধ্য হয়ে আধাপাকা ধান কাটতে হচ্ছে তাদের। ফলে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা।
এদিকে গতকাল বুধবার দুপুরে হাওরের ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধ পরিদর্শন করার কথা রয়েছে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ফাহিদ ফারুকের। তিনি জেলার ধর্মপাশা ও তাহিরপুর উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধগুলো পরির্দশনে যাবেন।
সুনামগঞ্জের জেলার লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকার প্রধান অবলম্বন হচ্ছে এই বোরো ধান। কিন্তু হাওর ভর্তি সেইসব সোনার ধান ঘরে তোলার স্বপ্ন যেন চোখের সামনেই তলিয়ে যাচ্ছে পানির নিচে। একদিকে ঢলের পানি, অন্যদিকে আগাম বন্যার আশঙ্কা। সর্বশেষ রোববার (১৭ এপ্রিল) রাতে দিরাই উপজেলার হুরামন্দিরা হাওরের বাঁধ ভেঙে এক হাজার একর জমির বোরো ধান তলিয়ে যায়। এর আগে একইদিন সকালে তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওরের বর্ধিত গুরমার হাওরে বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করে ছয় হাজার হেক্টর জমির ধান ডুবে গেছে। এনিয়ে জেলার সাতটি উপজেলার ১৭টি হাওরের বোরো ধান ক্ষেত বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে। এইসব হাওরের ধান গোলায় তুলতে পারেননি কৃষক।
কৃষি বিভাগ বলছে, জেলায় ১৭টি হাওরের প্রায় দশ হাজার হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এখন পর্যন্ত জেলায় মোট ৭২ হাজার হেক্টর ধান কাটা হয়েছে। যা মোট ধানের ২৪ ভাগ। এবার হাওর ধান চাষাবাদ হয়েছে দুই লাখ ২২ হেক্টর জমিতে। ধান উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ছিল ১৩ লাখ টন। ধান কাটার জন্য প্রায় ৫ শতাধিক হারভেস্টর মেশিন রয়েছে বলেও জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। করচার হাওরের কৃষক তাজুল ইসলাম বলেন, ‘করচার হাওরে ৩ ভিগা বোরো ধান চাষ করেছি। আগাম বন্যার ভয়ে ব্রি-২৮ জাতের ধান এক ভিগা কাচা-আধাপাকা কেটে নিয়েছি। এখনো বাকি ধান পাকেনি। ধান না পাকলে কীভাবে কেটে নিয়ে আসবো। আগে কেটে আনা ধানও কাচাই রইছে। ধানে ছুছা হবে বেশি। এবার বোরো ধান করে লোকসানে আছি। হাওরের বাকি ধান নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি কখন যেনো বাঁধ ভেঙে হাওর তলিয়ে যায়।’
হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সালেহীন চৌধুরী শুভ বলেন, ‘হাওরের এখনো ভালোভাবে ধান পাকেনি। পাহাড়ি ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে অনেক হাওর। কিন্তু কৃষি বিভাগ হাওরের ধানের ক্ষয়ক্ষতির পরিমান কম দেখাচ্ছে এবং ধান কাটার পরিমান বেশি দেখাচ্ছে। তারা আসলে মিথ্যা তথ্য দিয়ে কৃষকসহ সবাইকে বিভ্রান্ত করছে। নিজেদের দায় এড়াতে গিয়ে শেষ-মেষ কৃষকের ক্ষতি করছে তারা।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বলেন, ‘হাওরের পুরো ধমে ধান কাটা চলছে। জেলার প্রতিটি হাওর এবং হাওরের বাইরে সব মিলিয়ে ৭২ হাজার হেক্টর ধান কাটা হয়েছে। ধান কাটার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে হারভেস্টর মেশিন রয়েছে। আমরা কৃষকদেরকে বলছি, ৮০ ভাগ ধান পাকলে কাটার জন্য।’
অনেক হাওরে ধান না পাকার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা উপজেলায় রিপোর্ট দেয়। উপজেলা থেকে জেলায় রিপোর্ট পাঠানো হয়। সেই তথ্যের ভিত্তিতে এবং সব উপজেলার রিপোর্ট সম্বণয় করে আমরা রির্পোট দেই। এ রিপোর্টের আলোকেই জেলায় মোট ৭২ হাজার হেক্টর ধান কাটা হয়েছে।’ সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘হাওরের বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তীত রয়েছে। সবগুলো হাওর হুমকির মধ্যে রয়েছে। তবে ধান কাটা পুরো ধমে চলছে।’




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com