শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:১৮ অপরাহ্ন

ক্রিকেটে মোহামেডানের এই দুরবস্থা কেন?

স্পোর্টস ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২১ এপ্রিল, ২০২২

ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগ শেষের পথে। প্রথম পর্ব শেষে চলছে সুপার লিগের খেলা। কারা ট্রফি উঁচিয়ে আনন্দ করবে, সেটাই দেখার। সব ক্রিকেটপ্রেমীর চোখ এখন শিরোপার দিকে।
কেবল চ্যাম্পিয়ন কে হবে, তা নিয়েই আলোচনা নেই ক্রিকেট অঙ্গনে। আলোচনার আরেক নাম মোহামেডান। না, ক্লাবটি ভালো কিছু করে আলোচনায় আসেনি, এসেছে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে। যেসব আলোচনা মোহামেডান-আবাহনীর মতো দলের সঙ্গে যায় না, সেই আলোচনাই তৈরি করেছে সাদাকালোরা। দলটি এবার যে সুপার লিগেই উঠতে পারেনি।
দলবদলের পর সবচেয়ে আলোচিত দল ছিল মোহামেডান। সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, তাসকিন আহমেদ, সৌম্য সরকার, মেহেদী হাসান মিরাজ ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদরা যে দলে; সেই দল কী করে সুপার লিগে উঠতে ব্যর্থ? ব্যর্থ হওয়ার অন্যতম কারণ, তারকারা যে খেলতেই পারেননি। অথচ এই তারকাদের পেছনে মোটা অংকের অগ্রিম ঢেলেছিল মোহামেডান।
আগের বছরের সাকিব, তাসকিন, আবু জায়েদ চৌধুরী রাহিরা ছিলেন। দলের শক্তি বাড়াতে এবার মোহামেডান দলে ভিড়িয়েছিল মুশফিকুর, রিয়াদ, মিরাজ, সৌম্যর মতো তারকাদের। বিদেশ থেকে আবার এনেছিল মোহাম্মদ হাফিজের মতো বড় তারকাকে। কিন্তু এত তারকার ঠাসাঠাসি যে ক্লাবে, সেই দল কিনা প্রথমপর্ব শেষে সুপার লিগের বাইরে!
সাদা-কালো সমর্থকরা বিক্ষুদ্ধ, ক্লাবের ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মুখ বন্ধ। ভালো দল করে এর আগে হকিতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে মোহামেডান, এবার ক্রিকেটে একই অবস্থা। কেন এমন হচ্ছে-এই প্রশ্নের উত্তর নেই কারো কাছে।
জাতীয় দলের সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ছিলেন সাকিব, মুশফিক, তাসকিন, মিরাজ, রিয়াদরা। তারা ঘরোয়া লিগ খেলতে পারবেন না, সেটা আগে থেকেই জানা ছিল। যে কারণে আবাহনীও কয়েকজন তারকাকে ছেড়ে দিয়েছিল লিগে পাওয়া যাবে না বলে। মোহামেডান তাদের লুফে নিয়েছে। এখানেই অদূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন মোহামেডানের ক্রিকেট কর্মকর্তারা। শুধু তাই নয়, তারকাদের দলে ভিড়িয়ে ফটোসেশন করে মিডিয়া কাভারেজ নেওয়ার পর দল পরিচালনায় আর কোন সমন্বয়ই ছিল না ক্লাবের ক্রিকেট সংশ্লিষ্টদের। বারবার লাইনআপ বদলিয়ে, অধিনায়ক বদলানোর কারণেও ব্যাটিংয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল।
মুশফিকুর রহিম খেলতে পারবেন না জানার পরও তার নামই অফিসিয়ালভাবে অধিনায়ক হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। তার অনুপস্থিতিতে শুভাগতহোম চৌধুরীকে অধিনায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ওয়ানডে সিরিজ শেষ করে রিয়াদ ফিরলে তাকে করা হয় অধিনায়ক।
ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো পারফরম্যান্স করা কয়েকজন ছিলেন মোহামেডানে। কিন্তু তারা কেউ নিজেদের মতো করে খেলতে পারেনি। যে কারণে লিগ শেষে মোহামেডানের অবস্থান ৭ নম্বরে। আরেকটু হলে তো রেলিগেশনেই খেলতে হতো দেশের ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটিকে। রিয়াদের অধিনায়কত্বে শেষ ম্যাচ দুটি না জিতলে রেলিগেশন চোখ রাঙাতোই সাকিবদের দলকে।
রনি তালুকদার, শুভাগতহোমরা ঘরোয়া ক্রিকেট ভালো পারফরম্যান্স করে থাকেন। মোহামেডানের ব্যাটারদের মধ্যে সর্বাধিক রান করেছেন রনি তালুকদার (৩২৯ রান)। বাকি সবার তিনশ’র নিচে। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৭ ম্যাচে ২৩০, আরিফুল ইসলাম ৮ ম্যাচে ২০৬ এবং পারভেজ হোসেন ইমন ৭ ম্যাচে ২০৫ রান। পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে, তারকাদের কাছ থেকে কেমন সার্ভিস পেয়েছে দলটি।
পাকিস্তানের মোহাম্মদ হাফিজকে এনে অনেক হৈচৈ করেছেন মোহামেডানের কর্মকর্তারা। কিন্তু তিনি সেভাবে নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। ৮ ম্যাচ খেলে করেছেন ২০৩ রান। সবচেয়ে বড় ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন সৌম্য সরকার। যে কারণে তাকে তো দল থেকে বাদই দেওয়া হয়েছিল মাঝে।
রিয়াদের মতো সাকিব আল হাসানও ওয়ানডে শেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দেশে ফিরেছিলেন। পারিবারিক সমস্যার কারণে খেলতে পারেননি মোহামেডানে। তাসকিনের ছিল ইনজুরি।
মেহেদি হাসান মিরাজ ও মুশফিকুর রহিম যখন দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দেশে ফিরেছেন, ততদিনে মোহামেডানের সর্বনাশ যা হওয়ার হয়ে গেছে। দল ব্যর্থ হয়েছে সুপার লিগে উঠতে। অনেকে রসিকতা করে বলছেন, মোহামেডানের রেলিগেশন পর্ব খেলতে হলে তারকাদের খেলাতে পারতো!
মোহামেডানের তারকারা এখন লিগ খেলছেন। তবে তাদের নয়, অন্য ক্লাবের হয়ে। মোহামেডান যেহেতু সুপার লিগে নেই বলে তাদের তিন খেলোয়াড় সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম ও মেহেদি হাসান মিরাজ খেলছেন সুপার লিগে অন্য ক্লাবে। মুশফিক ও মিরাজকে নিয়েছে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব এবং সাকিবকে নিয়েছে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ।
মোহামেডানের এই লজ্জাজনক ফল কি কেবল সাকিব, মুশফিক, মিরাজ, তাসকিনরা না খেলতে পারার কারণে? এটা একটা কারণ অবশ্যই। তবে তারা ছাড়া খেললেও মোহামেডান রেলিগেশন জোনের আশাপাশে থেকে লিগ শেষ করার মতো দল ছিল না।
আগেই উল্লেখ করা হয়েছে ক্লাব কর্মকর্তাদের মধ্যে কোনো সমন্বয় ছিল না। দলে কোনো ম্যানেজারও ছিল না। দলের কাছ থেকে ভালো ফলাফল করতে যেভাবে দলের দেখভাল করা উচিত ছিল, সেটা হয়নি মোহামেডানের।
ম্যাচ চলাকালীন কর্মকর্তাদের মাঠে তেমন দেখা যায়নি। দল নির্বাচন নিয়েও ঝামেলা ছিল মোহামেডানের। একেক ম্যাচে দেখা গেছে ভিন্ন ভিন্ন ওপেনিং জুটি। যে কারণে ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকতেন ক্রিকেটাররা। কোচ কতটুকু স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করেছেন, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
সাড়ে ৬ থেকে ৭ কোটি টাকা বাজেটের দল করেও ক্লাবটি প্রত্যাশিত ফলাফলের ধারেকাছেও থাকতে পারেনি। মোহামেডানের এই ফলাফল প্রমাণ করে কেবল বড় বাজেটের দল করলেই হয় না, সঠিকভাবে দল পরিচালনাও করতে হয়। খেলোয়াড়, কোচ, ম্যানেজার, কর্মকর্তাদের মধ্যে সমন্বয় থাকতে হয়। যার অভাবটাই বেশি ছিল মোহামেডানে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com