নিউ মার্কেটে সংঘর্ষে তিন মামলা : আসামি ১২০০
রাজধানীর নিউমার্কেটে ব্যবসায়ী এবং ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় মোরসালিন (২৬) নামে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) ভোর সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের আইসিইউতে তার মৃত্যু হয়। ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া এ তথ্য জানান। এদিকে, রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকায় ব্যাসায়ীদের সাথে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সংঘর্ষের ঘটনায় তিনটি মামলায় প্রায় ১২০০ মানুষকে আসামি করা হয়েছে। শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে সমঝোতা হওয়ার পর রাজধানীর নিউমার্কেট ও তার আশপাশের দোকানগুলো স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ব্যবসায়ীরা তাদের দোকানপাট খুলতে শুরু করেছেন। তবে অনেকের মধ্যে এখনও আতঙ্ক বিরাজ করায় তারা গতকাল বৃহস্পতিবার দোকানপাট খুলছেন না। তারা দোকানপাট পরিচ্ছন্নতার কাজ করছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার (২১ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত নিউমার্কেটের প্রধান প্রধান গেটগুলো বন্ধ দেখা গেছ। এ সময় মার্কেটের প্রবেশদ্বারগুলোতে সাদা পতাকা উড়তে দেখা গেছে। তবে ব্যবসায়ীরা ভেতরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা নিউ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ডা. দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহিন। এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, ‘আমরা প্রধান গেটগুলো এখনও সরাসরি খুলে না দিলেও ব্যবসায়ীরা ভেতরে ধোয়া-মোছা ও গোছগাছের কাজ করছেন। সবাইকে তো কিছু নিয়মকানুন মানতে হবে। আমাদের দোকানপাট খুলে দেওয়ার ঘোষণা রয়েছে। তবে এখনও পুরোপুরিভাবে স্বাভাবিক হয়নি।’
দোকানপাট খুলতে শুরু করেছেন ব্যবসায়ীরা: তিনি আরও বলেন, ‘আশপাশের দোকানদাররা ধীরে ধীরে তাদের দোকান খুলতে শুরু করেছেন। সংঘর্ষের সময় অনেক দোকানপাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেগুলোর মেরামতের বিষয় রয়েছে। দোকান মালিকরা সেগুলো করছেন।’ এদিকে যে দুটি দোকানকে নিয়ে সংঘর্ষের সূত্রপাত তার মধ্যে ক্যাপিটাল ফার্স্টফুডের দোকানটি বন্ধ রয়েছে। অপরদিকে, ওয়েলকাম ফার্স্টফুডের দোকান খুলেছেন ব্যবসায়ীরা।
সংঘর্ষে তিন মামলায় আসামি ১২০০ : রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকায় ব্যাসায়ীদের সাথে ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সংঘর্ষের ঘটনায় তিনটি মামলায় প্রায় ১২০০ মানুষকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে বিস্ফোরণ, দাঙ্গা-হাঙ্গামা,
জ্বালাওপোড়াও, পুলিশের কাজের বাধা দেয়ার অভিযোগ দুটি মামলা করেছেন নিউ মার্কেট থানার এসআই মেহেদী হাসান ও পরিদর্শক (তদন্ত) ইয়ামিন কবির। আর সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে নিহত ডেলিভারিম্যান নাহিদ মিয়ার চাচা মোঃ সাঈদ হত্যার অভিযোগ এনে অন্য মামলাটি দায়ের করেছেন। নিউ মার্কেট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শ ম কাইয়ুম বলেন, নিউ মার্কেট এলাকায় শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় ২৪ জনকে এজাহারনামীয় ও অজ্ঞাতনামা এক হাজার জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। এছাড়া পুলিশ বাদি হয়ে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে আরেকটি মামলা করেছে। সেই মামলায় অজ্ঞাত আসামি ২০০ জন।
তিনি আরো বলেন, দুটি মামলার বাদি নিউমার্কেট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মেহেদী হাসান ও পরিদর্শক (তদন্ত) ইয়ামিন কবির। গতকাল (বুধবার) রাতে মামলা দুটি দায়ের হয়েছে। গুরুত্বসহ মামলা দুটি তদন্ত করে দেখছি। এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় মোরসালিন (২৬) ও নাহিদ (১৮) নামে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থী আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি আছেন রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে। নাহিদের মৃত্যুর ঘটনায় তার বাবা নিউ মার্কেট থানায় মামলা করেছেন।
উল্লেখ্য, গত সোমবার (১৮ এপ্রিল) রাতে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সাথে নিউমার্কেট ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষ বাধে। রাত ১২টা থেকে শুরু হওয়া সংঘর্ষ তিন ঘণ্টা ধরে চলে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে একাধিক টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পুলিশ। এর পর মঙ্গলবার সকাল থেকে ফের দফায় দফায় শুরু হয় সংঘর্ষ। যা চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। বুধবারও ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেমে থেমে সংঘর্ষ চলে। এ ঘটনায় উভয়পক্ষের শতাধিক আহত হন। এদের মধ্যে নাহিদ মিয়া নামে এক তরুণকে রাস্তার ওপর কোপানো হয়। এলিফ্যান্ট রোডের ডাটা টেক কম্পিউটার নামের একটি দোকানের ডেলিভারি অ্যাসিসটেন্ট হিসেবে কাজ করতেন নাহিদ। ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার রাতে তার মৃত্যু হয়। পুলিশের করা সুরতহাল প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নাহিদের মাথার বাম পাশে পাশাপাশি চারটি কাটা জখম ছিল, জখমগুলো দুই থেকে সাড়ে তিন ইঞ্চি লম্বা। চারটি জখমে ২৩টি সেলাই দিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। পিঠের বাম পাশে পাশাপাশি তিনটি কাটা জখম। যার প্রত্যেকটি পাঁচ ইঞ্চি করে লম্বা। বাঁ পায়ের গোড়ালির নিচে কাটা জখমেও পাঁচটি সেলাই লেগেছিল, এছাড়া উভয় পায়ের বিভিন্ন জায়গায় নীল-ফোলা কালা জখম ছিল। নাক, মুখের ছোলা জখম ছিল।মঙ্গলবার সংঘর্ষের মধ্যে ইটের আঘাতে আহত মোরসালিন নামের এক দোকান কর্মচারীও চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন বৃহস্পতিবার ভোরে। এ বিষয়ে এখনো কোনো মামলা হয়নি থানায়।