বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
ব্যবসায়ীদের সরকারের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান অধ্যাপক ইউনূসের রাষ্ট্রপতির কাছে সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ প্রধান বিচারপতির দেশমাতৃকার বিরুদ্ধে দেশী-বিদেশী চক্রান্ত থেমে নেই: তারেক রহমান তুর্কি রাষ্ট্রদূতের সাথে জামায়াতের সৌজন্য সাক্ষাৎ চিন্ময় সমর্থক জঙ্গীদের হামলায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম নিহত অভ্যন্তরীণ বিষয় হস্তক্ষেপ: চিন্ময় ইস্যুতে ভারতের উদ্যোগ শাপলা চত্বরে গণহত্যায় হাসিনাসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমরা চাই না ছাত্র ভাইদের কঠোর হয়ে দমন করতে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা রাষ্ট্রদ্রোহের ঘটনায় যুক্ত থাকলে ছাড় দেয়া হবে না : আসিফ মাহমুদ মানুষ কেন তাদের ওপর বিক্ষুব্ধ, গণমাধ্যমের তা স্পষ্ট করা উচিত : নাহিদ ইসলাম

দোহারে অসময় ঝড়-বৃষ্টিতে নুয়ে পড়ছে ধান বিপাকে কৃষক

কামাল হোসেন দোহার-নবাবগঞ্জ (ঢাকা) :
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১০ মে, ২০২২

দোহারে ঈদের দিন থেকে ঈদের ৫ম দিন পর্যন্ত টানা কালবৈশাখী ঝড়ে কৃষকদের সোনালী স্বপ্নের ধান ভাসছে বৃষ্টির পানিতে। তার উপর হঠাৎ কিছুটা বাড়তে শুরু করেছে জোয়ারের পদ্মার পানি। আর বৃষ্টি পানিতে তলিয়ে যাওয়া ধান নিয়ে কৃষক পড়েছেন বিপাকে। অনেকেই আধাপাকা ধান কেটেছে পচে যাওয়ার ভয়ে। সেই সাথে দেখা দিচ্ছে কিষানের সংকট। কৃষকরা বলছে চড়া মজুরি দিয়েও পর্যাপ্ত শ্রমিক পাওয়া না যাওয়ায় দুশ্চিন্তাই পড়েছেন তারা। যাও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে তাও অনেক টাকা দিতে হচ্ছে। জনপ্রতি ৮শ থেকে ১১শ টাকা মজুরি দিতে হচ্ছে। তাই অনেকেই বেশী টাকা দিয়েই কিষান নিচ্ছে। কারণ ধান ঘরে না তুলতে পারলে কৃষককে না খেয়েই মরতে হবে। তাইতো কিষান পানিতে দাঁড়িয়েই ধান কেটে পৌঁছে দিচ্ছে গন্তব্য স্থানে সেই সাথে মরাই কাজে সহায়তা করছে এলাকার নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ, যুবকরা কারণ ধান দ্রুত ঘরে উঠাতে হবে সে জন্য। সরেজমিনে গিয়ে দেখি যায়,কালবৈশাখী ঝড়ে দোহারের প্রায় সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমির উঠতি বোরো ধান গাছ ন্যুইয়ে পড়েছে। এতে করে ফলন কম সহ ক্ষতির আশংকা করছেন কৃষকরা। এছাড়া ধানকাটা শ্রমিক সংকটের কারনে বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা। যাও পাওয়া যাচ্ছে তাও আবার বেশী টাকা দিতে নিতে হচ্ছে। ন্যুইয়ে পড়া ধান কাটতে বেশী মজুরি চাচ্ছেন শ্রমিকরা উপজেলার, মৌড়া, জালালপুর, আড়িয়াল বিল, কোঠাবাড়িরচক, চরকুশাইচক, মাহমুদপুরের চক, শিলাকোঠারচক, ধৌয়াইরের চক, নয়াবাড়ির চকসহ উপজেলার সব আবাদি এলাকায় বোরো এবং আউশের বাম্পার ফলন হয়েছে বলে জানা যায় উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে। এই উপজেলাগুলোর সর্বত্র পাকা ধানের সোনালী শীষ যেন হাতছানি দিচ্ছিলো। নুতন ধানের মৌ মৌ গন্ধে মুখরিত হয়ে উঠেছিল গ্রামের পর গ্রাম। আশায় বুক বেঁধেছিল স্বপ্নে বিভোর কৃষকেরা। ধান কাটার আর কটা দিন বাকি আছে মাত্র। ঠিক তার আগ মুহূর্তে প্রথমে উপজেলার মাহমুদপুর, কুসুমহাটি, বিলাশপুর ইউনিয়নের পদ্মা নদী তীরবর্তী এলাকায় জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে জমির পাকা ও আধাপাকা ধান। তার রেশ কাটতে না কাটতে মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে ঈদের দিন থেকে টানা ৫ দিনের বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে কৃষকের ধান। এ বিষয়ে কোঠাবাড়ি গ্রামের কৃষক রহম আলী তালুকদার বলেন,গত দুই সপ্তাহ আগে জেনেছি জোয়ারের পানি উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের ধানের জমি তলিয়ে গেছে। এখন আমাগো পালা।টানা বৃষ্টি ও ঈদের ছুটিতে ধান কাটার শ্রমিক এখন কই পাই আপনারাই কন? নারানপুর গ্রামের কৃষক সামাদ বেপারী বলেন, অন্য বছর ধান কাটার এক দেড় মাস পর তাদের জমিতে পানি আসে। এবার ধান কাটার আগ মুহূর্তে হঠাৎ টানা বৃষ্টিতে আমাদের মতো কৃষকদের সর্বসান্ত করে ফেলেছে। বেশীদামে ধানকাটা শ্রমিক দিয়ে ধান কাটা হচ্ছে এতে প্রতি মণ ধানে প্রায় ২ হাজার টাকা খরচ হবে। দোহারের আড়িয়াল বিলের কৃষক আনোয়ার হোসেন(৪৫) জানান, আমি পাঁচ বিঘা ধান বুনেছি। সব মিলিয়ে অনেক টাকা খরচ হয়েছে তার মধ্যে বৃষ্টি পানিতে ধান তুলিয়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছে সে জন্য ফলন কম হয়েছে। তাছাড়া কিষাণের যে দাম তা দিয়ে আমাদের হয়তো এবার লাভ হবে না। একজন কৃষাণকে একহাজার টাকা দিতে হয় সাথে তিন বেলা খাবার। এ জন্য এখনো অনেকেই ধান কাটা বাকি রেখেছে। আবার সময় মতো ধান ঘরে তুলতে না পারলে সব কৃষককে না খেয়েই মরতে হবে। ফরিদপুর থেকে ধান কাটতে আসা কিষান মজনু জানান আমরা এখানে ধান কাটতে ২৪ জন এসেছি। আমরা আগে থেকেই কথা দিয়ে রেখেছিলাম মালিক পক্ষকে ধান কেটে দিব। তাই ঈদ চলে যাওয়া পরপরই আমরা ধান কাটতে চলে এসেছি। ধান কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে কিষান আজমত জানান, বৃষ্টির কারনে ধান ক্ষেতে পানি জমেছে আর এ জন্য আমাদের ধান কাটতে সমস্যা হচ্ছে। পায়ের নিচে কেদা আর উপরে সূর্য এতে গরমে নাকাল আবস্থা আমাগো। এই ধান খেতে থেকে কেটে মরাই করার জয়গা পৌর্যন্ত নিয়ে যাওয়া আমাগো দায়িত্ব। এরপর সেখানে থেকে ধানকে ছয় অথবা সাত ভাগ করা হবে, তারপর আমাগো এক ভাগ দেওয়া হবে। আর সেই ধান আবার মোরা যারা আছি তারা সবাই ভাগ করে নিব। খাবারের বিষয় জানতে চাইলে জাফর বলেন, আমাগো তিন বেলা খাবর দেয় মালিক পক্ষ এই তিন বেলা খাবারের মধ্যে থাকে ভাত,ডাল,উস্তা ভাঝি, আলুর ভর্তা,মাছ বা মাংস আমরা এখানে প্রতিবছরই ধান কাটতে আসি। এ বিষয়ে দোহার উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মামুন ইয়াকুব বলেন, এর আগে দোহারের তিনটি ইউনিয়নে ধান খেতে পানি ঢুকেছে এতে কৃষকরা কিছুটা ক্ষতির মধ্যে পড়েছে। তার উপর নতুন করে টানা বৃষ্টি হয়েছে। ফলে উপজেলার ধান চাষের জমিতে এর প্রভাব পরেছে। এবার দোহার উপজেলায় মোট ধান চাষ হয়েছে ৪ হাজার তিনশত হেক্টর জমিতে। জোয়ারের পানি ও হঠা? বৃষ্টিতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান ধারনা করা হচ্ছে ৫০০ হেক্টর জমির ফসল। দোহারে ক্ষতির পরিমান ১৫% হবে। সারাদেশে যদি সরকার ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের সহায়তা দেয় তাহলে সেই ক্ষেত্রে দোহারের কৃষকরাও এ সহায়তা পাবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com