জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলায় সয়াবিন তেলের তেলেসমাতি থামছে না। প্রশাসনের নাকের ডগায় খোদ উপজেলা সদরে ভোক্তা আইন লঙ্ঘন করে ব্যবসায়ীরা বেশি দামে সয়াবিন তেল বিক্রি করলেও কোনো ধরণের আইনগত পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না উপজেলা প্রশাসনের। স্থানীয়দের অভিযোগ, ‘সয়াবিন তেল নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করা হলেও প্রশাসনের তরফ থেকে নেওয়া হয়নি কোনো আইনগত পদক্ষেপ।’ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারের (ইউএনও) নেজারত শাখা সূত্রে জানা যায়, গত রমজানের ঈদের পরে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সয়াবিন তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে হাট-বাজারে কোনো ধরণের অভিযান পরিচালনা করা হয়নি। সয়াবিন তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।বাজারের ভোজ্যতেলের বিক্রেতারা বলছেন, ‘কোম্পানিগুলোকে অগ্রিম টাকা পাঠিয়েও চাহিদামতো তেল পাওয়া যাচ্ছে না। কোম্পানির লোকজন বোতলজাত তেল সরবরাহ না করলে আমাদের তো কিছু করার নেই। আর সরকার নির্ধারিত দাম অনুযায়ীই তেল বিক্রি করছি আমরা।’পজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারের (ইউএনও) নেজারত শাখার অফিস সহকারী জুলহাস আলী বলেন, ‘রমজানের ঈদের পর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সয়াবিন তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে হাট-বাজারে কোনো ধরণের অভিযান পর পরিচালনা করা হয়নি। এখন হয়তো অভিযান করা যেতো। কিন্তু ইউএনও স্যার ছুটিতে আছেন। এ্যাসিল্যান্ড স্যারও বদলি হয়েছেন।’জানা যায়, সরকার নির্ধারিত সয়াবিন তেলের নতুন দাম কার্যকর হওয়ার পর এ উপজেলার হাট-বাজারগুলো থেকে হঠাৎ করেই উধাও হয়ে গেছে ১ ও ২ লিটার ওজনের তেলের বোতল। তবে, কোনো কোনো দোকানে তেলের বোতল পাওয়া গেলেও তা বিক্রি হয় বোতলের মোড়কে লেখা দামের চেয়ে অনেক বেশি মূল্যে। এছাড়া ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী মিলছে না তেল।
তেলের বাজারের এমন অস্থিরতায় বিপাকে পড়েছেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। ভোজ্যতেলের অতিরিক্ত দামে নাভিশ্বাস উঠেছে বিশেষ করে নি¤œ আয়ের মানুষের।উপজেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় দোকানেই ১ ও ২ লিটার ওজনের সয়াবিন তেলের বোতল নেই। হাতেগোনা যে কয়েকটি দোকানে সয়াবিন তেল রয়েছে, সেগুলোও বিক্রি হচ্ছে মোড়কে লেখা দামের চেয়ে অনেক বেশি দামে। সরকার খোলা সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটার ১৮০ টাকা নির্ধারণ করলেও এ উপজেলার বিভিন্ন বাজারে তা ২১০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। কোনো কোনো দোকানে ১ লিটারের তেলের বোতলের মোড়কে ১৬০ টাকা লেখা থাকলেও তা বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়। ৫ লিটার তেলের বোতল বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকায়। যা মোড়কের গায়ে লেখা দামের চেয়ে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা বেশি। অন্যদিকে, খোলা বাজারে সয়াবিন তেল বলে পাম তেলও বিক্রি হচ্ছে একই দামে। আবার বোতলের চেয়ে খোলা তেলের চাহিদা বেশি থাকায় অধিকাংশ দোকানি বোতলের তেল বের করে খোলা হিসেবেই বিক্রি করছেন। এতে ক্রেতাদের যেমন সুবিধা, তেমনই ব্যবসায়ীদের লাভও বেশি। এদিকে ধাপে ধাপে তেলের বাজারের এমন অস্থিতিশীলতায় বিপাকে পড়েছেন নি¤œ-মধ্যবিত্তসহ সব শ্রেণিপেশার মানুষ। এ অবস্থায় অতিরিক্ত দাম দিয়েও চাহিদামতো সয়াবিন তেল পাচ্ছেন না ক্রেতারা। অভিযোগ রয়েছে, বেশি দামের আশায় গোডাউনে তেল মজুত করছেন ব্যবসায়ীরা। যে কারণে তেলের সংকট দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঈদের আগে থেকে বাজারজাতকারী কোম্পানিগুলো চাহিদা অনুযায়ী তেল সরবরাহ না করায় সয়াবিন তেলের এমন সংকট দেখা দিয়েছে।ব্যবসায়ী মিজান, আকবর, সুজন, হেলালসহ অনেকেই বলেন, ‘আমরা চাহিদা অনুযায়ী তেল কিনতে পারি না। তাছাড়া বোতলের গায়ে নির্ধারিত মূল্যের বেশি দামে তেল কিনতে। সেকারণেই মোড়কে লেখা দামের চেয়ে বেশি দামে বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি করতে হচ্ছে।’উপজেলার গাইবান্ধা নাপিতেরচর গ্রামের বাসিন্দা আরজু আকন্দ বলেন, ‘টাকা দিলে ভরি ভরি স্বর্ণ মিললেও মিলছে না তেল। সয়াবিন তেল এখন স্বর্ণের চেয়েও মূল্যবান হয়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে। ১৬০ টাকা বোতলের মোড়কের তেল বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়।’সহবোভারচর বাজারে সয়াবিন তেল কিনতে আসা জুয়েল ম-ল বলেন, ‘৩ থেকে ৫টি দোকান ঘুরে একটিতেও ১ ও ২ লিটার তেলের বোতল পাইনি। আর আমার মতো নি¤œবিত্ত লোকের ৫ লিটার তেল কেনার সামর্থ্যও নেই। যে কারণে বাধ্য হয়ে খোলা তেল কিনে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে।’ চরপুটিমারী ইউনিয়নের বেনুয়ারচর গ্রামের বাসিন্দা মশিউর রহমান টুটুল বলেন, ‘খোলা তেলে ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত দুই নম্বরি করছেন। একে তো বোতলের চেয়ে ১০ থেকে ২০ টাকা দাম বেশি নিচ্ছে, অন্যদিকে পাম তেলও মিশিয়ে দিচ্ছেন তাঁরা। এতে করে ক্রেতারা প্রতারিত হচ্ছেন।’আলী শেখ নামে এক বেসরকারি চাকুরীজীবী বলেন, বছর দেড়েক আগেও পাম তেল ছিল ৭০ থেকে ৮০ টাকা লিটার, আর সয়াবিন ছিল ১০০ থেকে ১১০ টাকা। জীবনেও ভাবিনি এক-দেড় বছরের ব্যবধানে পাম তেল হয়ে যাবে ১৮০ টাকা, আর সয়াবিন তেল হয়ে যাবে ২২০ টাকা লিটার। এ সময় তেলের লাগামহীন দাম নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মু. তানভীর হাসান রুমানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তাঁর কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে চলতি দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. রোকনুজ্জামান খানের মোবাইল ফোনে সোমবারে(১৬এপ্রিল) দুপুরে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি মূল্যে সয়াবিন তেল বিক্রি করার কোনো সুযোগ নেই। কেউ যদি উচ্চ মূল্যে তেল বিক্রি করে থাকে সেটা অন্যায়। আমরা খোঁজ খবর নিয়ে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।