পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান সিলেটে বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছেন।
এ সময় তারা বলেছেন, ‘সিলেটে বন্যার্ত মানুষের জন্য ৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, দুই’শ টন চাল ও ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত মজুত আছে। প্রধানমন্ত্রী এ ক্ষেত্রে সবসময় আন্তরিক। বন্যার্তদের জন্য ত্রাণের অভাব হবে না। যত প্রয়োজন বরাদ্দ দেওয়া হবে।’
বুধবার দুপুরে ড. মোমেন ও ডা. এনামুর রহমান সিলেটে পৌঁছে নগরের বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকায় পরিদর্শন, দুইটি আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনো ও রান্না খাবার বিতরণ করেন।
পরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সিলেটের ১৩ উপজেলার সার্বিক পরিস্থিতি জানতে জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তারা।
এ সময় ড. মোমেন বলেন, ‘সিলেটের প্রধান দুই নদী সুরমা ও কুশিয়ারার তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। এই দুই নদী খনন করতে হবে। এ ব্যাপারে সরকার ও প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক। আমরা নদী খননের পরিকল্পনা নিয়েছি। আগামী বর্ষার আগেই নদীগুলো খনন করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘সিলেটে এই মৌসুমে সবসময়ই ঢল নামে। আমাদের ছেলেবেলায় এমনটি দেখেছি। কিন্তু তখন পানি আটকে থাকতো না। চলে যেতো। কারণ আমাদের শহরেও অনেক পুকুর ও দিঘী ছিল। প্রত্যেক বাড়ির সামনে পুকুর ছিল। সিলেটকে বলা হতো দিঘীর শহর। এখন আমরা নগরের ভেতরের সব পুকুর-দিঘী ভরাট করে বড় বড় বিল্ডিং করেছি। হাওরগুলো ভরাট করে ফেলেছি। একইসঙ্গে প্রধান নদীগুলোর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। এ কারণে পানি নামতে পারছে না। সিলেটের জন্য এটা ভয়ের কারণ।’
বন্যার্তদের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এই পানি বেশি দিন থাকবে না। দ্রুতই নেমে যাবে। কয়েকটা দিন কষ্ট করতে হবে। এই সময়ে সরকার আপনাদের পাশে আছে।’
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান বলেন, ‘সিলেটে বন্যাদুর্গত এলাকায় ২৫ লাখ টাকা ও ২০০ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সরকারের কাছে পর্যাপ্ত মজুত আছে। যত প্রয়োজন বরাদ্দ দেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকার প্রস্তুত আছে। আমরা আজকে সিলেটের দুর্গত এলাকা ঘুরে দেখবো। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘প্রত্যেক বছরই এই অঞ্চলে ঢল নামে। এবার ব্যাপক আকারে ঢল নামছে। সিলেটের উজানে মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে। ফলে এবার বন্যা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।’
বন্যা মোকাবেলায় আগামীতে এই অঞ্চলের নদ-নদীগুলোর নব্যতা ফিরিয়ে আনা হবে বলে জানান প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ডেল্টা প্ল্যান নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০৩৩ সালের মধ্যে নদীশাসনের বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। এরপর উজান থেকে প্রচুর পরিমাণে পানি নামলেও নেমে যাবে। বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে না। মানুষেরও ক্ষতি হবে না।’ এ প্ল্যান বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য তিনি সবার কাছে দোয়া চান।
এর আগে, সিলেট নগরের চালিবন্দর এলাকায় একটি আশ্রয়কেন্দ্রে এবং মিরাবাজারে কিশোরী মোহন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থাপিত একটি আশ্রয় কেন্দ্রে ত্রাণ বিতরণ করেন। বিকেলে সিলেট সদর উপজেলার বিভিন্ন বন্যা দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেন। পরে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী বন্যা কবলিত গোয়াইনঘাট উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চল দেখতে যান এবং ত্রাণ বিতরণ করেন।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমানের সভাপতিত্বে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সভায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মো. কামরুল হাসান, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ড. মুহম্মদ মোশাররফ হোসেন, ডিআইজি মফিজ উদ্দিন আহমদ, সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার নিশারুল আরিফ, সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী, পুলিশ সুপার ফরিদ উদ্দিন আহমদ, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন এবং প্রত্যেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।