শরীয়তপুর সদর উপজেলার চিতলিয়া ইউনিয়ন টুমচর এলাকায় ১২ নং চিতলিয়া মৌজার ভূমিহীনদের আশ্রয়ন প্রকল্পের নির্মাণাধীন কাজে বাধা দেয়া ও ভাঙচুর সহ শ্রমিকদের মারপিটের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় সিরাজ সরদার এর বিরুদ্ধে। তবে ভাংচুরসহ মারপিটের ঘটনা অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত সিরাজ সরদার। এ ঘটনায় পালং মডেল থানায় একটি মামলা হয়েছে। অভিযুক্ত ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ভূমিহীনদের জন্য চিতলিয়া ইউনিয়নের টুমচর এলাকায় একটি আশ্রয়ন প্রকল্প তৈরি হচ্ছে। ২৬ মে বৃহস্পতিবার সেই নির্মাণ কাজে বাধা দেয় স্থানীয় সিরাজ সরদার। কাজ বন্ধ না করায়, ঐদিন সন্ধ্যা ৭ টার দিকে নির্মাণাধীন ঘরের দেয়াল ভেঙ্গে ফেলে এবং শ্রমিকদের মারধর করে রক্তাক্ত জখম করে। মারধরের ঘটনায় নীলফামারী জেলার নির্মাণ শ্রমিক শাকিল হোসেন(৩০) বাদী হয়ে ৫ জনের নাম উল্লেখ পূর্বক অজ্ঞাত ৫/৭ জনকে আসামি করে পালং মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। আসামিরা হলেন সিরাজ সরদার(৬৫), আবুল কালাম সরদার(৫৫), নজরুল ইসলাম সরদার(৩০), আল ইসলাম সরদার(২৮), দিন ইসলাম সরদার(২২) সহ আরো অজ্ঞাত ৫/৭ জন। এ বিষয়ে গিয়াস উদ্দিন সরদার সাংবাদিকদের কে জানান, আমি ও আমার ভাই আবু কালাম সরদার জায়গাটি সিরাজ সরদার এর কাছ থেকে ক্রয় করেছি। আমরা এখানে বসবাসরত। জায়গাটি নিয়ে মামলা চলমান এবং এখানে কাজের বিষয় আগামী ২৬ জুন পর্যন্ত আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও এখানে জোরপূর্বক কাজ করানো হচ্ছে, তাই প্রশাসনের মাধ্যমে বিষয়টি বাধা দেয়া হয়েছে। আমরা কোন দেয়াল ভাঙ্গিনি। শ্রমিকরা নিজেরাই দেয়াল ভেঙ্গে আমাদের হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলা দিয়েছে। ঐ বাড়িতে থাকা সেলিনা, আইরিন ও সামিয়া আক্তার জানান, এখানে আমাদের কোন লোকজন দেয়াল ভাঙ্গেনি। কোন মারপিটের ঘটনা ও ঘটেনি। আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ জোরপূর্বক ঘর তুলছে। অভিযুক্ত সিরাজ সরদার জানান, এটা আমাদের নিজস্ব সম্পত্তি প্রায় ৫০ বছর যাবৎ আমরা এই জায়গা ভোগ দখল করে আসছি। কিছুদিন খাজনা পত্র না দেয়ায় জায়গাটি সরকার খাস করে ফেলেছে। আমরা এ বিষয়ে মামলা করেছি। জায়গাটি নিয়ে মামলা চলমান। এখানে কাজের বিষয়ে আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কর্তৃপক্ষ জোরপূর্বক স্থাপনা নির্মাণ করতে থাকলে, আমি থানা পুলিশের মাধ্যমে বিষয়টি বাধা দেয়ার চেষ্টা করি। থানা পুলিশ এসে কাজ করতে নিষেধ করে, কিন্তু পুলিশ চলে যাওয়ার পর শ্রমিকরা পুনরায় কাজ আরম্ভ করে। তাই আমি কাজ করতে নিষেধ করেছি। তাদের সাথে কোনো মারামারির ঘটনা ঘটেনি। আমাদেরকে হয়রানি করার জন্য কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের দিয়ে মিথ্যা মামলা করিয়েছে। মামলার রায়ে যদি আমরা জায়গা না পাই, সে ক্ষেত্রে আমরা জায়গা ছেড়ে দেব। মামলার বাদী শাকিল হোসেন জানান, আমরা অন্য জেলা থেকে এখানে কাজ করতে এসেছি। জায়গা কার সেটা আমাদের বিষয় না। আমাদের কাজ করতে বলা হয়েছে, তাই আমরা কাজ করেছি। কিন্তু অন্যায় ভাবে আমাদের উপর হামলা করে কয়েক জনকে আহত করেছে। তাই আমরা মামলা করেছি। পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আক্তার হোসেন জানান, নির্মাণ কাজে শ্রমিকদের মারধরের ঘটনায় মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) নজরুল ইসলাম জানান, এটি সরকারি খাস জমি এবং আরো আগে থেকেই কাজ চলমান, তারা তড়িঘড়ি করে আদালতের একটি নিষেধাজ্ঞা এনেছে। আদালতের নিষেধাজ্ঞা পেয়ে আমরা কাজ বন্ধ রেখেছি। কিন্তু তারা নির্মাণাধীন কাজটি ভেঙে ফেলেছে। শ্রমিকদের মারপিট করে রক্তাক্ত জখম করেছে তাই শ্রমিকরা বাদী হয়ে মামলা করেছে। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মন্দীপ ঘরাই জানান, আদালতের নিষেধাজ্ঞা পেয়ে আমরা কাজ বন্ধ রেখেছি। তারপরও নির্মাণাধীন কাজটি ভেঙে ফেলেছে, শ্রমিকদের মেরে রক্তাক্ত জখম করেছে। শ্রমিকরা বাদী হয়ে মামলা করেছে।