গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার পাশ^বর্তী ধাপেরহাটে একটি সংখ্যালঘুর বাড়িতে হামলা চালিয়েছে একদল ভূমিদস্যু। মুহূর্তে ঘরবাড়ি ভাংচুর ও লুটের তান্ডব-লীলা চলছিল সেখানে। নিমিশেই তছনছের শিকার হয়ে সর্বশান্ত হয় পরিবারটি। এখন গৃহহীন খোলা আকাশের নিচে বিছানাপত্র পেতে রাত্রি যাপন করছে তারা। সেখানে চরম আতঙ্ক আর অশ্রুজলে নির্ঘুম রাত কাটছে তাদের। সরেজমিনে রোববার (১২ জুন) সকালে গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলার ধাপেরহাট বন্দরের গোবিন্দপুরে দেখা যায়, ভুক্তভোগি পরিবারটির নানা আর্তনাদ ও আহাজারির দৃশ্য। সংবাদকর্মী দেখে তারা হাউমাউ করে কেঁদে উঠেছিলেন শ্যামরাজী, মধু, রূপা ও শুকরুসহ আরো অনেকে। স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, ওই উপজেলার ধাপেরহাট ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের মৃত লালচান চন্দ্র দাসের ছেলে সুকেন চন্দ্র দাস। এই পরিবারটি সংখ্যালঘু হওয়ায় তাদের বাস্তুভিটা টুকু দখলের পায়তারা করছিল ওই এলাকার সন্ত্রাসি প্রকৃতির একদল দস্যুরা পার্শ্ববর্তী হাসানপাড়া গ্রামের এসসাম ইসলাম, মইনুল, আয়নাল, টিটুল, মিঠুল ও বাটকারুসহ অনেকে। এরই একর্যায়ে গত ২৭ মে গভীর রাতে সুকেন চন্দ্র দাসের বাড়িতে হামলা চালায় হাসানপাড়ার মৃত আব্দুল জলিলের ছেলে এসসাম ইসলাম ও তার দলবলেরা। এ দলের হাতের অস্ত্র-লাঠির তান্ডবে ঘরবাড়ি-আসবাপত্র ও অন্যান্য জিনিসপত্র ভাঙচুর করে। এসময় লুট করে নিয়ে যায় স্বর্ণালংকার ও নগদ টাকা। বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন গাইবান্ধার পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ওসি ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তারা। তাদের নিরাপত্তায় মোতায়েন করা হয় গ্রামপুলিশ। এরপর ভূক্তভোগি সুকেন চন্দ্রের স্ত্রী রূপা দাস বাদি হয়ে সাদুল্লাপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করে। সম্প্রতি আসামিরা জামিনে এসে হাসানপাড়া গ্রামের আয়নাল হকের পুত্র সুরুজ মিয়ার মদদে বাদি পরিবারকে প্রাণ নাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে মর্মে ভূক্তভোগিদের অভিযোগ উঠেছে। তাই জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ৮ জুন ২২ তারিখে আরও একটি জিডি করেন রূপা দাস। এ সব তথ্য নিশ্চিত করে সুকেন চন্দ্র দাস মধু বলেন, এখন আর বাড়ি পাহাড়ায় গ্রামপুলিশ নেই। তাই রাত হলেও আসামিরা ইট-পাটকেল দিয়ে ঢিল মারে, অপরিচিত মানুষের আনা গোনা দেখা যাচ্ছে। আসামীরা বিভিন্ন ভাবে আমাদেরকে জোরপূর্বক উচ্ছেদের পায়তারা করছে এবং অব্যাহত হুমকির ভয়ে কোথাও বের হতে পারছিনা। এছাড়া ভাংচুর করা ঘরগুলো অর্থাভাবে পুনঃনির্মাণ করতে না পেরে শিশু সন্তানসহ পরিবারের সবাই খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছি। তাই আইন প্রয়োগকারীদের নিকট সুষ্ঠু বিচার দাবি জানাচ্ছি। এ বিষয়ে আসামি এসসাম গাছু ওরফে ইসলাম গংদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ধাপেরহাট পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রর ইনচার্জ সেরাজুল হক জানান, মামলাটি তদান্তাধীন রয়েছে। অপরাধীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা হবে।