শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৯:৩৪ অপরাহ্ন

দরিদ্রবান্ধব ও জনমুখী বাজেট আমাদের কাম্য

খবরপত্র ডেস্ক :
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১৬ জুন, ২০২২

অর্থনৈতিক মন্দাবস্থার মধ্যে বাজেট প্রণয়ন অত্যন্ত চ্যালেঞ্জের বিষয়। সবদিক বিবেচনা করে ভারসাম্য বজায় রাখা অত্যন্ত কঠিন। এর মধ্যে গত গত ৯ জুন জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল নতুন অর্থবছরের (২০২২-২০২৩) বাজেট ঘোষণা করেছেন। অর্থমন্ত্রী হিসেবে এটি তার চতুর্থ এবং বাংলাদেশের ৫১তম বাজেট। এবারের বাজেটের আকার ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। জিডিপি ধরা হয়েছে ৭.৫ শতাংশ। বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী এ বাজেটকে দরিদ্রবান্ধব ও জনমুখী আখ্যায়িত করে বলেন, গরিব হওয়ার কষ্ট আমি বুঝি। নিজে গরিব ছিলাম। আমি জানি, এ থেকে কিভাবে মুক্তি পেতে হয়। এবারের বাজেটে দেশের বাইরে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার ওপর জোর দেয়া হয়েছে। ৭ শতাংশ কর দিয়ে দেশের বাইরে থেকে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফেরত আনা যাবে। তবে এ সুযোগ দেয়াকে অনেকেই অনৈতিক বলেছেন। সেন্টার ফর পলিসিসংবাদ সম্মেলনে বলেছে, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, অনৈতিকÑতিনদিক থেকেই অগ্রহণযোগ্য। যারা সৎভাবে ব্যবসা করেন, তারা হতাশ হবেন এবং অনেকে কর দিতে নিরুৎসাহী হবেন। অর্থমন্ত্রী যুক্তি দিয়ে বলেছেন, বিশ্বের ১৭টি দেশ এভাবে টাকা ফেরত আনার উদ্যোগ নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়াসহ ১৪টি দেশ এ ধরনের সুযোগ দিয়েছে। বিশ্বব্যাপী চলমান অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে অর্থমন্ত্রীর এ উদ্যোগ ও যুক্তি উড়িয়ে দেয়া যায়না। এছাড়া বাজেটে সামাজিক, অর্থনৈতিক, দারিদ্র্য বিমোচনসহ যেসব উদ্যোগ নেয়াহয়েছে, সার্বিকভাবে তা আশা জাগানিয়া।
বাজেট করা বড় কথা নয়, বাজেট যথাযথ ও কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করাই বড় কথা। আমরা দেখেছি, প্রতি বছরের বাজেট বাস্তবায়নে কিছুত্রুটি-বিচ্যুতি থেকে যায়। বরাদ্দকৃত অর্থ যথাযথভাবে ব্যয় করা হয়না, অনেক সময় বাস্তবায়নের সক্ষমতার অভাবে অর্থ ফেরত আসে।আমরা মনে করি, এবারের বাজেট বাস্তবায়ন অসম্ভব নয়, যদি বাস্তবায়নকারীদের আন্তরিকতা, সততা ও দুর্নীতিমুক্ত মানসিকতা থাকে। এবারের বাজেটের উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে, করোনায় এবংরাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্ব অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ায় তার যে ধাক্কা আমাদের অর্থনীতিতে লেগেছে, তা পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ। বিশেষ করে এ সময়কালে দেশের প্রায় অর্ধেক মানুষ দরিদ্র হয়ে গেছে। অনেক নি¤œবিত্ত দরিদ্র এবং মধ্যবিত্ত নি¤œবিত্তে পরিণত হয়েছে। মানুষের আয় কমে গেছে, অসংখ্য মানুষ কর্মহারা হয়েছে। নিত্যপণ্যের অব্যাহত ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। অনেকে খাবার খাওয়া কমিয়ে ব্যয় সংকুলান করছে। এবারের বাজেটে অর্থমন্ত্রী এদিকটি বেশি প্রাধান্য দিয়েছেন বলেপ্রতীয়মান হয়েছে। সামাজিকনিরাপত্তা বেষ্টনি সুরক্ষিত করার দিক নির্দেশনা এতে রয়েছে। অর্থমন্ত্রীর ভাষায়, গরিবের দিকে দৃষ্টি দেয়া হয়েছে। এজন্য বাজেটে দরিদ্র মানুষের জন্য প্রণোদনার অর্থ বরাদ্দ ও রেশনিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে উল্লেখ করা প্রয়োজন, এসব বরাদ্দের ক্ষেত্রে দুর্নীতির সুযোগ সম্প্রসারিত হয়। আমরা দেখেছি, করোনাকালে দরিদ্র মানুষকে নগদ অর্থ দেয়ার যে প্রকল্প নেয়া হয়, সেখানে এন্তার দুর্নীতি হয়েছে। একজনই দশজনের টাকা নিয়ে গেছে। প্রণোদনার অর্থ ফেরতও গেছে। রেশনের কার্ড বিতরণের ক্ষেত্রে ও নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বাজেটে দরিদ্রদের জন্য প্রণোদনা ও রেশনিংয়ের যে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, তা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের সততা ও আন্তরিকতা না থাকলে তার সুফল পাওয়া যাবে না। পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা নিয়ে বাজেটে সুযোগ রাখা ইতিবাচক। অর্থনৈতিক মন্দায় বিশ্বজুড়ে অর্থের তীব্র সংকট চলছে। উন্নত দেশগুলো হিমশিম খাচ্ছে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে যখন অর্থসংকট দেখা দেয়, তখন তা কতটা কঠিন ও নাজুক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তা চলমান সংকট দেখেই বোঝা যায়। এ পরিস্থিতি সামালদিতে অর্থ সংগ্রহেরবিকল্প নেই। বলাবাহুল্য, অর্থ চলমান। এক জায়গায় থাকে না। দেশ-বিদেশের সবখানেই তা সচল। যেখানে লাভ ও নিরাপত্তা অর্থ সেখানে যাবেই। রোখা সম্ভব নয়, মনে রাখতে হবে। দুর্নীতি এক জিনিস, আর অর্থের বিচরণ আরেক জিনিস। অর্থনীতিকে দাঁড় করানোর জন্য আমাদের অর্থের প্রয়োজন। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে। পাচারকৃত অর্থ যদি দেশে ফেরত আনা যায়, তাহলে তা কিছুটা হলেও দেশের অর্থনীতিতে যুক্ত হয়ে সবল হতে সহায়ক হবে। যারা অর্থপাচার করেছে, তাদের জেল-ফাঁসি দেয়া যেতে পারে। তবে তাতে কি কাজ হবে? অর্থ কি ফেরত আসবে? বরং অর্থ ফেরতের সুযোগ দিলে তা ফেরত আসবে। বিশ্বের অনেক দেশেই বিদেশিরা বিনিয়োগ করলে তাদের অর্থের উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন তোলা হয় না। মালয়েশিয়া, কানাডা, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ উন্নতবিশ্বে অর্থের উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন না তুলে বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হয়। এক্ষেত্রে, আমাদের দেশে পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনতে বাধা দিলে, তা ক্ষতি ছাড়া লাভ হবে না। অর্থমন্ত্রী এ দিকটি বিবেচনা করেই সুযোগ দিয়েছেন। এবারের বাজেটে অনেক ইতিবাচক দিক থাকলেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে সংবাদপত্রের দুর্দশার দিকে দৃষ্টিপাত করা হয়নি। রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ সংবাদপত্র যে খুবই সংকটজনক অবস্থায় রয়েছে, এদিকে অর্থমন্ত্রী দৃষ্টি দেননি। শুধু সংবাদপত্রই নয়, প্রকাশনা ও পাঠ্যপুস্তকের কাগজ, কালিসহ অন্যান্য উপকরণের ক্ষেত্রে সুবিধা দেয়া হয়নি। সংবাদপত্র শুধুমাত্র সংবাদপত্র নয়, এটি নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধি করে এবং নানাভাবে তাদের শিক্ষা দেয়। রাষ্ট্র ও সরকারের সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে। অথচ সংবাদপত্রের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজ, কালিসহ অন্যান্য উপকরণের ওপর থেকে শুল্ক কমানোর দাবী দীর্ঘদিনের। কয়েক দিন আগে সম্পাদক পরিষদ সংবাদপত্রের দুরবস্থার কথা তুলে ধরে সরকারের কাছে কাগজের ওপর থেকে শুল্ক কমিয়ে অর্ধেক করার দাবী জানিয়েছিল। দুঃখজনক হচ্ছে, এবারের বাজেটে এ বিষয়টি আমলে নেয়া হয়নি। উপেক্ষা করা হয়েছে। উল্টো দাম বৃদ্ধি পাবে। পাঠ্যপুস্তকের কাগজ ও অন্যান্য উপকরণের ক্ষেত্রেও কোনো সুবিধা প্রদান করা হয়নি। এটা শিক্ষা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। অথচ এ খাতটিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়া উচিৎ ছিল। বলাবাহুল্য, মানুষকে শিক্ষিত করে তুললে, দেশের উন্নতি দ্রুত হয়। বাজেটে এদিকটি গুরুত্ব সহকারে যুক্ত করা অপরিহার্য ছিল।
যে বাজেট ঘোষণা করেছেন, তা সবকিছু আমলে নিয়ে প্রণয়ন করেছেন বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। যেসব ত্রুটি-বিচ্যুতি ও অসম্পূর্ণতা রয়েছে, তা সংসদে আলাপ-আলোচনা এবং দেশের অর্থনীতিবিদদের পরামর্শ আমলে নিয়ে সংযোজন-বিয়োজনের মাধ্যমে সংশোধন করা যেতে পারে। আমরা আশা করব, সংবাদপত্র শিল্প টিকিয়ে রাখতে এবং বিদ্যমান সমস্যার সমাধানে বিশেষ দৃষ্টি দেয়া হবে। শিক্ষা সম্প্রসারণে পাঠ্যপুস্তকের উপকরণের সুবিধার বিষয়টিও বিবেচনা করা হবে। নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করে এ মুহূর্তে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেয়া অত্যন্ত জরুরি। এ ব্যাপারে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। আমরা আশা করি,বাজেট পাসের আগে বিস্তর আলোচনা করে উল্লেখিত ত্রুটিগুলো দূর করতে জাতীয় সংসদ,সরকার ও সংশ্লিষ্ট সব্ইা আন্তরিকতার পরিচয় দিবে। জনবান্ধন একটি বাজেট ২০২২-২৩ অর্থবছরে জাতি উপহার পাবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com