রবিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:৪৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
দেশের উন্নয়ন ও মানুষের কল্যাণে বিএনপির নেতা কর্মীদের কাজ করতে হবে বনশ্রী আফতাব নগর প্রেসক্লাবের নবনির্বাচিত সভাপতি বাবলু পন্ডিত, সম্পাদক জহুরুল ইসলাম ইউনিয়ন ব্যাংক পিএলসি. এর নবগঠিত পরিচালনা পর্ষদের ১৫তম সভা মহানগরী জোন আন্তঃকলেজ ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় মাইলস্টোন কলেজের কৃতিত্ব স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আজ ৮৯তম জন্মবার্ষিকী নগরকান্দায় দু’গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ, ওসি, সাংবাদিকসহ আহত- ৩০ কালীগঞ্জে নানা সংকটে গ্রাম আদালত সুফল পেতে প্রয়োজন কার্যকরী উদ্যোগ কটিয়াদীতে তারুণ্যের উৎসব উদযাপন, ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচ মুন্সীগঞ্জে লুন্ঠিত মালামালসহ ৭ ডাকাত গ্রেফতার লক্ষ্মীপুর ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজে বর্ণিল পিঠা উৎসব

শিক্ষা ব্যয় নিয়ে কিছু কথা

অধ্যাপক ডা: শাহ মো: বুলবুল ইসলাম
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২৪ জুন, ২০২২

জাতি গঠনের প্রধান উপাদান শিক্ষা। আমাদের সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায়ের ২৬ থেকে ৪৭ ধারার ভেতরে নাগরিক অধিকারের কথা বিবৃত রয়েছে। শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক অধিকার সমভাবে সব নাগরিক লাভ করবে তা স্পষ্ট করে বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে আমরা কী দেখছি? সাধারণত শিক্ষার সমান সুযোগ সবাই পাচ্ছে না। বিশেষায়িত ও উচ্চ শিক্ষায় বৈষম্য আরো প্রকট। মোটকথা শিক্ষার আলো থেকে দেশের বড় একটি জনগোষ্ঠী বঞ্চিত থাকছে। এর কারণ, শিক্ষার অতিরিক্ত ব্যয়। জীবনমানের সাথে সাথে শিক্ষার ব্যয়ও লাগামহীন বড়েছে। সাধারণ নাগরিক ও সীমিত আয়ের মানুষ জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ার চাপে এখন দিশাহারা। হতাশায় নিমজ্জিত তাদের জীবন।
সরকারি-বেসরকারি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন ধারা উপধারার বিচিত্র পাঠদান পদ্ধতি বিদ্যমান আমাদের দেশে। এতে জাতীয় আশা আকাক্সক্ষা ও চেতনার প্রতিফলন খুব কমই প্রতিফলিত হতে দেখা যায়। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অবৈতনিক হলেও ইংরেজি মাধ্যম স্কুল এবং বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষাব্যয় অতি উঁচু। এসব প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগেই লক্ষাধিক টাকা ভর্তি ফি নেয়া হয়। মাসিক বেতন নেয়া হয় ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা, ক্ষেত্রবিশেষে আরো বেশি। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাধারণ মানুষের পক্ষে ছেলেমেয়ে পড়ানো দুঃস্বপ্ন ছাড়া আর কিছু নয়। সমাজের উচ্চবিত্তরাই নামী-দামি এসব স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলেমেয়েদের পড়ানোর সুযোগ পান। বিভিন্ন ধরনের সুবিধা সংবলিত এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুযোগ সীমিত সংখ্যক সুবিধাভোগী ভোগ করে থাকেন।
সরকারি ও বেসরকারি সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশুনার মান নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে শিক্ষকস্বল্পতা এবং শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে অনিয়ম নিয়মে পরিণত হওয়া। এতে করে অভিভাবকদের বাধ্য হয়ে ঝুঁকতে হচ্ছে কোচিং সেন্টারের প্রতি। অথচ শ্রেণিকক্ষে সঠিকভাবে পাঠদান করানো হলে প্রাইভেট পড়ানোর প্রয়োজন হতো না। এ অবস্থা বিদ্যমান থাকায় প্রাইভেট পড়ানো এখন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক্ষেত্রে নি¤œ এবং নির্দিষ্ট আয়ের অভিভাবকরা ছেলেমেয়েদের শিক্ষার খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন, বিপাকে পড়ছেন। এখন কোচিং ছাড়া শিক্ষা গ্রহণ সম্ভব হয় না। এটা এখন শিক্ষার অনুষঙ্গ হয়ে পড়েছে। আর কোচিংয়ের যে খরচ তা শুনলে রীতিমতো মাথা ঘোরানো অবস্থা হয়ে পড়ে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও সেশন ফি ছাড়াও বিভিন্ন নামে বড় অঙ্কের ফি নেয়ার কথা শোনা যায়। অথচ এসব প্রতিষ্ঠানের পড়াশুনার মান প্রশ্নবিদ্ধ, হাতেগোনা কয়েকটি ছাড়া। বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত শিক্ষক নেই। খ-কালীন শিক্ষকই এসব প্রতিষ্ঠানের ভরসা। অনেকের আবার নিজস্ব ক্যাম্পাসও নেই। ভাড়া বাড়িতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ইউজিসির বারবার তাগিদ দেয়া সত্ত্বেও এমন পরিস্থিতি বদলাচ্ছে না। গ্রামের মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা ছেলেমেয়েরা উচ্চ শিক্ষার প্রত্যাশায় কোথাও ভর্তি হতে না পেরে নিরুপায় হয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে যেসব ছাত্রছাত্রী শিক্ষাজীবন শেষ করে তাদের বেশির ভাগই বাস্তবতার নিরিখে বারবার হোঁচট খায়। হতাশায় ভোগে। বেসরকারি শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষা ব্যয় নির্বাহ করতে গিয়ে অনেক অভিভাবক ঋণ করেন, জমি বিক্রি করেন কিংবা বসত ভিটা পর্যন্ত বিক্রি করেন শুধু সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রত্যাশায়। এমনকি পড়াশোনার খরচ জোগাতে গিয়ে অনেক অভিভাবক সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েন। শিক্ষা শেষে চাকরি নামের সোনার হরিণের খোঁজে সন্তান যখন দিশাহারা; তখন ওইসব অভিভাবকের চোখেমুখেও থাকে হতাশার স্পষ্ট ছাপ। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ এবং মেডিক্যাল কলেজ বা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পড়াশুনা করে তারা নামমাত্র ব্যয়ে পড়াশোনার সুযোগ পায়। অথচ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা বেসরকারি মেডিক্যাল বা অন্য কলেজে শিক্ষার্থীরা সে সুযোগ পাচ্ছে না। ফলে শিক্ষার ক্ষেত্রে একই পর্যায়ে ভারসাম্যহীন অবস্থা তৈরি হয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের অপ্রতুলতায় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছড়াছড়ি। শিক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন স্রেফ একটি পণ্য। এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসি কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় এবং দৃঢ় ভূমিকা প্রয়োজন।
লক্ষণীয়, কোচিং সেন্টারের মতো বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা তৈরি করেছে কর্মহীন শিক্ষিত বেকার। তাদের কিছু সংখ্যক হতাশায় দেশ ছেড়ে বিদেশে অবৈধভাবে পাড়ি দিতে গিয়ে সাগরে ভাসছে বেওয়ারিশ লাশ হয়ে। হারিয়ে যাচ্ছে অজানা গন্তব্যে। সরকার শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যয় বরাদ্দ বাড়িয়ে এ ক্ষেত্রে খানিকটা হলেও স্বস্তির পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে। পারে শিক্ষাঋণের প্রবর্তন করতে। শিক্ষা বীমার কথাও এ ক্ষেত্রে ভাবা যায়। ই মেইল: লেখক : অধ্যাপক ও চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ ঊসধরষ- ংযধয.ন.রংষধস@মসধরষ.পড়স




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com