মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০২:১০ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চল অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত লালমোহনে ডা. আজাহার উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সভাপতিকে সংবর্ধনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা সিংড়ায় পরিবেশ রক্ষার্থে ৫৩৬টি ডাস্টবিন বিতরণ কাজী আজিম উদ্দিন কলেজে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদলের ৩১ দফা নিয়ে মতবিনিময় সভা পটুয়াখালীতে শিক্ষক দম্পতি হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন টুঙ্গিপাড়ায় ভিক্ষুক ও হতদরিদ্রদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলো সমাজসেবা অফিস জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের আওতায় এনে সহায়ক কর্মচারী অন্তর্ভুক্ত ও বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় গঠনের নিমিত্তে দাবি পেশ দাউদকান্দিতে সড়কের মাটি ধসে পড়ল খালে, দুর্ঘটনার আশংকা সীতাকুন্ডে বিতর্কিত মাদ্রাসা পরিচালকের করা মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে মানববন্ধন

ইয়াসিন মাহমুদের “কাঁটাযুক্ত গলিপথ পেরিয়ে”

শুকরান সাবিত:
  • আপডেট সময় সোমবার, ১ আগস্ট, ২০২২

জীবনযুদ্ধের বহুমূল্য প্রেরণা

বই: কাঁটাযুক্ত গলিপথ পেরিয়ে। লেখক: ইয়াসিন মাহমুদ। বিষয়: প্রবন্ধ। প্রকাশক: গ্রন্থকুঞ্জ প্রকাশন
মুদ্রিত মূল্য: ২০০ টাকা। “জিন্দেগি আফসানায়ে জুদায়িস্ত?/ফরিয়াদে বে-সাদায়িস্ত/ তানহা মারাও হামসফর”
‘আফগান দারি (ফারসি) ভাষার একটি গানের প্রথম কলি। বাংলা করলে দাঁড়ায়’ ‘জীবন বিচ্ছিন্নতার এক উপাখ্যান, কেবলই নীরব আর্তনাদ। জীবন এই সফরের একমাত্র সঙ্গী।’
সত্যিকার অর্থেই জীবন একটা যুদ্ধের নাম। এই যুদ্ধে প্রতিপক্ষ পদে পদে, প্রতিপক্ষ দুর্গম; অথচ লড়াইটা সঙ্গীহীন। হতাশা, বিষাদ, ভয়-ডর থামিয়ে দিতে চায় জীবনের গতি। থেমেও যায় অনেকে। অথচ একটুখানি সাহস, একটুখানি আশার আলোক পেলে অনায়াসে পাড়ি দেয়া যায় দুর্গম গিরি, কান্তার মরু।
কেননা কোনটাই অগম্য নয় জীবনের কাছে। এজন্যই শত-সহস্র বিপদ বুকে নিয়েও এগিয়ে যাওয়া যায়, এগিয়ে যায় জীবন। আর এই সাহস, ভরসার কেন্দ্র নির্মাণ করতে গিয়েই তো বেশুমার দেব-দেবীর জন্ম দিয়েছে প্রাচীন সভ্যতার মানুষেরা।
কিন্তু ইসলাম দেব-দেবীর ধারণাকে আশ্রয় দেয়নি। তবুও ইসলামের যে সাহস সঞ্চারণ আর উদ্দীপনা তা এক অনিবার্য প্রেষণার জন্ম দেয় মানুষের মনে।
এত কথার অবতারণা ‘কাঁটাযুক্ত গলিপথ পেরিয়ে’ বইটির জন্য। তরুণ লেখক ইয়াসিন মাহমুদের প্রবন্ধগ্রন্থ। ইসলামের এই উদ্দীপনাই বইটির উৎস, বলা চলে।
২.
বইটি যখন হাতে পেয়েছিলাম, ভেবেছিলাম কবিতার বই। তরুণ লেখকরা যেটা করেন প্রথমে। কিন্তু ফ্ল্যাপ উল্টে ধাক্কা খেলাম। প্রবন্ধের পথে তো সবাই হাঁটেন না। অথচ লেখক খুবই তরুণ। তবে লেখকের প্রবন্ধের হাত সম্পর্কে আগের কিছুটা ধারণা ছিল না তা নয়। এর আগে এক ম্যাগাজিনে ‘যাদের হৃদয়ে আছে আল্লাহর ভয়’ শিরোনামে একটি প্রবন্ধ পড়েছিলাম। প্রবন্ধটি এখানেও সংকলিত হয়েছে।
বইটিতে মোট প্রবন্ধ আছে ১২টি। নামগুলো দেখলেই বোঝা যায় ‘লেখক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন, কিন্তু তাঁর ভেতরে রয়েছে কবিসত্তাও। প্রবন্ধগুলো হচ্ছে’ ‘মনের মিনারে জীবনের সান্নিধ্যে’, ‘এক জীবনের ইশতেহার’, ‘অনন্ত পথের যাত্রায় প্রথম প্ল্যাটফর্ম বিরতি’, ‘সৌরভ ছড়ানো হৃদয়ের কথা’, ‘যাদের হৃদয়ে আছে আল্লাহর ভয়’, ‘আমাদের যাত্রা অনন্তকালের’, ‘কাঁটাযুক্ত গলিপথ পেরিয়ে’, ‘শাহাদাতে উদ্দীপ্ত জীবন খোঁজে প্রভুর সান্নিধ্য’, ‘সকালের সূর্যোদয় অনিবার্য’, ‘জীবন প্রভাতের শপথ: একান্ত অনুভবের আয়না’, ‘বুকের ভেতর মরু সাইমুম’ ও ‘জীবনের এই সময়ে দাঁড়িয়ে’।
যে জীবনযুদ্ধের কথা বলছিলাম, সেই যুদ্ধে প্রেরণা যোগানোর মতো প্রবন্ধগুলো। তবে প্রেরণা যোগানোর কাজটি মনস্তত্ত্ব বিশ্লেষণের মধ্য দিয়েই শুরু করেছেন ইয়াসিন মাহমুদ। প্রথম প্রবন্ধ ‘মনের মিনারে জীবনের সান্নিধ্যে’ প্রবন্ধটিতে মানুষের মনের অলিগলি নিয়ে কথা বলেছেন, তুলে ধরেছেন তাদের স্বরূপ যারা জীবনযুদ্ধে পরাজিত হয়।
এভাবেই আমাদের জীবনকে কিভাবে সাজানো যায়, কিভাবে সাফল্যের কিনারে পৌঁছানো যায়, সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা রয়েছে বইটিতে। তবে এতে দুনিয়াবী কামিয়াবির অধিক আখিরাতকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। যেহেতু বইটির টার্গেটেড অর্ডিয়েন্স ইসলাম অনুসারীরা।
তাই বলে দুনিয়া এড়িয়ে যেতে বলেননি লেখক। তিনি বলছেন- ‘এই দুনিয়াই আমাদের শস্যক্ষেত্র। আমাদের পরকালীন জীবনকে সাজানোর একটি প্ল্যাটফর্ম।’
এটি ইসলামেরই বক্তব্য।
একইসাথে ইসলাম অনুসরণ করতে গিয়ে যে বিপদ আপতিত হয়- সেসবে ধৈর্য্যের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন ও তার থেকে উত্তরণের যে উদ্যম প্রয়োজন সে ব্যাপারেও নজর এড়ায়নি প্রাবন্ধিকের।
লেখক এসব বিষয় পাঠককে এমনভাবে বোঝাতে চেয়েছেন, বলা চলে ‘জলবত তরলং’। এজন্য তুলে ধরেছেন পবিত্র কুরআন ও হাদিসের বিভিন্ন বক্তব্য। ছত্রে ছত্রে উদ্ধৃত করেছেন কাব্যিক পঙক্তি। নমুনা পেশ করেছেন বড় বড় মানুষদের। ফলে লেখকের বক্তব্যগুলো পাঠকের মনোজগতে অধিক নাড়া দিতে সক্ষম।
৩.
‘মিথ্যার সাময়িক দাপটে তটস্থ হওয়ার কিবা আছে? এ তো কালবৈশাখী ঝড়। একটু পরেই থেমে যাবে।’
সত্য। কালবৈশাখী ঝড় অনেক কিছু তছনছ করে গেলেও একটু পরেই থেমে যেতে হয় তাকে। ঝড় অনন্তকাল ধরে চলে না। আল্লাহ তায়ালাও নিশ্চয়তা দিয়ে কুরআনে বলেছেন, কষ্টের পর সুখ রয়েছে। কিন্তু সামান্য ঝড়েই আমরা মুষড়ে পড়ি।
তাছাড়া ‘শাহাদাতই একজন মুমিন জীবনের চূড়ান্ত সফলতা।’ সেখানে কিসের ভয়? পুরো বইটির বিষয় এবং বক্তব্যের সারকথা এই। এই ছোট্ট একটি কথা পাঠকের মন ও মেজাজে আশ্রয় দিতে এত এত কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন প্রাবন্ধিক।
৪.
প্রবন্ধের ব্যাপারে ভয় আছে। সহজ সহজ বিষয়ের এত জটিল জটিল কথা কে শুনতে চায়? কিন্তু ইয়াসিন মাহমুদ যা লিখেছেন, তা যেন সত্যিকার অর্থেই খোশগল্প। সহজ ও সাবলীল শব্দচয়ন এবং ছোট ছোট বাক্য। কাব্যিক ঢঙও আছে; কিন্তু কথাকে আড়ষ্ট করেননি। যেমন, ‘যাদের হৃদয়ে আছে আল্লাহর ভয়’ প্রবন্ধে ভয়ের পরিচয় দিচ্ছেন এভাবে-
‘আমি যে ভয়ের কথা বলছি, সেখানে জবরদস্তি নেই; নেই দাপুটে ক্ষমতার অপব্যবহার। তবে সেই ভয়ের রয়েছে নির্দেশিকা। স্থায়ী নীতিমালা। সেই ভয় একান্ত নিজের। একান্ত অনুভবে নিজেকে চেনা। নিজের সম্পর্কে নিজেকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো।’
নাম প্রবন্ধ ‘কাঁটাযুক্ত গলিপথ পেরিয়ে’তে- ‘আমাদের জীবনটা বহতা নদীর মতো। এখানে জোয়ার-ভাটা; উত্থান-পতন, ভাঙা-গড়া, ডুব-সাঁতারের খেলা নিত্যই প্রবহমান। প্রতিদিন মুখোমুখি হতে হয় নতুন চ্যালেঞ্জের। আর একজন মুমিনকে তো স্বাভাবিকভাবে পার করতে হয় আগুনসময়।’
এই বহতা নদীর মতো ভাষায় প্রবন্ধ লিখে হাজির হয়েছেন ইয়াসিন মাহমুদ। সেই প্রবন্ধ সামগ্রিকভাবে দুঃসময়ের। দুঃসময় থেকে উত্তরণের। অনুপ্রেরণার। বইটি মূলত কিশোর উপযোগী। তাছাড়া হতাশা, নৈরাশ্য এসব তো এই সময়টাতেই দানা বেঁধে ওঠে।
৫.
বইটির নামকরণ যথাযথ। প্রচ্ছদ সুন্দর, প্রাসঙ্গিক। কিছু কিছু জায়গায় বানান ভুল নজরে পড়েছে। আর দুয়েকটি ছোটখাটো বিষয় রয়েছে, যেগুলো এড়ানো যেত।
যেমন, শব্দ চয়নগত কিছু বিষয়। এক্ষেত্রে বিকল্প ও পরিশীলিত শব্দ ব্যবহার করা যেত। ভাষা সহজ করতে গিয়ে হয়তো এই বিপত্তি হয়েছে।
এছাড়া যেহেতু অনেক বেশি উদ্ধৃতি ব্যবহার করেছেন, সেজন্যই বলা, এক্ষেত্রে বাংলা সাহিত্যের আরও অধিক পরিচিত লেখকদেরও উদ্ধৃত করা যেত।
যদিও এসব ছোটখাটো বিষয়। লেখক উপস্থাপন করবেন তার একান্ত নিজস্ব ঢঙে।
সার্বিকভাবে, বইটি হতাশা থেকে উত্তরণে কিশোর-যুবাদের সহায়ক হবে। যোগাবে সাহস। একইসাথে পথ দেখাবে অনন্তকালের। নিজে পড়–ন, আপনার কিশোর ভাই-বোন, সন্তানকে উপহার দিন। আলোচক :শুকরান সাবিত একজন কবি ও প্রবন্ধকার।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com