সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়েছে নতুন বছর ১৪৪৩ হিজরি। হিজরি বছরের প্রথম মাস মহররম। হজরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর প্রস্তাবনায় মহররম মাসকে হিজরি বছরের প্রথম মাস হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়। এ মহররম মাস কী? এ মাসের স্মরণীয় ফজিলতপূর্ণ ইবাদতই বা কী? আবার বর্জনীয় বিষয়গুলোই বা কী?
১. মহররম কী? আল্লাহর গণনায়মাস ১২টি। এ ১২ মাসের মধ্যে সম্মানিত হারাম মাস ৪টি। যে মাসগুলোতে যাবতীয় যুদ্ধ-বিগ্রহ ও রক্তপাতকে মহান আল্লাহ হারাম ঘোষণা করেছেন। তন্মধ্যে মহররম একটি। এটি হিজরি বছরের প্রথম মাস। যা হজরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর প্রস্তাবনায় হিজরি বছরের প্রথম মাস হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়।
২. মহররম মাসের রোজা: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, রমজানের রোজার পর সবচেয়ে উত্তম রোজা হলো মহররম মাসের রোজা।’ (মুসলিম)
৩. আশুরা কী? মহররম মাসের ১০ম দিনকে আশুরা বলা হয়। এ দিন আল্লাহ তাআলা হজরত মুসা আলাইহিস সালাম এবং তাঁর জাতিকে ফেরাউনের জুলুম থেকে মুক্তি দিয়েছেন। এ উপলক্ষ্যে ইসলামের আগমনের আগে থেকেই ইয়াহুদিরাও রোজা রাখতেন।
৪. আশুরার রোজা পালন: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় হিজরতের পর দেখেন ইয়াহুদিরা এদিন রোজা পালন করছে। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমরা হজরত মুসা আলাইহিস সালামের অনুসরণ করার ব্যাপারে তোমাদের চেয়ে অধিক হকদার। তিনি নিজে সেই (আশুরার) দিনের রোজা পালন করলেন এবং সাহাবাদেরকেও (এই আশুরার দিন রোজা) নির্দেশ দিলেন।’ (বুখারি)
৫. আশুরার রোজার ফজিলত: আশুরার রোজা রাখার ফজিলত অনেক বেশি। এ দিনের রোজা রাখার ফজিলত বর্ণনায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহর কাছে আশা করি তিনি বিগত এক বছরের গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’ (মুসলিম)
৬. মুহররমের ৯ তারিখও রোজা পালন: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইয়াহুদিদের অনুসরণ করতে নিষেধ করেছেন। আশুরা উপলক্ষে ইয়াহুদিরা ১ দিন (আশুরার) রোজা রাখতো। সে কারণে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইয়াহুদিদের ব্যতিক্রম করতে বলেছেন।
যেহেতু এ দিন ইয়াহুদিরাও রোজা রাখে সে কারণে তাদের ব্যতিক্রমস্বরূপ ৯ মুহররমও রোজা পালন করা উচিত। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমি যদি আগামী বছর বেঁচে থাকি তাহলে ৯ এবং ১০ মহররম দুই দিনই রোজা রাখবো।’ (মুসলিম)
৭. আশুরায় বর্জনীয় আমল: এ দিনটিকে কেউ কেউ শুধু কারবালার মাতক ও শোকানুষ্ঠান হিসেবে উদযাপন করে থাকে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রিয় নাতি হজরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর হৃদয়বিদারক শাহাদাত দিবস হিসেবে শরীরে আঘাত করতে থাকে; শরীর রক্তাক্ত করতে থাকে; তাজিয়া মিছিল তথা যুদ্ধের সাজ সাজ পোশাকে ঘোড়া সাজিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে; হজরত হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু কৃত্রিম মাজার তৈরি করে রাস্তায় প্রদর্শণীতে নেমে পড়ে; আশুরা উপলক্ষ্যে এসব আয়োজন ও আমল বর্জন করা। এ সব আমলের ব্যাপারে ইসলামের কোনো অনুমোদনই নেই। তবে এদিন ইবাদত-বন্দেগির পাশাপাশি হজরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর স্মরণে তার জীবন ও কর্ম শীর্ষক আলোচনা সভা হতে পারে। কারবালার প্রান্তরে শাহাদাতবরণকারীদর জন্য দোয়ার অনুষ্ঠানও করা যেতে পারে। ইসলামের বিজয়ের জন্য তাদের ত্যাগ ও অবদান তুলে ধরা এবং মুসলিম উম্মাহর মাঝে অনুপ্রেরণা জাগিয়ে তোলা দোষণীয় নয়। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মহররম মাসের মর্যাদা রক্ষার এবং আশুরার ৯ ও ১০ তারিখ রোজা পালনসহ ইসলামের কল্যাণে আশুরার ঘটনাবহূল আলোচনা মানুষের কাছে তুলে ধরার তাওফিক দান করুন। কুরআন-সুন্নাহর ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।