হজরত উকবা ইবনে আমের রা: জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসূল! মুক্তির উপায় কী? রাসূলুল্লাহ সা: বললেন, ‘তুমি তোমার জবান সংযত রাখো, (পরকালে) তোমার বাসস্থান যেন প্রশস্ত হয় আর তোমার গোনাহের জন্য কাঁদো’ (তিরমিজি-২৪০৬)। হজরত ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত, নবীজী সা: বলেন, ‘হে কুরাইশ যুবকদের দল! তোমরা তোমাদের গোপনাঙ্গ হেফাজত করো, যে ব্যক্তি তার গোপনাঙ্গের হেফাজত করবে, তার জন্য জান্নাত’ (বায়হাকি-৫৪২৫)। ইসলামে নারী ও পুরুষ উভয়কেই তাদের জিহ্বা ও গোপনাঙ্গ রক্ষা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পবিত্র কুরআনের সূরা নূরে পুরুষদের তাদের গোপনাঙ্গ রক্ষা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন : ‘(হে নবী) মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাজত করে’ (সূরা নূর-৩০)।
উপরোক্ত আয়াতে গোপনাঙ্গের সুরক্ষার নির্দেশ দেয়ার পর মহান আল্লাহ বলেন : ‘এটি তাদের জন্য অধিকতর পবিত্র’ (সূরা নূর-৩০)। এর চেয়ে কল্যাণকর আর কী হতে পারে যে, এ ব্যবস্থাকে পবিত্রতা বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
যৌনাঙ্গ সংযত রাখার অর্থ হলো, কুপ্রবৃত্তিচরিতার্থ করার যত পন্থা আছে, সব থেকে যৌনাঙ্গকে সংযত রাখা। এতে ব্যভিচার, পুংমৈথুন, দুই নারীর পারস্পরিক ঘর্ষণ; যাতে কামভাব পূর্ণ হয় এবং হস্তমৈথুন ইত্যাদি সব অবৈধ কর্ম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
আয়াতের উদ্দেশ্য অবৈধ ও হারাম পন্থায় কাম প্রবৃত্তিচরিতার্থ করা এবং তার সব ভূমিকাকে নিষিদ্ধ করা। তন্মধ্যে কাম-প্রবৃত্তির প্রথম ও প্রারম্ভিক কারণ হচ্ছে দৃষ্টিপাত করা ও দেখা এবং সর্বশেষ পরিণতি হচ্ছে ব্যভিচার। এ দু’টিকে স্পষ্টত উল্লেখ করে হারাম করে দেয়া হয়েছে। এতদুভয়ের অন্তর্র্বতী হারাম ভূমিকাগুলো- যেমন কথাবার্তা শোনা, স্পর্শ করা ইত্যাদি প্রসঙ্গক্রমে এগুলোর অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে।
পরবর্তী আয়াতে নারীদেরও একই নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তারাও যেন তাদের দৃষ্টি অবনত রাখে, তাদের গোপনাঙ্গ রক্ষা করে এবং নিজেকে ঢেকে রাখে’ (সূরা নূর-৩১)।
পবিত্র কুরআনের একপর্যায়ে আখিরাতের সাফল্যেও যোগ্য ব্যক্তিদের গুণাবলি বর্ণনা করা হয়েছে। যার একটি হলো, ‘আর যারা নিজেদের যৌনাঙ্গকে সংযত রাখে। তবে তাদের স্ত্রী ও মালিকানাভুক্ত দাসীদের ক্ষেত্রে সংযত না রাখলে তারা তিরস্কৃত হবে না। অতঃপর কেউ এদের ছাড়া অন্যকে কামনা করলে তারা সীমালঙ্ঘনকারী হবে’ (সূরা আল-মুমিনুন : ৫-৭)। এসব আয়াতে বিশ্ববাসীর জন্য যে নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে গোপনাঙ্গের সুরক্ষা।
আল্লাহ তায়ালা মুমিন ও মুসলিম নর-নারী সম্পর্কে বলেছেন, যারা অন্যান্য গুণাবলির মধ্যে গোপনাঙ্গের হেফাজত করে, ‘তাদের জন্য আল্লাহ প্রস্তুত রেখেছেন ক্ষমা ও মহাপুরস্কার’ (সূরা আল-আহজাব-৩৫)।
একটি হাদিসে রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমাকে তার জিহ্বা ও গোপনাঙ্গের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিবে, আমি তার জান্নাতের জিম্মাদার’ (বুখারি-৬৪৭৪)।
হাদিসে বর্ণিত এই তাৎপর্যপূর্ণ বক্তব্য বর্তমান প্রেক্ষাপটে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বর্তমান সমাজের বাস্তবতা হচ্ছে, দুনিয়ার যত গোনাহ, মারামারি, কাটাকাটি, দাঙ্গা-হাঙ্গামা, জেল-জুলুম, খুন-খারাবি, নারী-নির্যাতন, বেহায়াপনা, অশ্লীলতা থেকে শুরু করে যত ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়, তার প্রধান কারণ এ দু’টিই।
দুনিয়াতে মানুষ গোনাহের বড় অংশটি এই দুই অঙ্গ দ্বারা সম্পাদন করে। এ অবস্থায় যদি এ দুই অঙ্গের শক্তি নিয়ন্ত্রণ করা যায় কিংবা এগুলো দমন করা যায়, তা হলে নিয়ন্ত্রণ কিংবা দমন করা যাবে গোনাহের সব চাহিদা। ফলে মানুষ সব ধরনের পাপাচার থেকে বেঁচে থাকতে পারবে (তাফসিরে কাবির)।
কুরআন ও হাদিসের এসব কথা থেকে বোঝা যায়, বেহেশত গোপনাঙ্গের সুরক্ষার সাথে গ্যারান্টিযুক্ত, তবে এটিকে রক্ষা না করা অশ্লীলতা পর্নোগ্রাফি ও ব্যভিচার। ইসলামী শরিয়তে এগুলো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ও হারাম। মুমিনের একটি গুণ উল্লেখ করে রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘সে অশ্লীলতা করে না’ (তিরমিজি-১৯৭৭)।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে নেককার মুমিনদের গুণাবলি অবলম্বন করার, অশ্লীলতা পরিহার এবং গোপনাঙ্গ রক্ষা করার তাওফিক দান করুন। আমীন।
লেখক : শিক্ষার্থী, আল মারকাজুল ইসলামী (এএমআই) বাংলাদেশ