রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ১২:৪৪ অপরাহ্ন

সরকার পতনের আন্দোলনের ডাক

ইকবাল হোসেন:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১১ আগস্ট, ২০২২

জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিএনপির সমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত
বাংলাদেশে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে ঢাকায় আয়োজিত এক সমাবেশ থেকে বিরোধী দল বিএনপি নেতারা সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবী করেছেন। তা না হলে সরকার পতনের চূড়ান্ত আন্দোলনের ঘোষণা হবে বলে জানিয়েছেন। সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আরও বক্তব্য দেবেন স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যানসহ সিনিয়র নেতারা। সভাপতিত্ব করেন মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম। তারা বলেছেন সরকার তাদের দাবিতে কান না দিলে বিএনপি রাস্তায় জোরদার আন্দোলন শুরু করবে। বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার ভাষণে মানুষকে রাজপথ দখলের আন্দোলনে শরিক হওয়ার আহ্বান জানান। এখন লড়াই রাজপথ দখলের … রাজপথেই দাবী আদায়ের আন্দোলনের ফয়সালা হবে। তবে এই মুহূর্তে হরতাল বা অবরোধের মত কোনো কর্মসূচি নেওয়ার সম্ভাবনা নাকচ করেছেন বিএনপি মহাসচিব।
সমাবেশে তার ভাষণের আগে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে হরতাল অবরোধের মত কর্মসূচির কথা বিএনপি ভাবছে না। মানুষকে সম্পৃক্ত করা যায় এমন কর্মসূচীর কথা আমারা ভাবছি। এই মুহূর্তে হরতাল অবরোধের মত কর্মসূচির কথা বিএনপি ভাবছে না। মানুষকে সম্পৃক্ত করা যায় এমন কর্মসূচীর কথা আমারা ভাবছি – বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন।
ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের মনিটরিংয়ের জন্য সরকার ইরান থেকে ড্রোন কিনে তা বিএনপির সমাবেশে ওড়াচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে খবরে দেখলাম সরকার ইরান থেকে ২১টি ড্রোন আমদানি করেছে। তারা বলেছে, ভাসানচর মনিটরিংয়ের জন্য ড্রোন কেনা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সেখানে গিয়েছিলেন, ড্রোন চালানোও দেখেছেন। কিন্তু সেই ড্রোন এখন বিএনপির সমাবেশের ওপর ওড়ানো হচ্ছে। যারা গণতন্ত্র চান, তাদেরকে মনিটর করা হচ্ছে।’
ফখরুল বলেন, ‘ড্রোনের নাম শুনলে আমরা খুব ভয় পাই। কেন ভয় পাই, আমরা দেখি ড্রোন দিয়ে কীভাবে অন্য দেশে গিয়ে বিভিন্ন নেতাদেরকে হত্যা করা হচ্ছে। আমরা দেখি, গণতন্ত্রের জন্য যারা লড়াই করছেন, তাদেরকে ড্রোন দিয়ে কৌশলে হত্যা করা হচ্ছে।’
গতকাল বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে ফখরুল এসব কথা বলেন। জ্বালানি অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি, নজিরবিহীন লোডশেডিং, গণপরিবহনের ভাড়া বাড়ানো, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও ভোলায় পুলিশের গুলিতে ছাত্রদল নেতা নুরে আলম ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আব্দুর রহিম নিহত হওয়ার প্রতিবাদে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। দলীয় কর্মসূচিতে ড্রোন উড়িয়ে মনিটর করার তীব্র সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যখন ড্রোনের দিকে আমাদের কর্মীরা তাকাচ্ছিলেন, তখন ড্রোন ওড়ানোর সঙ্গে জড়িতদের আমি বলেছি, এটা তো বেআইনি। তারা আমাকে জানালেন, পাঁচ পাউন্ডের নিচে ড্রোন চালাতে অনুমতি লাগে না।’
আওয়ামী লীগ অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘তাদের সঙ্গে আমি একমত যারা আওয়ামী লীগকে ফোর টোয়েন্টি পার্টি বলে থাকেন। আমি শুধু তাদের সঙ্গে এতটুকু যোগ করতে চাই, আওয়ামী লীগ প্রতারকের দল, এ সরকারও প্রতারকদের সরকার।’ বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘শেখ হাসিনা বলেছে ১০ টাকা কেজি চাল দেবো, বিনামূল্যে সার দেবো, ঘরে ঘরে চাকরি দেবো, এখন জনগণ দেখছে সব মিথ্যা। উল্টো আওয়ামী লীগ দেশে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দিয়েছে। সাংবাদিকরা লিখতে পারছেন না। বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করেছে, সংবিধানকে ধ্বংস করে দিয়েছে। গ্রহণযোগ্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে বাতিল করেছে। পুলিশকে আওয়ামী লীগের দলীয় বাহিনী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।’
ফখরুল বলেন, ‘জ্বালানির দাম বাড়ানোয় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গরিব মানুষ। তাদের ব্যয় বেড়ে গেছে। আওয়ামী লীগ সমুদ্র থেকে গ্যাস উত্তোলন না করে কুইক রেন্টালে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে নিজের লোক দিয়ে টাকা লুটপাট করেছে।’ অবৈধ সরকারকে হঠাতে ছাত্র, তরুণ, যুবকদের জেগে ওঠার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ দেশকে আবার স্বাধীন করতে হবে। এ লড়াইয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে সবাইকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। রাজপথ দখল করতে হবে, সংসদ ভেঙে দিতে হবে, সরকারকে পদত্যাগ করাতে হবে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।’ সমাবেশ থেকে আগামী ২২ আগস্ট থেকে দেশের সব মহানগর, জেলা, উপজেলা ও গ্রাম পর্যায়ে সমাবেশের ঘোষণা দেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সমাবেশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘পৃথিবীর কোথাও এক লাফে এত জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির নজির নেই। বিপিসি ৮ বছরে আয় করেছে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। আর লোকসান করেছে মাত্র আট হাজার কোটি টাকা। অথচ কুইক রেন্টালে বিদ্যুৎ উৎপাদনের নামে সরকার ভর্তুকি দিয়ে দেশের রিজার্ভ খেয়ে ফেলছে।’
তিনি বলেন, ‘পাচারের টাকা সরকারের দেশে আনতে চায় না। সুইস ব্যাংকের কাছে টাকা পাচারের তথ্যও চায় না। কারণ এ সরকার জানে পাচারকারীরা সব আওয়ামী লীগের লোক। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘দেশটাকে আওয়ামী লীগ দেউলিয়া করে দিয়েছে। দেশের টাকা পাচার করেছে, আরও করছে।’ সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান, বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, শামসুজ্জামান দুদু, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, নিতাই রায় চৌধুরী, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আফরোজা রিতা, আমান উল্লাহ আমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ ইমরান সালের প্রিন্স, শামা ওবায়েদ, যুবদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস, ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ প্রমুখ। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে সমাবেশ সঞ্চালনা করেন দক্ষিণের সদস্যসচিব রফিকুল আলম মজনু ও উত্তরের সদস্যসচিব আমিনুল হক।
আমাদের সংবাদাদাতা বলছেন, সমাবেশে যোগ দিতে আসা অনেক মানুষ তাকে বলেছেন তারা দলের কাছ থেকে সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর কর্মসূচি চান। জ্বলানি তেল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে রাজধানীর পর আগামি কদিনে বিএনপি জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে বিক্ষোভ-সমাবেশ করবে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে যোগ দিতে কয়েক হাজার নেতাকর্মী নয়াপল্টনে উপস্থিত হয়েছেন। কিছুক্ষণ পরপরই আসছে মিছিল। আজ গতকার বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার পরে সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল থেকেই নেতাকর্মীরা নয়াপল্টনে আসা শুরু করেন। দুপুর একটা নাগাদ নয়াপল্টন দলীয় কার্যালয়ের সামনে নেতাকর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। ইতোমধ্যে নাইটিংগেল মোড় থেকে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত দুই পাশের রাস্তা দখলে নিয়েছে নেতাকর্মীরা। এ কারণে নয়াপল্টনের দুই পাশের রাস্তায় সব ধরণের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, সরকারের দমনপীড়নের প্রতিবাদে বিএনপির ডাকা দুই দিনের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির এটি প্রথম। এ সমাবেশটি হবে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে। সমাবেশে লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হবে বলে জানিয়েছেন নেতারা। দুপুর ২টায় এ সমাবেশের কাজ শুরু রয়েছে। কোন ধরণের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মানিকগঞ্জ থেকে বিএনপি’র ভাড়া করা অর্ধশত গাড়ি যেতে পারেনি ঢাকায়: ঢাকায় বিএনপির সমাবেশে যোগ দিতে পারছেনা মানিকগঞ্জের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী। সমাবেশে যোগ দেয়ার জন্য প্রায় অর্ধশত গাড়ি ভাড়া করেছিল জেলা নেতৃবৃন্দ। কিন্তু শ্রমিক লীগের এক নেতা যানবাহন মালিকদের হুমকি-ধামকি দেয়ার কারণে ভাড়াকৃত গাড়িগুলো ঢাকা যাচ্ছে না। যার কারণে রাতেই মানিকগঞ্জ থেকে অনেক দলীয় নেতাকর্মীরা বিচ্ছিন্নভাবে ঢাকার সমাবেশে যোগ দিচ্ছেন।
মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সত্যেন কান্ত পন্ডিত ভজন মানবজমিনকে বলেন, ঢাকায় বিএনপির সমাবেশে যোগ দিতে মানিকগঞ্জ থেকে জেলা বিএনপি’র সংগ্রামী সভাপতি আফরোজা খানের নেতৃত্বে কমপক্ষে পাঁচ হাজার দলীয় নেতা-কর্মীর যোগ দেয়ার কথা ছিল। তার জন্য মানিকগঞ্জ জেলা থেকে প্রায় অর্ধশত গাড়ি ভাড়া করা হয়। বুধবার রাতে হঠাৎ শ্রমিক লীগ নেতৃবৃন্দ যানবাহন শ্রমিক এবং মালিকদের ঢাকার সমাবেশে গাড়ি না যাওয়ার জন্য হুমকি ধামকি দেয়। যার কারণে আমরা গাড়িগুলো পাইনি। তারা ভাড়াকৃত গাড়িগুলোর এডভান্স এর টাকা ফেরত দেয়। সত্যেন কান্ত পন্ডিত ভজন আরো বলেন, মানিকগঞ্জ থেকে বিএনপির সমাবেশে যোগ দেয়ার গাড়িগুলো বন্ধ করে দিলেও প্রায় দুই থেকে আড়াই হাজার নেতাকর্মী বিচ্ছিন্নভাবে সমাবেশে যোগ দিচ্ছে। গাড়ি বন্ধ করে এবং হুমকি-ধামকি দিয়ে বিএনপির সমাবেশ আটকানো যাবে না বলে তিনি জানান।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com