বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৫১ অপরাহ্ন

জনগণের স্বার্থকে গুরুত্ব দিন

খবরপত্র ডেস্ক :
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১২ আগস্ট, ২০২২

জ্বালানি বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, জ্বালানি তেলের এতটা মূল্যবৃদ্ধির কোনো যৌক্তিক কারণ তারা দেখছেন না। আর্থিক খাতের বিশ্লেষকরা বলছেন, অর্থনীতির চাপ সামলানোর জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা ‘আইএমএফ’-এর কাছ থেকে প্রত্যাশিত ৪৫০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ নেওয়ার সঙ্গে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সম্পর্ক থাকতে পারে। কারণ, আইএমএফের ঋণের শর্তের মধ্যে অন্যতম হলো জ্বালানি খাতে ভর্তুকি প্রত্যাহার করা। খেয়াল করা দরকার, সব মিলিয়ে বছরে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের বিক্রি করা মোট জ্বালানি তেলের ৬৫ শতাংশই ব্যবহার করে পরিবহন খাত। এরপর সবচেয়ে বেশি ১৬ শতাংশ ব্যবহৃত হয় কৃষি খাতে। আর শিল্প খাতে ৭ শতাংশ এবং বিদ্যুৎ খাতে ১০ শতাংশ তেল ব্যবহৃত হয়। স্মরণ করা দরকার গত জুনেই গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে বিইআরসি। ঢাকা ওয়াসা গত জুলাইয়ে পানির দাম ৫ শতাংশ বাড়িয়েছে, যা সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হবে। এদিকে কৃষি মন্ত্রণালয় গত সপ্তাহে ইউরিয়া সারের দাম প্রায় ৩৮ শতাংশ বা কেজিপ্রতি ৬ টাকা বাড়িয়েছে। এই বাস্তবতায় সব ধরনের কৃষি ও শিল্প পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়বে।
আমরা মনে করি, অনিবার্যভবেই অতিরিক্ত দামের বোঝাও সাধারণ মানুষের কাঁধেই চাপবে। এই পরিস্থিতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও সাধারণ মানুষের সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে সরকারের উচিত হবে জ্বালানির দাম পুনর্বিবেচনা করা। পাশাপাশি জ্বালানি খাতের সংকট সমাধানে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ও কোম্পানিগুলোকে কঠোর নজরদারির মধ্যে এনে লোকসান কমানোর কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। দুঃখজনক হলেও এ কথাই বারবার সত্যি হয়ে চলেছে। আর্থিক খাত তছনছ করে দিয়ে লাখো কোটি টাকার ঋণখেলাপি হয়ে যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নতুন গভর্নর আসেন। নজিরবিহীন ছাড় দিয়ে ঋণখেলাপিদের নতুন করে ঋণ নেওয়ার সুযোগ করে দেন। আর্থিক খাতের পুনরুদ্ধার হয় না। দেশ থেকে পাচার হওয়া হাজার হাজার কোটি টাকা ফেরত আনার কোনো উদ্যোগ দেখা যায় না। আমরা রিজার্ভ কমে যাওয়া আর ডলারের সংকটের কথা শুনি। আর বাজারে আগুন লাগিয়ে দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকে। আমরা জ্বালানি খাতে বড় বড় পুকুরচুরির খবর, তথাকথিত সিস্টেম লসের কথা শুনি। কোনো প্রতিকার পাওয়া যায় না। এবার স্মরণকালের মধ্যে এক লাফে সবচেয়ে বেশি বাড়িয়ে দেওয়া হলো ডিজেল, পেট্রল, অকটেনের দাম। জ্বালানির দাম বাড়ালে তা যে শিল্প, কৃষি ও পরিবহন খাতের সব ক্ষেত্রেই মারাত্মক প্রভাব ফেলবে আর তা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে যেতে পারে সেটা সরকারের অজানা নয়। কিন্তু তবুও সরকার অন্য কোনো সমাধানের দিকে না গিয়ে এই বোঝাও মানুষের কাঁধেই চাপিয়ে দিল। প্রশ্ন উঠছে জ্বালানির এই চাপ সয়ে সাধারণ মানুষ কীভাবে টিকে থাকবে?
খেয়াল করা দরকার, শুক্রবার রাতে সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা আসার পরপরই গণপরিবহন থেকে শুরু করে কাঁচা বাজার পর্যন্ত সবখানে রাতারাতিই তার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। শনিবার সারা দিন রাজধানী ঢাকার রাজপথে ছিল পরিবহনের সংকট। চট্টগ্রামে পরিবহন ব্যাবসায়ীরা ধর্মঘটের মতোই হাত-পা গুটিয়ে বসেছিলেন। রাস্তায় পাওয়া যায়নি কোনো গণপরিবহন। উত্তরাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল কিংবা দক্ষিণাঞ্চলের গন্তব্যগুলোতে বাস ছেড়েছে যাত্রীদের কাছ থেকে দেড়গুণ দ্বিগুণ ভাড়া নিয়ে। এটা স্পষ্ট যে আগে থেকে ঘোষণা না দিয়ে আকস্মিকভাবে নতুন দাম কার্যকর করার কারণেই এমনটা হয়েছে। কিন্তু এই বিশৃঙ্খলার দায় কে নেবে? সরকার ডিজেল ও কেরোসিনের লিটারপ্রতি দাম বাড়িয়েছে ৩৪ টাকা। আর পেট্রলে ৪৪ এবং অকটেনে বাড়িয়েছে ৪৬ টাকা। অর্থাৎ এখন থেকে ডিজেলের দাম হবে প্রতি লিটার ১১৪ টাকা, যা এত দিন ৮০ টাকা ছিল। কেরোসিনের নতুন দামও ডিজেলের সমান, অর্থাৎ ১১৪ টাকা। পেট্রলের নতুন দাম প্রতি লিটার ১৩০ টাকা, যা এত দিন ৮৬ টাকা ছিল। আর অকটেনের দাম আগের ৮৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১৩৫ টাকা। সরকার জানিয়েছে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয়, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের লোকসান কমানো আর পাচার হওয়ার আশঙ্কা দূর করতেই জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। এটা ঠিক যে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত বিপিসি লোকসান করেছে ৮ হাজার ১৪ কোটি টাকার ওপরে। উল্লেখ্য যে, এই সময়টাতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানির দাম ছিল ঊর্ধ্বমুখী। কিন্তু সরকার তখন লোকসান দিয়ে এমন এক সময়ে জ্বালানির দাম বাড়িয়ে দিল যখন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বিশ^বাজারে সবচেয়ে নিচে নেমে এসেছে জ্বালানির দাম। সংগত কারণেই জ্বালানি তেলের এই বিপুল ও আকস্মিক মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। আমরা মনে করি, দেশের জনগণের স্বার্থ বিবেচনা করে সরকারের উচিত এই গণ স্বার্থবিরোধী সিদ্ধান্ত পুনঃবিচেনা করা।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com