কাজকর্ম কিছু না করায় সংসার চালানো ছিল বেশ মুশকিল। এলাকায় দায়দেনার পরিমাণও বাড়ছিলো। ঋণগ্রস্ত আব্দুস সামাদ (৩৮) তাই কোনো উপায় না পেয়ে ছিনতাইকাজের পথ বেছে নেন। তিনি আদৌ পেশাদার ছিনতাইকারী হোন বা না হোন, তার ছুরিকাঘাতেই নিহত হলেন ব্যবসায়ী শরীফ। ঘটনা গত বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) দিনগত রাত পৌনে ১টার দিকের। রাজধানীর উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের সোনারগাঁও জনপথ সড়কের দুই নম্বর বাড়ির নিচে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথ। ওই বুথে টাকা তুলতে গিয়েই ছিনতাইকারী সামাদের উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে নিহত হন স্থানীয় টাইলস ব্যবসায়ী শরীফ উল্লাহ (৪৪)।
এ ঘটনায় গ্রেফতার হওয়ার পর এরই মধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন আব্দুস সামাদ। গত শুক্রবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শহিদুল ইসলাম আসামির হত্যাকা-ের দায় স্বীকারমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেন। সে জবানবন্দি পর্যালোচনা করে জাগো নিউজ। জবানবন্দিতে হত্যার দায় স্বীকার করে আব্দুস সামাদ আদালতকে এ-ও বলেছেন, আর্থিক অভাব-অনটনে পড়ে তিনি ছিনতাইয়ের পথ বেছে নেন। নেত্রকোনার পূর্বধলার বিশকাকলী এলাকার আবদুল হামিদের ছেলে আব্দুস সামাদ। গাজীপুরের পুবাইলের বসুগাঁও গ্রামে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে থাকতেন ভাড়া বাসায়। তার একটি সন্তান প্রতিবন্ধী।
ঘটনার রাতে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ওই এটিএম বুথে সিকিউরিটি গার্ডের দায়িত্বে থাকা শাফিয়ার রহমান জাগো নিউজকে বলেন, বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) রাত ১২টা ৪৫ মিনিটে সাদা রঙের একটি প্রাইভেটকার বুথের সামনে এসে থামে। গাড়ি থেকে নেমে সঙ্গে থাকা বন্ধুদের বিদায় দিয়ে এটিএম বুথে ঢোকেন ব্যবসায়ী শরীফ। এর কিছুক্ষণ পরই রিকশা থেকে নেমে এক ব্যক্তি (সামাদ) হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসেন বুথে ঢুকতে। তিনি (সিকিউরিটি গার্ড) বাধা দিলে তাকে ধাক্কা দিয়ে সামাদ বুথের ভেতরে ঢুকে যান।
সিকিউরিটি গার্ডের বর্ণনায়, এরপর ওই ব্যক্তি শরীফের ঘাড়ে ছুরি ধরেন এবং টাকা চান। এসময় তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তিও হয়। তা দেখে সিকিউরিটি গার্ড বুথের পাশে সেক্টরের সিকিউরিটিদের ডাকতে যান। তারা এসে বুথের ভেতরে মারাত্মক জখম অবস্থায় শরীফের রক্তাক্ত দেহ মাটিতে লুটিয়ে পড়ে থাকতে দেখতে পান। এসময় হত্যাকারী বুথ থেকে বের হয়ে পাশের একটি খুঁটির নিচে রক্তাক্ত ছুরি ফেলে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে সিকিউরিটি গার্ড ও স্থানীয় জনগণ তাকে ধরে ফেলেন। পরে তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
তার আর্থিক অভাব-অনটনের বিষয়টি কতটুকু সত্যি তা যাচাই করতে সামাদের পরিচিত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে। তাদের মধ্যে ফারহানা নামের সামাদের ঘনিষ্ঠ এক নারী বলেন, সামাদ পেশাদার ছিনতাইকারী বা অপরাধী নন। তার দুটি সন্তান আছে। একজন প্রতিবন্ধী। প্রতিবন্ধী সন্তানের চিকিৎসা খরচ, সংসারের অভাব-অনটন নিয়ে মানসিক বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলেন সামাদ।
ফারহানার কথায়, পারিবারিক ব্যয় ও ওষুধের খরচসহ নানা বিষয় নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া করে হয়তো তিনি এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। সম্প্রতি কাজ না থাকায় ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন সামাদ। সোজা কথায়, অভাবে পড়ে তিনি এ কাজে নামেন। পুলিশও তার কোনো ছিনতাইয়ের পূর্ব রেকর্ড পায়নি। ফারহানার বক্তব্যের সঙ্গে আদালতে দেওয়া সামাদের স্বীকারোক্তিরও মিল পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন বলেন, ঘটনাস্থল থেকে রক্তমাখা আট হাজার টাকা ও একটি ছুরি জব্দ করা হয়েছে। ছিনতাইকারী কোনো টাকা নিতে পারেননি।
তিনি বলেন, গ্রেফতার ছিনতাইকারী আবদুস সামাদ ঘটনার বিষয়ে শুক্রবার (১২ আগস্ট) আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। জবানিতে হত্যার দায় স্বীকার করে আসামি আদালতের কাছে বলেছেন, আর্থিক অভাব-অনটনে পড়ে ছিনতাই করতে উত্তরার এটিএম বুথে গিয়েছিলেন তিনি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিহত শরীফ উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরে একটি টাইলসের দোকান পরিচালনা করতেন। ওই ব্যবসার টাকা লেনদেন করতেন ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে। মামলার বাদী নিহত শরীফের বড় ভাই আনোয়ার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, আমার ভাইয়ের সন্তানরা এতিম হয়ে গেলো। মানুষের জীবনের কি কোনো মূল্য নেই? কীভাবে এ দেশে আমরা ব্যবসা-বাণিজ্য করবো? জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের সহযোগিতার পাশাপাশি ভাই হত্যায় জড়িত ব্যক্তির সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন তিনি।