মাকে গুলি করে হত্যাকরে পালিয়ে যাওয়া বখাটে ছেলে মাঈনুল কে হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র সহ গ্রেফতার করেছে র্যাব-৭। গত ১৭ আগস্ট চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ব্রীজ এলাকায় ঢাকা গামী একটি বাস থেকে র্যাব -৭ তাকে গ্রেফতার করেছে। গতকাল দুপুরে র্যাব-৭ এর চট্টগ্রামের চাঁদগাঁও কার্যালয়ে অধিনায়ক লে: কর্ণেল এম এ ইউসুফ পিএসসি প্রেস ব্রিফিং এ এই তথ্য জানান। তিনি আরও জানান, মাঈনুলের দেয়া তথ্য অনুযায়ী সাতকানিয়া রসুলাবাদ এলাকার একটি গোডাউন থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র টি উদ্ধার করা হয়।এর আগে বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তি ও টাকার জন্য চট্টগ্রামের পটিয়ায় ছেলের গুলিতে মায়ের মৃত্যুর ঘটনায় ছেলে মাঈনুদ্দীন মো. মাঈনুকে(২৯) আসামি করে হত্যা মামলা করা হয়। গত মঙ্গলবার রাতে অভিযুক্ত মাঈনুলের বড় বোন শায়লা শারমিন নিপা বাদী হয়ে পটিয়া থানায় মামলাটি দায়ের করেছেন। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন পটিয়া থানার পরিদর্শক (ওসি) রেজাউল করিম মজুমদার। তিনি জানান, জাপা নেতা ও পটিয়া পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান সামশুল আলম মাস্টারের স্ত্রী জেসমিন আকতারকে খুনের ঘটনায় ছেলে মাইনুলকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত মাঈনুল পলাতক ছিলেন। এদিকে গত মঙ্গলবার দুপুরে পটিয়া পৌর সদরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সবজার পাড়ার নিজ বাড়িতে সন্তানের গুলিতে নিহত হন পটিয়া পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান শামসুল আলম মাস্টারের স্ত্রী জেসমিন আকতার(৫৫)। নিহতের স্বজন ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ১৩ জুলাই সামশুল আলম মাস্টার মারা যাওয়ার পর সম্পত্তি ও ব্যাংকে জমাকৃত টাকা নিয়ে তাদের মা–ছেলে ও একমাত্র বোনের সঙ্গে ঝামেলা শুরু হয়। মাঈনুল দুই মাস আগে পরিবারকে না জানিয়ে বিয়ে করে। এ নিয়েও মা ও বোনের সঙ্গে মনোমালিন্য ছিল মাঈনুলের। মামলার অভিযুক্ত মাঈনুলের বড় বোন শায়লা শারমিন নিপা বলেন, আমার প্রয়াত বাবা মারা যাওয়ার পর আমরা ২ ভাই ১ বোন ও আমার মাকে রেখে যান। আমি ও আমার ছোট ভাই মাশফীকুল আলম মাশফী অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করি। গত রোজার ঈদে আমরা দেশে আসি। ২৭ জুলাই আমরা অস্ট্রেলিয়ায় ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পারিবারিক কারণে ফ্লাইট বাতিল করি। তবে আমার ছোট ভাই মাশফীর স্কুল শুরু হওয়ায় সে গত ৪ আগস্ট একা অস্ট্রেলিয়ায় চলে যায়। আমার অপর ভাই মাঈনুদ্দিন মো. মাঈনু দীর্ঘ দিন ধরে উচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপন করে আসছে। বাবা মারা যাওয়ার পর মাঈনু আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। আমার মৃত বাবার রেখে যাওয়া সম্পত্তি ও ব্যাংকে জমাকৃত ১৬ লাখ টাকা এককভাবে ভোগদখল করতে তার নব বিবাহিতা স্ত্রী আসিফা সুলতানারও লোলুপ দৃষ্টি পড়ে। নিপা আরও বলেন, আমার বাবা ব্র্যাক ব্যাংক ও জনতা ব্যাংকে ১০ লাখ ও ৩ লাখ টাকা জমা রেখেছিল। তার মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংকের নমিনি আমি আর জনতা ব্যাংকের নমিনি আমার মা। মঙ্গলবার দুপুর বারোটার দিকে আমি ও আমার মা ব্যাংক গুলোতে বাবার জমাকৃত টাকা উত্তোলনের জন্য যায়। কিন্তু ব্যাংক গুলোতে টাকা উত্তোলনের প্রক্রিয়া শেষ না হওয়ায় আমরা বাড়িতে চলে আসি। আমরা দুপুর ১.২০ মিনিটের সময় বাড়িতে পৌঁছালে আমার ভাই মাঈনু তাকে ছাড়া আমরা কেন ব্যাংকে গেলাম এ কারণে আমাদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে তার কোমরে থাকা পিস্তল বের করে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করতে থাকে। ভাগ্যক্রমে প্রথম গুলিটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় আমি বেঁচে যাই। এ সময় আম্মাকে সামনে পাওয়ায় পরের গুলি তাঁকে করে। আম্মার ডান চোখের নিচে গুলি লাগলে সাথে সাথে তিনি ফ্লোরে লুটিয়ে পড়েন। এ অবস্থায় আমি চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসার সুযোগে মাঈনু পালিয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় আম্মাকে উদ্ধার করে প্রথমে পটিয়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। পটিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারিক রহমান জানান, আমরা এখন পর্যন্ত যা জানতে পেরেছি তাতে প্রাথমিকভাবে এটি পারিবারিক দ্বন্দ্বই মনে হচ্ছে। সামশুল আলম মাস্টার মারা যাওয়ার পর থেকে সম্পত্তি নিয়ে পারিবারিক কলহ শুরু হয়। সেটার রেশ ধরেই মা-ছেলের- বোনের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে মাকে গুলি করে হত্যা করে মাঈনুল। গুলি করার পরপরই মাঈনুল পালিয়ে যায়। মাইনুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রিমান্ডে এনে জিজ্ঞেসাবাদের পর জানা যাবে হত্যার আসল রহস্য। সেই সঙ্গে কার অস্ত্র দিয়ে হত্যা করা হয়েছে সেটিও জানা যাবে।এদিকে মঙ্গলবার নিহত জেসমিন আকতারের ঘরে পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে প্রথমে ১০ রাউন্ড কার্তুজ ও ব্যবহৃত গুলির খোসা এবং একটি অব্যবহৃত গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩টি কার্তুজ বৈধ। একই দিন রাতে পটিয়া পৌর সদরের বাস স্টেশনে জাতীয় পার্টির ও মাঈনুলের অফিসে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ১টি ৭.৫৬ মডেলের আধুনিক পিস্তল উদ্ধার করেছেন। এ ঘটনায় পটিয়া থানার উপ পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম হাজারি বাদী হয়ে অস্ত্র আইনে মাঈনুলের বিরুদ্ধে পৃথক আরও একটি মামলা দায়ের করেছেন। অপরদিকে নিহত জেসমিন আকতারের মরদেহ বুধবার দুপুরে চমেক হাসপাতালের মর্গে ময়না তদন্ত শেষে পটিয়া পৌর সদরের সবজার পাড়া বাড়িতে দুপুর ৩ টায় নিয়ে গেলে স্বজনের আহাজারিতে হৃদয় বিদারক পরিবেশ সৃষ্টি হয়। আসরের নামাজের পর সবজার পাড়া ঈদগাহে জানাজা শেষে সামশুল আলম মাষ্টারের পাশে তাকে দাফন করা হয়।