শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৯ অপরাহ্ন

গার্ডার ছিটকে পড়ে প্রাণহানি এমন অবহেলা কাম্য নয়

খবরপত্র ডেস্ক :
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৯ আগস্ট, ২০২২

রাজধানীর উত্তরায় নির্মাণাধীন বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের ক্রেন থেকে ১২০ টন ওজনের গার্ডার ছিটকে পড়ে সম্প্রতি প্রাইভেটকারের পাঁচ যাত্রী নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন: রিয়া আক্তারের শ্বশুর আইয়ুব আলী হোসেন রুবেল (৫৫), রিয়ার মা ফাহিমা আক্তার (৩৮), রিয়ার খালা ঝর্না আক্তার (২৭), ঝর্না আক্তারের দুই শিশুসন্তান জান্নাতুল (৬) ও জাকারিয়া (৪)। এ ঘটনায় প্রাথমিক তদন্তে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির বিষয়টি উঠে এসেছে।
দৈনিক খবরপত্রে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ্য করা হয়েছে,চার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী। গত মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) দুপুরে সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সম্মেলন কক্ষে প্রাথমিক তদন্তের বিষয়ে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেছেন,১৫ আগস্ট সরকারি ছুটি থাকায় বক্স গার্ডার সেগমেন্ট হস্তান্তর প্রকল্পের কোনো কাজ ছিল না। কাজ বন্ধ থাকার কথা। তারপরও ঠিকাদার কর্তৃক গার্ডার স্থানান্তর কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। একটি বক্স গার্ডার হস্তান্তরের পর দ্বিতীয়টি হস্তান্তরের সময় ঘটনাটি ঘটে। তার মতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অবহেলা এজন্য দায়ী। কারণ বন্ধের দিন কাজ করার কথা নয়। এটায় তাদের কোনো ওয়ার্ক প্ল্যান ছিল না। দ্বিতীয় কারণ- ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টের মধ্যে এই কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত ছিল না, ট্রাফিক পুলিশকে অবহিত করা হয়নি। যদিও তাদের উচিত ছিল ট্রাফিক পুলিশকে জানানো। তিন নাম্বার কারণ হলো, দুর্ঘটনাস্থলের একাংশ উঁচু এবং অপর অংশ নিচু ছিল। ফলে ক্রেনটি যখন কার্যক্রম পরিচালনা করছিল তখন তার একটি চেইন রাস্তার উঁচু অংশে এবং আরেকটি নিচু অংশে ছিল। ফলে ক্রেনটি ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। সে জন্য ক্রেনটি একপাশে উল্টে যায়। চতুর্থ কারণ হলো বিকেলের দিকে যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। সেগুলো গার্ডারের খুব কাছে চলে আসে। ক্রেন অপারেটর বিচলিত হয়ে হঠাৎ ব্রেক করলে দুর্ঘটনাটা ঘটে। আমরা পুলিশকে বলেছি ড্রাইভারকে যেখানে পাওয়া যায় গ্রেফতার করতে। তার কাছে প্রকৃত কারণ জানা যাবে। এ কাজ তারা আগেও করেছে, তারপরও কেন এটা ঘটলো!
আমরা বিভিন্ন সূত্রে জানতে পেরেছি,তদন্ত কমিটি বলছে চায়না গ্যাঝুবা গ্রুপ করপোরেশন (সিজিজিসি) ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ কাজটি করছিল। আগের দিন তাদের কনসালটেন্ট ওয়ার্কপ্ল্যান দেয়, ঐদিন সেটি করা হয়নি। সাব-ঠিকাদার নিয়োগও করেনি, নিজেদের ড্রাইভার দিয়ে কাজটি করিয়েছে। রোড সেফটি (সড়ক নিরাপত্তা) যেকোনো কনস্ট্রাকশন কাজের অন্যতম সেফগার্ড ইস্যু। এগুলো ছাড়া কোনো চুক্তি হয় না। চুক্তির মধ্যে ঠিকাদার নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য এবং পরিবেশগত ইস্যুগুলো নিশ্চিত করবে, তখনই সে কেবল তার কাজে যেতে পারবে। সেগুলো নিশ্চিত করছে কি না, সেটি যাচাই করার জন্য কনসালটেন্ট আছে, প্রজেক্ট পার্সনাল আছে। তারা যাচাই করে দেখবে সেফটি মেজারমেন্টগুলো ঠিক আছে কি না। যদি সেগুলো ঠিকমতো কাজ করে তাহলে সে কাজ করার অনুমতি পাবে, অন্যথায় পাবে না।
এছাড়া প্রকল্পের মধ্যে আলাদা প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টশন ইউনিট আছে। দাতা সংস্থা এডিবির (এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক) কনসালটেন্টও আছে। এডিবি সেগুলো মনিটরিং করে। এর আগে উত্তরায় বিআরটি প্রকল্পের ক্রেন দুর্ঘটনায় নিহতের ঘটনায় পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (আরবান ট্রান্সপোর্ট অনুবিভাগ) নীলিমা আখতারকে প্রধান করে এ কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটিকে একদিনের মধ্যে প্রাথমিক ও দুদিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা বলা হয়।
অবহেলাজনিত কারণে এবং দুর্ঘটনা প্রতিরোধের ব্যবস্থা না করে এমন নির্মাণ কাজের কারণে প্রাণহানির ঘটনা এটিই প্রথম নয়। ইতিপেূর্বেও এমন একাধিক ঘটনা ঘটছে, তদন্ত কমিটি হয়েছে। রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে এবং হয়নি। কিন্তু দুর্ঘটনা বন্ধ হচ্ছে না। এই দায় সরকারের সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ এড়াতে পারে না। আমরা মনে করি সংশ্লিষ্ট সবার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা সারা সচেতনা সৃষ্টি হবে না, গাফলতিও দূর হবে না। তাই আইনের কঠোর প্রয়োগ এবং মনিটরিং বাড়াতে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। আমরা আর এমন নির্মম মৃত্যু দেখতে চাই না।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com