শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:২০ অপরাহ্ন

বিশ্বমাঝে শীর্ষ হব প্রেরণার প্রদীপ্ত মশাল

আবদুল হালীম খাঁ
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ১৯ আগস্ট, ২০২২

ড. আহসান হাবীব ইমরোজ এর ‘বিশ্বমাঝে শীর্ষ হব’ বইটি সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে। এটি পড়ার আগে তার সাড়া জাগানো ও বহুল প্রচারিত বই ‘মোরা বড় হতে চাই’ পড়েছিলাম। দু’টি বই এর মূল ভাব প্রায় একই বলা যায়। আর তা হলো আমাদের ছাত্র-ছাত্রী ও তরুণদের মনে উচ্চ আশা কর্ম উদ্দীপনা আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তোলা, তাদেরকে পরিশ্রম ও সাধনা করে জীবন সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়া। ছাত্র-ছাত্রীরাই আমাদের ভবিষ্যতের আশা ও সম্পদ। তারা জাগলে দেশ জাগবে, তারা উন্নতি করলে দেশ উন্নত হবে। তরুণ সমাজই দেশ ও জাতির কা-ারি। তাই তাদের জীবন উন্নত করে গড়ে তোলার জন্য ড. আহসান হাবীব ইমরোজ অশেষ আশা উৎসাহ ও প্রেরণা দিয়ে লিখেছেনÑ ‘বিশ্ব মাঝে শীর্ষ হব’ বইটি। এই বই লিখে তিনি জাতীয় দায়িত্ব পালন করেছেন। আমাদের জীবন কোন না কোন পরিণতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এই পরিণতি হতে পারে জীবনের অনুকূলে অথবা জীবনের প্রতিকূলে সার্থকতা বা ব্যর্থতা বা মাঝামাঝি কোন অবস্থার মধ্যদিয়ে এগুতে এগুতে যবনিকা নেমে আসে। কিন্তু ব্যর্থ জীবনের গুরুভার খুবই দুর্বিষহ। ধুঁকতে ধুঁকতে আর জ্বলতে জ্বলতে জীবনের সুখ-শান্তি এসব থেকে বঞ্চিত থেকেই এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হয়। জীবনের কাছে মার খেতে খেতে শেষ হয়ে যাবার জন্যই পৃথিবীতে আসা নয়। পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না। কোমর বেঁধে জীবন সংগ্রামে নামতে হবে। তবেই নিজের অস্তিত্ব টিকে থাকবে, সমাজে উন্নতি ও মর্যাদা লাভ করা সম্ভব হবে। যে সমাজে জন্মগ্রহণ করে লালিত পালিত হলাম সে সমাজকে কিছু দিয়ে ঋণ শোধ করতে হবে না? ড. আহসান হাবীব ইমরোজ এই জীবন দর্শনে চিন্তাশীল একজন লেখক। এ জন্যই তিনি তার বইটি নাম দিয়েছেন ‘বিশ্ব মাঝে শীর্ষ হব’।
বইটির শেষে এক চিলতে লেখক পরিচিতি রয়েছে। ড. আহসান হাবীব ইমরোজ-এর জন্ম টাঙ্গাইল জেলার এক শিক্ষক পরিবারে। লেখাপড়ায় হাতেখড়ি নিজ এলাকায়। পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স মাস্টার্স সম্পন্ন করেন এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। কর্মজীবনে তিনি ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি চিটাগাং এবং ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়ান ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
রাজনীতি বিজ্ঞানের ছাত্র হয়েও সাহিত্য, ক্যারিয়ার ও দক্ষতা উন্নয়নমূলক কাজেই তার মনোযোগ বেশি। শিশু-কিশোরদের নিয়ে লিখেছেন সাড়া জাগানো বই ‘মোরা বড় হতে চাই’ যা লাখো তরুণ হৃদয়কে পড়ালেখা ও জীবন গঠনে উৎসাহিত করে চলেছে।’
ড. ইমরোজ দেশের বিভিন্ন জাতীয় পত্রপত্রিকায় নিয়মিত লিখছেন। তিনি অনেক জনকল্যাণমূলক কাজের সঙ্গে জড়িত। তিনি একজন সুবক্তাও। লেখক ‘বোকা লেখকের বিবিধ বচন’ হেডিং দিয়ে চমৎকার ভূমিকা লিখেছেনÑ যা এখানে উল্লেখ করার মতো। তার লাইট হাউস স্কুলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির ভাষণ তুলে ধরেছেন : ‘আমি প্রধান অতিথি নই, বরং একজন অভিভাবক হিসেবে এখানে এসেছি আমার সন্তানদের এই স্কুলে ভর্তি করতে চাই, যাতে কখনও তারা ডাক্তার হতে না পারে, কখনো ইঞ্জিনিয়ার হতে ইচ্ছে না করে।’ সবাই বিস্মিত হয়ে বিস্ফোরিত নয়নে প্রধান অতিথিকে পরখ করছে। আহ্্, মাথাটা ঠিক আছে তো ব্যাটার?… একটু পরেই নিজ বক্তব্যের ধোঁয়াশা দূর করে আলোর প্লাবন ছোটালেন। তিনি বললেন, আমাদের দেশের অভিভাবকদের সর্বোচ্চ টার্গেট ছেলেমেয়েদের ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হবে এই তো! কিন্তু কেউ সাহস করে এই স্বপ্ন দেখে না যে আমাদের ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে ইবনেসিনা, আল ফারাবি, আল বাত্তালি, আল খাওয়ারিজম কিংবা আল কিন্দি হবে। যাদের লিখিত বই পড়ে মানুষ ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার কিংবা প্রফেসর হবে।’ হতভম্ব অভিভাবকরা তন্ময়তার ¯্রােত ঠেলে ভাবছেÑ সত্যি। এভাবেও চিন্তা করা যায়?
এই ভূমিকা পাঠ করলে মন বইয়ের ভেতরের দিকে অবশ্যই যাবে পাঠকদের। সাধারণ বই পাঠে এক পর্যায়ে মনে ক্লান্তি আসে, চোখে ঘুম আসে। আমার মনে হয় ‘বিশ্ব মাঝে শীর্ষ হব’ পাঠে পাঠক মনে ক্লান্তি আসবে না, চোখে ঘুমও আসবে না। কারণ বইটির পাতায় পাতায় চেতনার বারুদ ভরা এবং নতুন নতুন চিন্তার দিগন্তের পর্দা উন্মোচন করা হয়েছে। সবই জগত তাক লাগানো চমকপ্রদ। বিষয়গুলো একটির পর আরেকটি পাঠককে সামনের দিকে টেনে নেয় এবং মনে জানার আগ্রহ জাগিয়ে তোলে। যেমন কিভাবে প্রতিভাবান হওয়া যায়? কথায় বলে সবুরে মেওয়া ফলে। তার মানে এই নয়, হাত গুটিয়ে বসে থাকলে প্রতিভার বিকাশ ঘটবে। বিশিষ্ট দার্শনিক ভলতেয়ার বলেছেন, প্রতিভা বলতে কিছু নেই। পরিশ্রম ও সাধনা করে যে কেউ প্রতিভাবান হতে পারে। তার কথা থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, চেষ্টা করলে সবার পক্ষেই প্রতিভা অর্জন করা সম্ভব। প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ফ্রান্সিস বলেছেন, প্রত্যেক মানুষের মধ্যে সম্ভাবনাময় প্রতিভা লুকিয়ে রয়েছে। সকলের উচিত সেই সুপ্ত প্রতিভাকে জাগিয়ে তোলা।’ মহা মনীষীদের এইসব মূল্যবান বাণী পাঠ করলে কে না অনুপ্রাণিত হবে? আমার মনে হয় ব্যাক বেঞ্চের ছাত্রটিরও মনে উৎসাহের জোয়ার আসবে। তার ভেতরটা দাউ দাউ করে জ্বলে উঠবে। ড. ইমরোজ খুব দক্ষতার সঙ্গে এই কাজটি করেছেন। তিনি বিশ্ববিখ্যাত মহামনীষীদের জীবন ও কর্ম থেকে তাজা তাজা উদাহরণ দিয়েছেন। ইউ ক্যান ডু, একই পরিবারে ছয়টি নোবেল, আর কি চাই, আমাদের অদম্য মেধাবীদের কথা, সর্বকালের সেরা, রূপকথার জাদুকর, পা নেই তবু বিজয় পদচুম্বন করছে, আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন, পর্বতকে নয় বরং নিজকেই জয় করেছি, বিজয় যেন ভাত মাছ, দ্য গ্রেটেস্ট ম্যান অন দ্য ইউনিভার্স, নবী মুহাম্মদ (স) সর্বোত্তম আদর্শ, হে মুহাম্মদ (স.) তুমি সুন্দর ও শ্রেষ্ঠতম, ১১০ বছর বয়সী যুবক, বিশ্ব মাঝে শীর্ষ এক বাংলাদেশী, ইসলামী সাফল্যের রাজতোরণ, একটি সহজ ফর্মুলা : Bitter + Batter + Butter = Better,
থিঙ্ক বিগ- মাহাথির এর বাণী : If you want to be a leader,/you must have ideas,/ If not, youÕre simply a follower.  ইত্যাদি বিষয়গুলো একবার পাঠ করলে বারবার পাঠ করতে ইচ্ছে করে। এবং মুখস্থ করে রাখতে মন চায়। আলোচ্য বিষয়গুলো পাঠের সুবিধের জন্য মূল হেডিং-এর ভেতরে সাব-হেডিং দিয়ে ভাগ করে আলোচনা করেছেন লেখক।
বিষয়গুলো আলোচনা করতে গিয়ে লেখক বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুদূর অতীত থেকে সম্প্রতি কালের অসংখ্য জ্ঞানী গুণী বিজ্ঞানী দার্শনিক কবি সাহিত্যিক ও রাজনৈতিক নেতাদের জীবনের নানা ঘটনা, কর্মজীবনের কথা দেশ, স্থান, সন, তারিখসহ বর্ণনা দিয়েছেন। কোন দেশের আকার আয়তন ও জনসংখ্যা, ঘণ্টা মিনিটও উল্লেখ করেছেন। এসব কাজে লেখক অনেক পরিশ্রম করেছেন। এ ধরনের কাজ গল্প উপন্যাস লেখার মতো অত সহজ নয়। এ জন্য বইটি হয়েছে তথ্যবহুল এবং আকর্ষণীয়। লেখকের ভাষায়ও রয়েছে এক যাদুকরী ক্ষমতা।
বইটি শুধু ছাত্র-ছাত্রী ও তরুণ সমাজ পাঠ করলে উপকৃত হবেন না, শিক্ষক ব্যবসায়ী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা পাঠ করলে উপকৃত হবেন তাতে সন্দেহ নেই। সবার শোকেসে ও পড়ার টেবিলে বইটি রাখার মতো। ড. আহসান হাবীব ইমরোজ চেয়েছেন সবার জীবন সার্থক সুন্দর উন্নত এবং আনন্দময় হোক, সবাই জীবন সংগ্রামে সফলতা লাভ করুন, ব্যর্থতা যেন কারো চরণ ছুতে না পারে। যেমনটি বলেছেনÑ দ্য পাওয়ার অব পজিটিভ থিংকিং বইয়ের লেখক নরম্যান ভিনসেন্ট পিল। তিনি বলেছেন- ‘আসলে আপনি যদি পরাজিত হতে চান তবে পরাজিত হবেন, অন্যথায় নয়।’ কেউ কি জীবনে পরাজিত হতে চায়? চায় না। তবে জয়ী হবার পথটি খুঁজে বের করতে হবে। জয়ী হবার জন্য অদম্য ইচ্ছে এবং আত্মবিশ্বাস নিয়ে পরিশ্রম ও সাধনা করতে হবে।
লেখক বইটি লেখার উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলেছেন : ব্রিটিশ কলোনিয়ালরা চোখে যে ঠুলি, মুখে লাগাম আর কানে যে পড়া দিয়েছে তার বাইরে আর জগতকে দেখতে পারি না। তাই ছা-পোষা চাকুরে হওয়াই আমাদের শেষ ডেস্টিনেশন শেষ ইস্টিশন।
অধঃচিন্তার এই কুয়ো ও ব্যাঙের খোলস থেকে বের হয়ে আসতে হবে। লম্বা ঠ্যাঙে তড়াক লম্ফ দিয়ে কুয়ারক্ষীর নাকে ডিসিম করে ল্যাঙ মারতে হবে। ও পালিয়ে বাঁচবে। আর উন্মোচিত হবে উদার জ্ঞান আর আত্মোন্নয়নের বিশাল আকাশ। সেইসব অচলায়তন ভাঙা অভিযাত্রীদের জন্যই এই বই বিশ্ব মাঝে শীর্ষ হব।’ বইটিতে রয়েছে ১০টি অধ্যায়ে ৫৩টি প্রসঙ্গ এবং ৩০টি ছবি। গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত ১২০ পৃষ্ঠার বই দাম মাত্র ১৪০ টাকা। প্রচ্ছদ কাগজ বাঁধাই উন্নত মানের। বইটি উপর নজর পড়লেই হাতে নিতে ইচ্ছে করে। এমন উন্নত মানের বই উপহার দেয়ার জন্য ড. আহসান হাবীব ইমরোজকে শুকনো ধন্যবাদ দিয়ে খাটো করতে চাই না, বিষয়টি তো ধন্যবাদ জ্ঞাপনের চেয়ে অনেক বড়। বইটি যত প্রচার প্রসার লাভ করবে ততই জাতীয় কল্যাণ সাধিত হবে। লেখকের কাছ থেকে এমনি আরও উন্নতমানের বই পাবার আশা সহজেই করতে পারি আগামীতে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com