চায়ের রাজ্যখ্যাত মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে শরতের কাশফুলের মুগ্ধতায় হৃদয় ছুঁয়েছে দর্শনার্থীদের। শরতের শুরুতেই শ্রীমঙ্গলের ভানুগাছ সড়কের পাশে কাশফুলের বালুচরে প্রায় এক কিলোমিটার জায়গাজুড়ে মাথা উঁচু করে দোল খাচ্ছে শুভ্র সাদা কাশফুল। বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে এখন কাশফুলের শুভ্র চাদরে ছেয়ে গেছে। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে মাত্র আড়াই কিলোমিটার দূরে ভানুগাছ সড়কের পাশে বেলতলী সংলগ্ন ভুড়ভুড়িয়া ছড়ার পাশে এই কাশফুলের বালুচরের অবস্থান। ভানুগাছে যাওয়ার রাস্তা ধরে খানিকটা সামনে এগোলেই (বিটিআরআই সংলগ্ন) উঁচু-নিচু টিলার মধ্যে চা বাগান। সবুজ চা বাগানের ভেতর দিয়ে বয়ে চলেছে পাহাড়ি ছড়া। ছড়ার দু’পাশেই প্রাকৃতিকভাবেই তৈরি হয়েছে এই কাশফুলের বালুচর। অপরূপ সাদা কাশফুলের বাতাসে দোল খাওয়ার দৃশ্য মনোরম। এমন নয়নাভিরাম সৌন্দর্য যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে পর্যটকসহ প্রকৃতিপ্রেমীদের। প্রতিদিন প্রকৃতিপ্রেমীদের পদচারণে মুখরিত ভানুগাছ সড়কের কাশফুলের বালুচর। আর প্রকৃতিপ্রেমীরা ছুটছেন অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে। স্থানীয়রা ছাড়াও শ্রীমঙ্গলে বেড়াতে আসা পর্যটকরা প্রতিনিয়ত ভিড় জমাচ্ছেন সেখানে। প্রতিদিন স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি নানা শ্রেণির মানুষ এক ফলক শীতল হাওয়ার অপেক্ষায় এখানে এসে প্রশান্তি খুজে নিচ্ছেন। শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়কের পাশে এমন দৃশ্য দেখে মাঝে মধ্যে ব্যক্তিগত গাড়ি থামিয়ে কাশফুলের সাথে অনেক পথচারীকেও ছবি তুলতে দেখা যায়। রবিবার (২৮ আগস্ট) বিকেলে কাশফুলের বালুচরে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষজন এসেছেন অনিন্দ্য সুন্দর এই কাশফুল দেখতে। কেউ কাশফুলের সঙ্গে ছবি তুলছেন। কাশফুলের গাছগুলোর ভেতরে ঢুকে পড়ছেন অনেকেই। অনেকে আবার মুক্ত বাতাসে পুরো বালুচর ঘুরে বেড়াচ্ছেন। চোখ জুড়ানো এই অপরূপ সৌন্দর্য মন কেড়েছে পর্যটকদের। এককথায় শরতের কাশফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ প্রকৃতিপ্রেমীরা। এখানে প্রতিবছর আগস্টের শেষের দিক থেকে ফুল ফোটা শুরু হয় এবং অক্টোবর পর্যন্ত থাকে। তাই বছরের দুই-আড়াই মাস এখানে পর্যটক ও স্থানীয় মানুষের ভিড় লেগেই থাকে। গতকাল বিকেলে ভুরভুরিয়া ছড়ার পাড়ে কাশফুল দেখতে আসেন সুমি, ফেরদাউস, তারিনসহ বেশ কয়েকজন। তারা দৈনিক খবরপত্র-কে জানান, রাস্তা থেকে কাশফুলের সৌন্দর্য ভালো দেখা যায়। এতো সুন্দর অপরূপ দৃশ্য না দেখলে আফসোস থেকে যাবে। তাই গাড়ি থেকে নেমে কাশফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসলাম। পরিবার নিয়ে ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গলে বেড়াতে আসা আব্দুর রহমন বলেন, ‘চা বাগানের ফাঁকে ছড়ার পাশে দু’দিকে এতো সুন্দর সাদা কাশফুলো মাথা উচুঁ করে দাঁড়িয়েছে। সেই সৌন্দর্য দেখে আমরা সত্যিই মুগ্ধ। শ্রীমঙ্গলের এমএম কম্পিউটার গ্যালারির সত্তাধিকারী মোঃ সোলেমান পাটোয়ারী দৈনিক খবরপত্র-কে বলেন, শ্রীমঙ্গলে আসা পর্যটক ও স্থানীয় মানুষের কাছে জায়গাটি প্রায় দুই মাসের জন্য বেশ আর্কষণীয় থাকে। জায়গাটি অনেক সুন্দর। এখানে সময় কাটাতে খুবই ভালো লাগে। এই কাশফুলগুলোর সঙ্গে ছবি তুললে ছবিগুলোও অনেক সুন্দর হয়। কিন্তু কাশফুল ঝরে পড়ার পর এ জায়গায় আর কেউ যান না। যেহেতু জায়গাটি চা বাগান কর্তৃপক্ষের আওতাধীন, তাই তাঁরা গৎবাঁধা নিয়মের বাইরে গিয়ে পর্যটকদের জন্য দুই মাসের জন্যযেনো একটু ছাড় দেন। শ্রীমঙ্গল আইডিয়াল স্কুল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি, বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগি ইসমাইল মাহমুদ দৈনিক খবরপত্র-কে বলেন-কাশবন শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে না, এর রয়েছে নানা ঔষধি গুণও। নদীর ধার, জলাভূমি, চরাঞ্চল, শুকনো এলাকা, পাহাড় কিংবা গ্রামের উঁচু স্থানে কাশের ঝাড় বেড়ে ওঠে। তবে নদীর তীরেই কাশফুল বেশি দেখা যায়। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটনোর পাশাপাশি কৃষকদের অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী করা সম্ভব।