মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে সাপ্তাহিক বন্ধের দিনেও উৎসব আমেজে ১৭০ টাকা মজুরিতে চা-বাগানের কাজে যোগ দিয়েছেন চা শ্রমিকরা। ধর্মঘটের কারণে টানা ১৯ দিন চা বাগানগুলোতে ছিল সুনসান নিরবতা। এবার পুনরায় চা বাগানগুলো সরব হয়ে ওঠেছে। শনিবার (২৭ আগস্ট) রাতে মালিকপক্ষের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের পর শ্রমিকদের ১৭০ টাকা মজুরি দিতে রাজি হন বাগান মালিকেরা। এরপর চা-বাগানগুলোতে চলমান ধর্মঘট প্রত্যাহার করে কাজে যাওয়ার ঘোষণা দেন চা-শ্রমিকেরা। গতকাল রবিবার সকালে শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভাড়াউড়া চা-বাগান, ভুরভুরিয়া চা-বাগান, খাইছড়া চা-বাগান ও জেরিন চা-বাগান ঘুরে দেখা গেছে, সেখানে পুরোদমে কাজ শুরু করেছেন শ্রমিকেরা। কাঁধে ঝুলি আর মাথায় বাঁশের ছাতা নিয়ে সকাল সাড়ে আটটার দিকে কাজে বের হন তাঁরা। চা-বাগানের সরদারদের নেতৃত্বে শ্রমিকেরা বাগানে ভাগ হয়ে পাতা তোলার কাজ শুরু করেন। মজুরি বুদ্ধির দাবিতে ৯ আগস্ট থেকে ২ ঘণ্টা কর্মবিরতি এবং ১৩ আগস্ট থেকে সারা দেশের চা-বাগানগুলোয় অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট করেছিলেন শ্রমিকেরা। দাবি আদায়ে গত কয়েক দিন উত্তাল ছিল চা-বাগানগুলো। আন্দোলন সফল করতে শ্রমিকদের সড়ক, মহাসড়ক ও রেলপথ অবরোধ করতে দেখা গেছে। এ প্রেক্ষাপটে গতকাল বিকেলে চা-বাগানের মালিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পার্বতী রবিদাস নামের এক শ্রমিক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আজ ছুটির দিন থাকার পরও সকাল সকাল কাজে বের হয়েছি। অনেক দিন ধরে আন্দোলনের কারণে চা০বাগানে কাজ করিনি। এখন চা-বাগানে এসে পাতাগুলোর জন্য মায়া হচ্ছে। মালিকপক্ষ যদি আগেই দাবি মেনে নিত, তাহলে এত আন্দোলন হতো না। এখন আমরা আমাদের সর্বোচ্চ কাজ দিয়ে চা-পাতাগুলো তুলে দেব। আমরা ১৭০ টাকা মজুরি পেয়ে খুশি। মজুরির পাশাপাশি আমাদের চিকিৎসা, রেশন, ঘরবাড়ির বিষয়গুলোর দিকে প্রধানমন্ত্রীর নজরদারি কামনা করি। আমরা ১৭০ টাকা মজুরির পাশাপাশি যদি অন্য সুযোগ-সুবিধাগুলো ভালো করে পাই, তাহলে আমাদের কষ্টের জীবনে একটু সুখ আসবে। আমরা ছেলেমেয়ে নিয়ে ভালোভাবে থাকতে পারব। ভুরভুরিয়া চা-বাগানের চা-শ্রমিক আকাশ দোষাদ বলেন, আমরা ১৯ দিন না খেয়ে আন্দোলন করেছি। অনেকে আমাদের অনেক কিছু বুঝিয়েছেন। আমাদের সঙ্গে অনেকে টালবাহানা করেছেন। কিন্তু আমরা সেগুলো গুরুত্ব দিইনি। আমরা অপেক্ষা করেছি, প্রধানমন্ত্রী আমাদের জন্য কিছু একটা করবেন। ১৭০ টাকা মজুরিতে আমরা খুশি। শুনেছি মজুরির সঙ্গে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হবে। চা-শ্রমিকদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর এ মহৎ উদ্যোগকে আমরা শ্রদ্ধা করি। ভাড়াউড়া চা-বাগানের শ্রমিক দুলাল হাজরা দৈনিক খবরপত্র- কে বলেন, প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন আমরা তা মেনে নিয়ে কাজ শুরু করেছি। যদিও ১৭০ টাকাআমাদের এই সময়ে চলাফেরা কষ্ট হবে। তবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তাই আমরা কাজে নেমেছি। বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বালিশিরা ভ্যালির সভাপতি বিজয় হাজরা বলেন, ‘গতকাল রাতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে মজুরি বৃদ্ধি পেয়ে ১৭০ টাকা হয়েছে। কাল রাত থেকেই আমরা বিভিন্ন ভ্যালি ও পঞ্চায়েত কমিটির সঙ্গে আলোচনা করেছি। প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব মেনে সবাই কাজে যেতে আগ্রহ দেখিয়েছে। রোববার সাপ্তাহিক ছুটি থাকা সত্তেও সবাই কাজে যোগ দিয়েছেন। বিজয় হাজরা বলেন, আমরা আগেই বলেছিলাম প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত দিবেন আমরা তা মেনে নিব। যেহেতু প্রধানমন্ত্রী মালিকদের সঙ্গে বসে মজুরি ১৭০ টাকা নির্ধারণ করেছেন। তাই আমরা আজ থেকেই কাজে নেমেছি। ফিনলে চা কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার গোলাম মোহাম্মদ শিবলী বলেন, আমাদের চা বাগানের শ্রমিকরা সবাই কাজে নেমেছেন। সবাই কাজ করছেন। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী চা-শ্রমিকরা নতুন মজুরি ১৭০ টাকা পাবেন। এ ছাড়া অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা অনুযায়ী তাদের পেছনে বাগানের দৈনিক ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা খরচ হবে।