শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৫৮ অপরাহ্ন

মানবতার কবি

সুফিয়া জমির ডেইজী
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যের এক দিকপাল হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছেন, থাকবেন। সাহিত্যে যে ক’জন কবি নিজ সৃষ্টির বৈশিষ্ট্যে উজ্জ্বল হয়ে আছেন সেই ভাস্করের দীপ্তিতে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম আপন মহিমায় অম্লান হয়ে আছেন। (১৮৯৯-১৯৮৬) খ্রিষ্টাব্দ থেকে কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন, আছেন। তিনি বিদ্রোহের কবি, আবার তিনি যৌবনের কবি। তাঁর কণ্ঠে জাগরনীর সুর ছিল। এই জাগরণী সুর দিয়ে আধমরাদের তিনি ঘা দিয়েছেন। ঘা দিয়ে আধমরাদেরকে ঘুম ভাঙিয়েছেন। কাজী নজরুল ইসলামের যৌবনী উচ্ছ্বাসে সমালোচকগণ মন্তব্য করেছেন। নজরুলের অগ্নিঝরা কিছু লেখার মধ্যে বাংলাদেশের যুব সমাজ জেগে উঠেছিলেন। তাদের অন্তরের না বলতে পারা বাণী ধ্বনিত হয়ে উঠতো নজরুলের রচনায়। তাই যুব সমাজ প্রাণ চাঞ্চল্য ফিরে পেয়ে উদ্বেল হয়ে উঠতেন । মুসলমান যুব সমাজ নজরুলের কাছে খুঁজে পেতেন প্রাণবন্ত নতুন গতিবেগ। কবি ছিলেন ক্লান্তিহীন উদ্যম, দুর্বার উদ্দীপনায় ছিলেন গতিশীল ও প্রত্যাশাময়ী। জীবনে অটল সাধনার এই কবি অফুরন্ত প্রাণ চঞ্চলতায় মৃত্যুকে তুচ্ছ করে নতুনকে সংস্কারের বেড়াজাল ছিন্ন করে সব বাধা পেরিয়ে সমাজের মানুষের কাছে এগিয়ে গিয়েছেন। স্বপ্নময় মুক্ত জীবনে সমস্ত জীর্ণতাকে ধ্বংস করে সামনে অগ্রসর হতেন। নতুন আশা, আকাঙ্খায় কবি আগামী উজ্জ্বল দিনের আগমনী গান কান পেতে শুনেছেন এবং নব চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে শুনিয়েছেন।
“নবীনদের লাল ঝা-া উড়িয়ে আসিতেছে কিশলয়/ রক্ত নিশান নহে যে রে ওরা রক্ত শাখার জয়”/ গাহি সাম্যের গান/ মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহিয়ান/ নাই দেশকাল পাত্রের ভেগ, অভেদ ধর্মজাতি/ সবদেশে, সবকালে, ঘরে ঘরে তিনি মানুষের জাতি। মানুষ কবিতার ভেতর দিয়ে বলিষ্ট মানবপ্রেমের গভীরতাকে প্রত্যক্ষ করে রেখেছেন। মানুষের শান্তি প্রকৃতির সাথে অনুশাসনে বসবাস করার জন্য জীবন সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে হয়। মানুষের জীবনে হাসি-কান্না আশা নিরাশা আনন্দ-ব্যথা, সুখ-দুঃখ, ধনি-দরিদ্র ইত্যাদি উপলব্ধি করার জন্য প্রথমে নিজেকে বুঝার প্রয়োজন রয়েছে। কবির রচনাশৈলি পাঠ করলে জানা যায়। কবি কাজী নজরুল ইসলামের রচনাকে মানুষের বলিষ্ট মানবপ্রেমে গভীরভাবে প্রত্যক্ষ করে আমরা দেখি। আবার কবি নজরুল চাঁদ এবং পদ্মফুল নিয়ে গান রচনা করেছেন। “স্বপন বিলাসে চাঁদ যাবে হাসে/ কুমুদ ফোটে দীঘিতে/ সেই আধোরাতে নয়ন পাতে/ ঘুম হয়ে এসো নিভৃতে ” বাংলা সাহিত্যের যে তিনজন নক্ষত্র রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, মাইকেল মধুসুদন দত্ত। কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন দিক নিয়ে সাহিত্য চর্চা করেছেন। কাজী নজরুল ইসলামের উপন্যাস, ছোটগল্প, নাটক, কবিতা, গান ইত্যাদি রয়েছে। নজরুল ইসলামের প্রবন্ধ ও রয়েছে। অনুবাদ ও রয়েছে। অনুবাদের মধ্যে উল্লেখ করা যায় কাব্য- আমপারা, রুবাইয়াতে ওমর খৈয়াম। মোট কথা বাংলা সাহিত্যে নজরুলের অগাধ বিস্তার। কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর রচনা পদ্ধতিতে তিনি তাঁর মতো ছিলেন। নজরুল ইসলাম কিছু পূজার গান লিখেছেন এই পূজার গানগুলোকে শ্যামা সংগীত বলা হয়। কাজী নজরুল ইসলাম যে অক্লান্ত সাফল্য অর্জন করেছেন তখনকার সবাই এই সাফল্যের কথা স্বীকার করেছেন। নজরুল অসম্ভব যোগ্যতায় আরবি-ফার্সি যে সকল শব্দ মুসলমান জাতি জাগরণের মুখের ভাষার সাথে মিশ্রিত ছিল সেই শব্দগুলোকে দক্ষতার সাথে গান/কবিতায় রচনা করেছেন। কাজী নজরুল ইসলাম গানের ক্ষেত্রে কালোত্তীর্ণ গান লিখেছেন। সাহিত্যের বিচারের প্রেক্ষিতে অনেকেই নজরুলকে তখন ঝড়ের সহিত তুলনা করেছিলেন। কিন্তু; কথা হচ্ছে সেই ঝড় কেমন? কত বড় ঝড়? কিংবা আমরা কতদিন মনে রাখার মতো সেই ঝড়? আমরা মানবজাতি বাঙালির ঝিমিয়ে পড়া কণ্ঠের সুর একসময় পুঞ্জিভূত ছিল। সেই দিন দরকার ছিল তীরভাঙা-মানব হৃদয়ের রক্তক্ষিপ্ত করে যে রচনার প্রয়োজন ছিল এমন প্রয়োজনীয় রচনা লেখার দাবানল সৃষ্টি নজরুলই করেছেন। নজরুলকে জেল খাটতে হয়েছে। রাজনৈতিক অপরাধ করার কারণে। কালবৈশাখী ঝড় আসে। কিন্তু, নজরুলের ঝড় আসতো আর নজরুলের এক একটি ঝড় চিহ্নিত হয়ে থাকতো, থাকবে বহু বহু শত শত বৎসর পর্যন্ত। কারাগারে নজরুল থাকাকালীন ঐতিহাসিক ঝড়ের রূপ অনেকেই তুলে ধরেন নি। ভারতবর্ষের ইতিহাসে অসামান্য এই ক্লান্তিকালের ইতিহাস তোলা দরকার ছিল। ধূমকেতু, আনন্দময়ীর আগমন নজরুল লিখে রাষ্ট্র বৈরী হয়ে দ- লাভের আসামী হন। আর এই আসামী হওয়া একমাত্র সত্য যে তা নহে। অগ্নিবীণা, বিষের বাঁশী ও ভাঙার গান-এর বহু কবিতা ছিল নজরুলকে বিচারে অভিযুক্ত করার কাহিনী। কিন্তু; তখন দেহের রক্ত ক্ষিপ্ত করে যে দাবানল তৈরী করা হয় সেই দাবানল সৃষ্টির প্রয়োজন ছিল। আর তখনই রাজনৈতিকভাবে নজরুল অভিয্ক্তু হন। আমরা নজরুল ইসলামকে বিদ্রোহী কবি হিসেবে উজ্জ¦ীবিত করে রেখেছি। কবিতার ক্ষেত্রে নজরুলের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছিল তিনি ছিলেন বিদ্রোহী কবি হিসেবে। পাঠক মাত্রই নজরুলকে অনুভব করতে হয় আনন্দঘন তৃপ্তি দিয়ে যা পাঠক উপলব্ধি করতে পারেন নিজেই অভূতপূর্ব নৈপুন্যের সাথে নিজেকে পাঠ রসে নির্মাণ করে। চিরায়ত সৌন্দর্য, চিরায়ত স্মৃতিশক্তি এবং কালান্তরিত আবেদনের কারণেই নজরুলের কবিতাগুলো পেয়েছে অফুরন্ত প্রাণশক্তির প্রাচুর্যতা। এ কথা স্বীকার করতে হবে যে কাজী নজরুল ইসলাম একজন মহাকবি, একজন জাতীয় কবি। এই সাফল্য অর্জন প্রায় বাংলা সাহিত্যে সকলেই স্বীকার করি, করবো তিনি বিপ্লবের অসম্ভব প্রতিভা রেখে গিয়েছেন। নজরুলের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com