চলতি মাসের মধ্যে চূড়ান্ত হচ্ছে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য জ্বালানি নিরীক্ষা প্রবিধানমালা। বিইআরসি সূত্র বলছে, চলতি মাসের মধ্যে জ্বালানি বিভাগের মতামত পাওয়া গেলে প্রবিধানমালাটি চূড়ান্ত করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। জানা গেছে, এনার্জি অডিট বাধ্যতামূলক করতে চাইছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এরমধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের এনার্জি অডিট প্রবিধানমালা-২০২২ এর খসড়া প্রকাশ করেছে বিইআরসি। মনে করা হচ্ছে, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের এনার্জি অডিট করা গেলে অদক্ষ বিদ্যুৎ কেন্দ্র চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। এতে করে জ্বালানির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। সংকটের মধ্যে জ্বালানি সাশ্রয়ের কথা চিন্তা করছে সরকার। দেশে মোট জ্বালানির সিংহভাগ ব্যবহার করে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো। কিন্তু কোন বিদ্যুৎ কেন্দ্র কী পরিমাণ জ্বালানি ব্যবহার করছে তার হিসাব নেওয়া খুব কঠিন কোনও কাজ নয়। বিদ্যুৎ খাত বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জ্বালানি ব্যবহারের দক্ষতা বৃদ্ধি করার কোনও বিকল্প নেই বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
জ্বালানি বিভাগ বলছে, জ্বালানি নিরীক্ষা হচ্ছে জ্বালানি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য একটি পদ্ধতিগত উপায়। বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোতে পরিচালনগত দিক যেমন গ্রস এনার্জি ব্যবহার এবং উৎপাদন সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ ও তথ্য বিশ্লেষণ, আউটেজ, জ্বালানির ব্যবহার, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের সামগ্রিক বিষয় পর্যালোচনা। দেশে এখন সব মিলিয়ে সরকারি বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংখ্যা ১৫৩টি। সব মিলিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা ২১ হাজার ৬৮০ মেগাওয়াট (ডিরেটেড ক্যাপাসিটি)। এর বাইরে আরও সাড়ে তিন হাজার মেগাওয়াটের ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। যেগুলো নিজস্ব উদ্যোগে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও ব্যবহার করে।
প্রবিধানমালার খসড়ায় বলা হয়েছে, প্রত্যেক অর্থবছর শুরুর ৬০ দিনের মধ্যে লাইসেন্সিং দক্ষতা, প্রাপ্যতা ও বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচকে মানদণ্ড হিসেবে ধরে তাদের মালিকানা ও পরিচালনায় থাকা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের মধ্যে আপাতদৃষ্টিতে অদক্ষ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তালিকা প্রস্তুত করবে। তালিকাভুক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রসমূহের সাধারণ অপারেটিং তথ্য-উপাত্ত, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোকে টাইপ অনুসারে গ্রুপিং (ইঞ্জিন, গ্যাস টার্বাইন, স্টিম টার্বাইন, কম্বাইন্ড সাইকেল ইত্যাদি) করে কমিশনে দাখিল করবে।
এনার্জি অডিটের মাধ্যমে প্রাপ্ত ফলাফল কার্যকর করার ফলে ব্যয় কমিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের সার্বিক সক্ষমতা ও দক্ষতার উন্নয়ন হবে। এর ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বিতরণ প্রক্রিয়ায় অতিরিক্ত লোকসানের ক্ষেত্র চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের দক্ষতার উন্নয়ন ঘটবে। একই সঙ্গে কেন্দ্রের নিজস্ব বা অক্সিলিয়ারি ব্যবহার কমিয়ে প্রধান উপাদানগুলোর আরও দক্ষ পরিচালনার মাধ্যমে নেট বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।
এনার্জি অডিট করা সম্ভব হলে উন্নত পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণ পরিকল্পনা ও অনুশীলনের মাধ্যমে নির্ভরযোগ্যতা অর্জন করা সম্ভব হবে। বিদ্যুৎ প্রাপ্যতার বৃদ্ধি ঘটবে। যন্ত্রাংশ ও মিটারিং এর ত্রুটিগুলো চিহ্নিতকরণ ও সংশোধন করার মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটবে। একই সঙ্গে আর্থিক শৃঙ্খলা এবং ব্যয় যুক্তিযুক্তকরণের ফলে আর্থিক সক্ষমতার উন্নয়ন ঘটবে। একই সঙ্গে গ্রীন হাউজ গ্যাস এর নির্গমন হ্রাস পাবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিইআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবু ফারুক বলেন, আমরা প্রবিধানমালা ওয়েবসাইটে দিয়েছি যাতে স্টেকহোল্ডাররা তাদের মতামত জানায়। ইতোমধ্যে অনেক স্টেকহোল্ডার তাদের মতামত জানিয়েছেন। চলতি সপ্তাহ পর্যন্ত মতামত দেওয়ার সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এরপরে আমরা তাদের মতামতগুলো সন্নিবেশিত করবো। এরপর সেগুলোর মধ্যে যেগুলো আমরা যুক্ত করতে পারবো সেগুলো যুক্ত করে প্রবিধানমালা চূড়ান্ত করা হবে। এরপর এটি জ্বালানি মন্ত্রণালয় হয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিং এর জন্য পাঠানো হবে। তিনি জানান, চলতি মাসের মধ্যেই এই প্রবিধানমালা চূড়ান্ত করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর চেষ্টা করছি।-বাংলাট্রিবিউন