মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চল অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত লালমোহনে ডা. আজাহার উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সভাপতিকে সংবর্ধনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা সিংড়ায় পরিবেশ রক্ষার্থে ৫৩৬টি ডাস্টবিন বিতরণ কাজী আজিম উদ্দিন কলেজে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদলের ৩১ দফা নিয়ে মতবিনিময় সভা পটুয়াখালীতে শিক্ষক দম্পতি হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন টুঙ্গিপাড়ায় ভিক্ষুক ও হতদরিদ্রদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলো সমাজসেবা অফিস জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের আওতায় এনে সহায়ক কর্মচারী অন্তর্ভুক্ত ও বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় গঠনের নিমিত্তে দাবি পেশ দাউদকান্দিতে সড়কের মাটি ধসে পড়ল খালে, দুর্ঘটনার আশংকা সীতাকুন্ডে বিতর্কিত মাদ্রাসা পরিচালকের করা মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে মানববন্ধন

সার-বীজে নাভিশ্বাস সবজি চাষিদের

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বুধবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২

বীজ, সার, কীটনাশক ও শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির খড়ক মাথায় নিয়েই আগাম শীতকালীন সবজি আবাদ শুরু করেছেন দেশের অন্যতম সবজি উৎপাদনকারী এলাকা পাবনার ঈশ্বরদীর কৃষকরা। শিম, মুলা, গাজর ও ফুলকপির পাশাপাশি এখানকার কৃষকরা ওলকপি, ঢ্যাঁড়স, বাঁধাকপি, বেগুন, ধনিয়ার পাতা, লাউসহ বিভিন্ন সবজিসহ চাষাবাদ শুরু করেছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় ৭০৮৮ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজির আবাদ করা হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবাদ হয় শিম। প্রায় ১৩০০ হেক্টর জমিতে শিমের আবাদ হয়। এছাড়াও ফুলকপি ৯০০ হেক্টর, মুলা ৯৪৫ হেক্টর, গাজর ৮৯০ হেক্টর, বেগুন ৪০০ হেক্টর, বাঁধাকপি ২১৫ হেক্টর ও ঢ্যাঁড়স ৩৫০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়। শীতকালীন সবজি হিসেবে এরই মধ্যে ওলকপি, লাউ, ধনিয়াপাতা, লাল শাক, পালং শাকসহ বিভিন্ন ধরনের সবজির আবাদ শুরু হয়েছে।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মাঠের পর মাঠ শুধু সবজির আবাদ। যেদিকে তাকানো যায় চোখে পড়বে শুধু সবজির ক্ষেত। চাষিরা সবজির চারা রোপন, পরিচর্যা ও সেচের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
কৃষকরা জানান, বীজ, সার ও কীটনাশকের দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে সবজি আবাদে। অনাবৃষ্টির কারণে ডিজেল চালিত শ্যালো মেশিনে সবজি ক্ষেতে সেচ দিতে গিয়ে বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে। বীজ, সার ও কীটনাশকের দাম বেড়ে যাওয়া ও শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির কারণে এবারের সবজি আবাদে খরচ দ্বিগুন বেড়ে যেতে পারে। উৎপাদন খরচ মিটিয়ে সবজি চাষিদের লাভের মুখ দেখা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। সলিমপুর ইউনিয়নের ভাড়ইমারী গ্রামের সবজি চাষি জিয়া মন্ডল জানান, এক বিঘা জমিতে গত বছর গাজর চাষে খরচ হয়েছিল ৬০ হাজার, এবার খরচ হবে ৯০ হাজার টাকা। এককেজি গাজরের বীজের দাম গত বছর ছিল ১৬ হাজার ৫শ টাকা এবার ২১ হাজার ৫শ টাকা।
তিনি বলেন, গত বছর গাজর আবাদে ইউরিয়া সার ছিল ৮০০ টাকা বস্তা (৫০ কেজি)। এবার সরকারি দাম ১১০০ টাকা হলেও ডিলাররা দাম নিচ্ছেন ১৩০০ টাকা, টিএসপি গত বছর ৯০০ টাকা বস্তা থাকলেও এবার বিক্রি হচ্ছে ১৩৫০ টাকা, এমওপি সার ১০০০ টাকা, ডিএপি ১২০০ টাকা বস্তা। ডিলাররা সারের সংকট দেখিয়ে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে কৃষকদের সার কিনতে বাধ্য করছেন।
এছাড়াও এবার অনাবৃষ্টির কারণে সেচের জন্য বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে। সবমিলিয়ে এক বিঘা জমিতে গাজর চাষে যে খরচ হবে। উৎপাদিত গাজর বিক্রি করে সে খরচ উঠবে কিনা সন্দেহ আছে।
নওদাপাড়া গ্রামের সবজি চাষি হাজী হাবিবুর রহমান বলেন, প্রতি বছর ২০ থেকে ২৩ বিঘা জমিতে গাজর, ফুলকপি, পাতা কপিসহ বিভিন্ন সবজির আবাদ করি। এবারও আগাম ফুলকপি, মুলা ও গাজরের চাষ করেছি। সার, বীজ ও কীটনাশকের দাম যেভাবে বেড়েছে এতে ফসল ফলিয়ে কৃষকদের লাভের কোনো সম্ভাবনা নেই। নিজের জমি আবাদ করতেই হিমশিম খাচ্ছি। যারা ৬০ হাজার টাকা বিঘা বছর চুক্তিতে খাজনা নিয়ে আবাদ করছে তাদের বিন্দুমাত্র লাভের সম্ভাবনা নেই।
ভাড়ইমারি গ্রামের সবজিচাষি আব্দুস সাত্তার জানান, সাড়ে ৭ বিঘা জমিতে টার্কিস হাইব্রিড জাতের আগাম গাজরের আবাদ করেছি। এক বিঘা জমি আবাদ করতে ৭০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। যারা জমি খাজনা নিয়ে আবাদ করছে তাদের খরচ ৯০ হাজার। অথচ এক বিঘা জমির গাজর ৯০ হাজার টাকায় বিক্রি হবে বলে মনে হয় না।
তিনি বলেন, সার, বীজ ও কীটনাশকের দাম বাড়ার পাশাপাশি অনাবৃষ্টির কারণে সেচের জন্য বাড়তি খরচ হচ্ছে। সার নিয়ে ডিলাররা লুকোচুরি শুরু করেছে। সরকার নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী ডিলাররা সার দিচ্ছে না। তারা বস্তা প্রতি দুই থেকে তিনশ টাকা বেশি নিচ্ছে। ডিলারদের কারসাজি দেখার কেউ নেই।
সার-বীজে নাভিশ্বাস সবজি চাষিদের
বাংলাদেশ কৃষক সমিতি পাবনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব বলেন, সার, কীটনাশক, বীজ ও জ্বালানি তেলের মূল্য বাড়ায় সবজি উৎপাদনে খরচ বাড়বে। উৎপাদিত সবজির বাজারদর না বাড়ালে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে তারা চাষাবাদে আগ্রহ হারাবে। তাই কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের বাজারদর নির্ধারণ করে দিতে হবে।
দাশুড়িয়া ইউনিয়নের বিএসআইসি অনুমোদিত সার ডিলার হাফিজুর অ্যান্ড ব্রাদাসের স্বত্বাধিকারী মো. হাফিজুর রহমান জাগো নিউজকে জানান, সরকার নির্ধারিত মূল্যেই এখানে সার বিক্রি হয়। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সবসময়ই সার বিক্রি তদারকি করেন।
বেশি দামে সার বিক্রির অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এসব অভিযোগ সত্য নয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার জাগো নিউজকে জানান, ডিলারদের সার বিক্রি সবসময় মনিটরিং করছে কৃষি অফিস। প্রত্যেকটা সার ডিলারদের সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখছেন উপ-সহাকারী কর্মকর্তারা। কোথাও কোনো অনিয়ম যেন না হয় সেজন্য সতর্ক রয়েছি। সারের অনিয়ম ঠেকাতে হলে সবাইকে সচেতন হতে হবে। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী আছে যারা লাভের আশায় অনিয়ম করার চেষ্টা করবে। তাদের সম্মিলিতভাবে প্রতিহত করতে হবে এবং কৃষকদের সচেতন হতে হবে। কেউ সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে সার বিক্রি করলে সঙ্গে সঙ্গে কৃষি অফিসে জানাতে হবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com