বাংলাদেশের পূর্ব সীমান্তে এককালের বার্মা বর্তমান মিয়ানমারের অবস্থান। দেশটির বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা জন গোষ্ঠিকে অত্যাচার নির্যাতন ও জাতিগতভাবে নিধনের অভিযোগে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা চলছে। তাদের নির্যাতনের শিকার লাখ লাখ রোহিঙ্গা মুসলমান বাংলাদেশে এবং হিন্দু ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। এছাড়াও ইন্দোনেশিয়া, মালেশিয়াসহ পৃথিবীর অনেক দেশে অভিবাসী জীবনযাপন করছেন সর্বস্ব হারানো অনেক রোহিঙ্গা। মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকার শুধু সাবেক আরাকান বর্তমান রাখাইনে মানবতা বিরোধী অপরাধ করছে না। প্রায় প্রত্যেক প্রদেশেই তারা নির্যাতন চালাচ্ছে। নির্যাতনে অতিষ্ঠ মানুষ জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলন করছে। স্বাধীনতাকামী সেই সকল জনগোষ্ঠির বিরুদ্ধে মিয়ানমারের জান্তা সরকার নিধন যজ্ঞ চালাচ্ছে। ফলে এই অঞ্চলের শান্তি স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়েছে। দৈনিক খবরপত্রসহ জাতীয় বিভিন্ন দৈনিকের খবরে প্রকাশ, বান্দরবানে মিয়ানমার সীমান্তে উত্তেজনা বাড়তে থাকায় সেখানে সীমান্ত সড়কের নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। গত ১৫ দিন থেকে এই সড়কটি নির্মাণ কাজ বন্ধ আছে। অন্যদিকে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সীমান্তে লোকজনদের যাতায়াত বন্ধ করে দিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। মাঝে মাঝেই সীমান্তের ওপার হতে গুলির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। তুমব্রু বাজারের বিপরীতে মিয়ানমার সীমান্তে এসব গুলির আওয়াজ হচ্ছে। এছাড়া রেজু সীমান্তের কাছে হেলিকপ্টার টহল দিতে দেখা গেছে। সকাল থেকে সীমান্তে গুলির আওয়াজ শোনার পর সীমান্তের জিরো লাইনে বসবাসকারী রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। বর্ডার গার্ড বিজিবি সীমান্তের নিরাপত্তা জোরদার করার পাশাপাশি টহল বাড়িয়েছে।
নিরাপত্তার কারণে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ বিভাগে পড়েছে। সীমান্ত এলাকার পাহাড়গুলো থেকে গাছ, বাঁশ, লাকড়ি ইত্যাদি সংগ্রহকারী দিনমজুররা এখন সেখানে যেতে পারছে না। ঘুনধুম ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মো: জাহাঙ্গীর আজিজ জানিয়েছেন, গত আগস্ট মাসের ২৫ তারিখ থেকে প্রায় দুই সপ্তাহ পর্যন্ত সীমান্ত এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। ঘুনধুম, তুমব্রু, বাইশফাঁড়ী আত, ফাত্রাঝিড়ি, রেজু আমতলিসহ বিভিন্ন এলাকায় এখন থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। লোকজনদের সীমান্ত এলাকায় যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী। এদিকে সেনাবাহিনীর প্রকৌশল ব্যাটেলিয়ন ২০ ইসিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল সৈয়দ রিয়াসত আজিম জানিয়েছেন, সীমান্ত উত্তেজনার কারণে গত ১৫ দিন থেকে সীমান্ত সড়কের নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সড়কটির নির্মাণ কাজ পুনরায় শুরু হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। বান্দরবানের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, সীমান্তে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। স্থানীয় লোকজনদের সীমান্ত এলাকায় না যেতে পুলিশের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। উল্লেখ্য, মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী আরাকান আর্মির সাথে সে দেশের সেনাবাহিনী ও সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ চলছে। এ সংঘর্ষে উভয়পক্ষে বেশ হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বলে খবর পাওয়া গেছে।’আমরা আশা করি সরকার বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলে তুলবে এবং মিয়ানমারের আগ্রাসন প্রতিরোধে দ্রুত যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এখনই সতর্কতা প্রয়োজন। আর এক মুর্হূত বিলম্ব করা ঠিক হবে না।