বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে বিএনপি। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে মোয়াজ্জেমের কফিন বিএনপির নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয় এবং একটি মঞ্চে রাখা হয়। এসময় দলটির নেতাকর্মীরা বুধবার রাতে মারা যাওয়া এই বিএনপি নেতাকে শেষবার দেখেন। বিএনপির পক্ষ থেকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও নজরুল ইসলাম খান প্রবীণ এই নেতার কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন এবং দলীয় পতাকা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এর আগে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে তার প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে শতাধিক দলীয় নেতাকর্মী অংশ নেন।
জানাজার আগে সংক্ষিপ্ত ভাষণে খন্দকার মোশাররফ বিভিন্ন আন্দোলন ও দেশের মুক্তিযুদ্ধে মোয়াজ্জেম হোসেনের ভূমিকার কথা স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, আমাদের সত্যিই শাহ মোয়াজ্জেমের মতো একজন নির্ভীক নেতা দরকার, কারণ আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন করছি। কিন্তু তিনি অনন্তকালের জন্য আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। তিনি জানান, শাহ মোয়াজ্জেমের সারা জীবনের আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাস অনুসরণ করে সফল আন্দোলন করে মোয়াজ্জেমকে জনগণের মাঝে বাঁচিয়ে রাখবে তারা। মোশাররফ বলেন, ‘আমি মৃত ব্যক্তির স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাই এবং তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। আমি শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতিও সমবেদনা জানাই।’
জানাজা শেষে মোয়াজ্জেমের লাশ মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে নিয়ে যাওয়া হয় যেখানে তার দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। রাজধানীর গুলশানের আজাদ মসজিদ প্রাঙ্গণে তৃতীয় ও শেষ জানাজা শেষে রাজধানীর বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।
উল্লেখ্য, বুধবার রাতে গুলশানের বাসায় ৮৩ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন।
তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
১৯৩৯ সালের ১০ জানুয়ারি মুন্সীগঞ্জের দোগাছি গ্রামে তার জন্ম। শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ১৯৫২ থেকে ১৯৭০ সালের মধ্যে ভাষা আন্দোলন এবং দেশের স্বাধীনতার জন্য বিভিন্ন সংগ্রামে অংশগ্রহণের কারণে তিনি প্রায় ১৮ বছর জেলে কাটিয়েছেন। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংসদের চিফ হুইপ হিসেবে দায?িত্ব পালন করেন এবং পরে ১৯৭৫ সালে খন্দকার মোশতাক আহমেদের মন্ত্রিসভায় মন্ত্রী হিসেবে যোগদান করেন। পরে এইচ এম এরশাদের শাসনামলে তিনি জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন এবং দলের মহাসচিব ও দেশের উপ-প্রধানমন্ত্রী হন। মোয়াজ্জেম ২০০৬ সালে ফের বিএনপিতে যোগ দেন এবং মৃত্যুর শেষ দিন পর্যন্ত দলের সাথেই ছিলেন।
সূত্র : ইউএনবি
চিনবিদায় সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী বিএনপি নেতা শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন:
সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও বর্ষীয়ান রাজনীতিবীদ শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন আর নেই। গত বুধবার রাতে গুলশানের নিজ বাসভবনে তিনি মারা যান (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ১৯৩৯ সালের ১০ জানুয়ারি মুন্সীগঞ্জ জেলার দোগাছি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ছাত্র জীবন থেকেই রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি ৬ দফা আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণসহ তৎকালীন সকল রাজনৈতিক কর্মকা-ে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।
১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তৎকালীন ঢাকা-৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারের হুইপ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি খন্দকার মোশতাক আহমেদের মন্ত্রিসভার একজন সদস্য ছিলেন। এরপর তিনি হুসেইন মুহাম্মাদ এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেন। কিন্তু তাকে ১৯৯২ সালে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। তারপর তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলে যোগ দেন। তিনি দলটির ভাইস-চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন।