কক্সবাজারের দ্বীপময় মহেশখালী উপজেলা পাহাড়ি জনপদ শাপলাপুর ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নেই আঁকাবাকাসহ উঁচুনিচু টিলা আর পাহাড়ের জনপদ পশ্চিমে অসংখ্যা টিলা আর পাহাড়ের সারি। চট্টগ্রাম উপকূলীয় বনবিভাগের আওতাধীন মহেশখালীর রেঞ্জের শাপলাপুর বিট কর্মকর্মতা বৃক্ষপ্রেমী রাজিব ইব্রাহিমের উৎসাহেই পাহাড়ে চড়তে হলো। তার চোখেমুখে প্রচুর উৎসাহ, সাফল্য ও উদ্দীপনার ছাপ। পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছার আগেই বোঝা যাচ্ছিল, সবুজের সমারোহে প্রবেশ করতে যাচ্ছি। পাহাড়ের মাথায় উঠে যেদিকেই তাকাই শুধু সবুজ আর সবুজে ভরপুর, প্রাণভরে নিঃশ্বাসের স্থান। পাশাপাশি সব কটি পাহাড়ে সুফল প্রকল্পের নিজের স্বপ্নের বাগান গড়েছেন শাপলাপুর বিট কর্মকর্তা। এ সবুজের রাজত্ব শুধু চাকরি বা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারি হিসাবে গড়ে তোলেননি, বৃক্ষের প্রতি রয়েছে তার অনড় ভালোবাসার এক সবুজে ঘিরা বাস্তময় গল্প। এই বিট কর্মকর্তা এ বৃক্ষপ্রেম শুধু পাহাড়ের অবস্থার পরিবর্তন করেনি, একই সঙ্গে সরকারের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেও তার ভূমিকা অপরিসীম। তাঁর অনুভূতিতে প্রকাশ পায়, প্রকৃতি হাতছানি দিয়ে ডাকে হারাতে ইচ্ছে হয় পাহাড়ি নদীর বাঁকে, দুর্গম পথ পেরিয়ে পাহাড় জয়ের নেশা প্রকৃতির একান্ত সান্নিধ্যে নিজেকে বিলিয়ে দেন। অনুসন্ধানে দেখে গেছে, চাকরি আগে শৈশব থেকেই সবুজের প্রতি অগাধ ভালোবাসা বৃক্ষপ্রেমী রাজিবের। সরকারী কর্মচারিদের নিয়মিত বদলিতে তিনি হয়তো কোন একদিন চলে ও যেতে পারে তবে তার সফল বনায়নে স্মৃতিটুকু থেকে যাবে এই পাহাড়ী জনপদে এমনটি বলছেন স্থানিয় বাসিন্দারা। জানাগেছে, উপজেলার শাপলাপুর পাহাড়ে এক সময় বনদস্যুদের ত্রাশ ছিলোনা! গাছগুলিও গাছ কাটে নিধন করতঃ বনাঞ্চল। রাজিব ইব্রাহিম শামসুল আলম সরকার নামে এক কর্মকর্তা বদলি হলে তাঁর স্থলে যোগদান করার পর থেকে পাল্টে যায় এই এলাকার চিত্র। তিনি গাছ কাটা ও পাহাড় কাটা বন্ধ করে ভাল পরিবেশ চাইতেন, যেখানে পাহাড় থাকবে, সেখানে সবুজায়নে রূপ ছড়ায়। পশুপাখির নিরাপদ আবাসে কিচিমিচির শব্দের কলকাকলিতে ভরে উঠবে প্রকৃতি বৈচিত্র্য। ওই বিট কর্মকর্তার স্বপ্নকে বাস্তব রূপে রূপান্তর করতে “বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে বাস্তবায়িত ‘সুফল’ প্রকল্প। টেকসই বন ও জীবিকা (সুফল) প্রকল্প এর আওতায় ২০২১ ও ২০২২ অর্থ বছরে ২শ ৪৫ হেক্টর মিশ্র প্রজাতির দ্রুত বর্ধনশীল বাগান, ধীর বর্ধনশীল বাগান সহ ১২০ প্রজাতির বাগান সৃজন করা হয়েছে বলে জানাগেছে। সুফল বনায়নে দেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ শাপলাপুরসহ মহেশখালীর পাহাড় সবুজায়নে ভরে উঠেছে। টেকসই বন ও জীবিকা (সুফল) প্রকল্পের আওতায় এই বনায়ন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে রোপিত গাছগুলি প্রকৃতিক রীতিতে ডালপালা মেলে বেড়ে উঠেছে। গাছ বড় হওয়ায় সাথে সাথে বনের লতাপাতা কেটে বন পরিস্কার পরিচ্ছন্নে নিয়োজিত শ্রমিকেরা। এদিকে জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবিকার উৎস হিসেবে বন বিভাগের মাঠ পর্যায়ের এই কর্মকর্তা গাছের যত্মসহকারে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। বৃক্ষের পরিচর্যায় বনকর্মীরা অবহেলা না করে ব্যস্ত সময় পার করায় তাঁদের কর্মে বনপ্রেমি কর্মকর্তা সাধারণ মানুষের নিকট প্রশংসিত হয়েছেন। তিনি জানান, যারা সবুজায়নকে ভালোবাসে তাদেরও তিনি মনেপ্রাণে ভালোবাসেন। তিনি সবুজায়ন ও পাহাড় খেকোদের বিরুদ্ধে জিরোটলারেন্স ঘোষনা করে এসব সবুজবনায়ন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছেন।