বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:০২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
শ্রীমঙ্গলে আগাম জাতের আনারসের বাম্পার ফলন, ন্যায্য দাম পেয়ে খুশি চাষিরা ধনবাড়ীতে ৬ ওষুধ ব্যবসায়ীকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানা শেরপুরে কানাডা প্রবাসীর জমি বেদখলের অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন কালিয়ায় ক্লাইমেট-স্মার্ট প্রযুক্তি মেলা বাকাল মোহাম্মাদিয়া জামে মসজিদের উন্নয়নমূলক কাজের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান বদলগাছীতে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের বাছাই কার্যক্রম নগরকান্দায় সামাজিক সম্প্রীতি সমাবেশ গরমে স্বস্তি দিতে বাগেরহাটে বিশুদ্ধ ঠান্ডা পানি, স্যালাইন ও শরবত বিতরণ বন্দরে যত্রতত্র পার্কিং,জ্যামে নাকাল জনজীবন, মারাত্মক দুর্ঘটনার আশংকা রায়গঞ্জে চার জয়িতার সাফল্য গাঁথা

ভোলায় পেঁপে চাষে ইউপি চেয়ারম্যানের সফলতা

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২

জেলার উপজেলা সদরে পেঁপে চাষ করে সফলতা পেয়েছেন ইয়ানুর রহমান বিপ্লব নামের স্থানীয় এক ইউপি চেয়ারম্যান। সদর উপজেলার বাপ্তা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও কৃষক বিপ্লব রাজাপুর ইউনিয়নের চর মনসা গ্রামে সবুজ বাংলা কৃষি খামারে দুই একর জমিতে গ্রীণ লেডি ও টপ লেডি জাতের পেঁপে চাষে সফল হন। তার খামারের চারপাশের বাঁধের উপর চার থেকে ছয় ফুটের মধ্যে উচ্চতায় প্রতিটি গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে সবুজ ও হলুদ রংয়ের অসংখ্য পেঁপে। স্থানীয় বাজারে পাকা পেঁপের ব্যাপক চাহিদা থাকায় পাকা পেঁপে বিক্রি করছেন তিনি। ভালো ফলন পেয়ে খুশি কৃষক বিপ্লব।
সফল কৃষক বিপ্লব বাসস’কে জানান, তার প্রত্যেক গাছে শতভাগ পেঁপের ফলন হয়েছে। গত কয়েক দিনে প্রায় দুই লাখ টাকার পাকা পেঁপে বিক্রি করেছেন। কারণ কাচা পেঁপের চেয়ে পাকা পেঁপের দাম ও কদর বেশি। এখনো গাছে যে পরিমান পেঁপে রয়েছে তা প্রায় ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা তার।
তিনি জানান, প্রথমে খামারের উঁচু বাঁধের ওপরের প্রায় দুই একর জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ৩০ টাকা করে দুই হাজার পেঁপের চারা কিনে রোপণ করেন তিনি। তাঁর এ পেঁপে বাগান করতে সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে প্রায় ৮ লাখ টাকা। গাছ লাগানোর তিন মাসের মাথায় প্রতিটি গাছে প্রচুর পরিমাণ পেঁপের ফলন আসে। কিন্তু তিনি পাকা পেঁপে বিক্রি করার জন্য আরো তিন মাস অপেক্ষা করেন।
চেয়ারম্যান আরো জানান, সর্বশেষ ছয় মাস পর থেকেই ধারাবাহিকভাবে দুই দিন পর পর ৫ থেকে ৭ মণ করে পাকা পেঁপে বিক্রি করছেন তিনি। বেপারীরা খামারে এসেই প্রতি কেজি পেঁপে ৭০ টাকা দরে কিনে নিয়ে যাচ্ছে। তাঁর এ পেঁপে বাগান থেকে এ পর্যন্ত প্রায় দুই লাখ টাকার পাকা পেঁপে বিক্রি করেছেন। বর্তমানে প্রতিটি গাছে ৪০ থেকে ৪৫ কেজি করে পেঁপে রয়েছে। তিনি আশাবাদী প্রতিটি গাছ থেকে অন্তত ১০০ কেজি করে পেঁপে বিক্রি করতে পারবেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০০৫ সালে প্রায় ৩০ একর জমির উপর বিপ্লব গড়ে তোলেন সবুজ বাংলা কৃষি খামার। শখের বসে খামারটি গড়ে তুললেও ২০১০ সালে বাণিজ্যিকভাবে যাত্রা শুরু করে। খামারটিতে ধান, আদা ও পেঁয়াজ, মাছ চাষের পাশাপাশি বিভিন্ন ফলেরও গাছ লাগিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির আম, লিচু, মাল্টা । আদর্শ এ খামারটি থেকে প্রায় বিভিন্ন ধরণের ফসল ও ফলের বাম্পার ফলন পেয়েছেন একাধিকবার। যার জন্য ২০২১ সালে ভোলা জেলায় ও ২০২২ সালে বরিশাল বিভাগে শ্রেষ্ট কৃষক হয়েছেন ইয়ানুর রহমান। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে খামারটি পরিদর্শনে করেন কৃষি মন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।
খামারে পেঁপে কিনতে আসা বেপারী মো. ইমান আলী জানান, বিগত দিনে ভোলার বাহির থেকে পাকা পেঁপে কিনে এনে স্থানীয় চাহিদা মেটানো হতো। অধিকাংশ পেঁপেতে স্প্রে করার কারণে ভোলায় আসতে আসতে অনেক পেঁপেই নষ্ট হয়ে যেতো। আবার সার-কীটনাশক ব্যবহারের ফলে পেঁপেগুলো মিষ্টি ও স্বাদ কম হওয়ায় ক্রেতাদের তেমন আগ্রহ ছিলো না।
তিনি আরো জানান, বর্তমানে তারা ভোলার বাহির থেকে পেঁপে না এনে সবুজ বাংলা কৃষি খামার থেকে পাকা পেঁপে কিনে বাজারে বিক্রি করছেন। এতে পরিবহন খরচও বেঁচে যাচ্ছে। এ পেঁপেগুলো অধিক মিষ্টি ও সুসাধু হওয়ায় ক্রেতাদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই তারাও এ পেঁপে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন।
পেঁপে বাগানের শ্রমিক মো. ইলিয়াছ জানান, পেঁপের আবাদ করতে তেমন কোনো সার-ওষুধের প্রয়োজন হয় না। শুধু খেয়াল রাখতে হয় যাতে করে ছত্রাকে আক্রমণ না করে। ছত্রাকে আক্রমণ করলেও সঠিক সময়ে ওষুধ ব্যবহার করলে আর সমস্যা হয় না। এছাড়াও অন্যান্য ফসল ও ফলের চেয়েও পেঁপের আবাদ করতে কষ্ট কম। এবং খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে এটি থেকে লাভবান হওয়া যায়।
সফল কৃষক বিপ্লব আরো বলেন, যদি কেউ পেঁপের বাণিজ্যিকভাবে চাষ করতে চায়, তাহলে তাকে উচ্চফলণশীল জাত নির্বাচন করতে হবে। এছাড়া যে জমিতে পানি জমবে না এমন জমিতে পেঁপে চাষ করতে হবে। চারা রোপণের ৩ মাসের মধ্যেই ফলন আসা শুরু করে। আর পাকা পেঁপের জন্য ৬ মাস অপেক্ষা করতে হয়। পেঁপে গাছ সাধারণত দুই বছর পর্যন্ত ফল দেয়। আগামীতে পেঁপের আবাদ আরো বৃদ্ধির কথা জানান তিনি।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ রিয়াজউদ্দিন জানান, ইয়ানুর রহমান বিপ্লব একজন আদর্শ কৃষক। এর আগেও তিনি বিভিন্ন ফসল করে সফলতা পেয়েছেন। এবারও পেঁপে চাষ করে সফলতা পেয়েছেন। তাঁর চাষ করা পেঁপেগুলো আকারে বেশ বড় ও খেতে খুব মিষ্টি। ভোলায় ছোট পরিসরে কিছু কিছু স্থানে পেঁপের আবাদ হলেও এটিই সবচেয়ে বড় পেঁপের বাগান। তিনি জানান, ভোলা সদর উপজেলায় মোট ৩০ হেক্টর জমিতে পেঁপের আবাদ হয়ে থাকে। কৃষকরা যদি এ ইউপি চেয়ারম্যানের মতো পেঁপে চাষে করেন, তাহলে ভোলায় চাষ করা পেঁপে দিয়ে স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে জেলার বাহিরেও পাঠানো যাবে বলে মনে করেন তিনি। কৃষি বিভাগ জানায়, ভোলার মাটি ও আবহাওয়া পেঁপে আবাদে বেশ উপযোগী। পেঁপে চাষের জন্য শুধু একটা বিষয়ই গুরুত্ব দিতে হবে, সেটি হলো উঁচু যায়গা। কৃষকরা যদি ধানসহ অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি পরিকল্পিতভাবে পেঁপের আবাদ করে তাহলে অল্প দিনে ভালো লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com