শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০২:১৩ পূর্বাহ্ন

বেঁচে ফিরেছে ৩ বছরের দীপু, মায়ের লাশ মিললেও বাবার মেলেনি

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শুক্রবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২২

মহালয়া উপলক্ষ্যে ধর্মসভায় যাওয়ার আনন্দে বিভোর ছিল তিন বছরের দীপু। এ জন্য সকাল থেকে নতুন কাপড় পরে প্রস্তুত হয়ে ছিল সে। দুপুর গড়ালে বাবা-মায়ের সঙ্গে সেও আউলিয়া ঘাটে এসে পৌঁছায়। গন্তব্য ঘাটের অপরপ্রান্তে বদেশ্বরী মন্দির। কিন্তু মন্দিরে পৌঁছার আগেই ঘাট থেকে ছেড়ে আসা তাদের বহনকারী নৌকা ডুবে যায় করতোয়ায়। সাম্প্রতিক সময়ের ভয়াবহ এই নৌ-দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হাত থেকে দীপু অলৌকিকভাবে ফিরে আসতে পারলেও প্রাণ হারিয়েছেন তার মা রুপালি রানী। বাবা ভূপেন্দ্রনাথের মরদেহ এখনও খুঁজে পাননি উদ্ধারকর্মীরা। স্বাভাবিকভাবে সেদিনের সেই ভয়াবহ স্মৃতি হয়তো মুছে যাবে ছোট্ট দীপুর মানসপট থেকে। সে শুধু জানে বাবা মন্দিরে গেছে পূজা দিতে, ফিরে আসবে একটু পরেই।
দীপু পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার হাতিডুবা গ্রামের বাসিন্দা। অন্যের জমিতে বাস করে তার পরিবার। বৃদ্ধ দাদা-দাদিসহ ৭ সদস্যের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন ভূপেন্দ্রনাথ রায়। পুরো পরিবার আগলে রাখতেন মা রুপালি রানী। দুজনকে হারিয়ে অনিশ্চয়তায় দীপুর পরিবার। বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকালে দীপুর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় শোকের মাতম কাটেনি। বাড়ির প্রত্যেকেই যেন শোকে নিমজ্জিত। বাবা-মাকে হারিয়ে দিশেহারা দীপুর বড় দুই ভাই এসএসসি পরীক্ষার্থী দীপন রায় (১৭) এবং সপ্তম শ্রেণী পড়ুয়া পরিতোষ (১৩)। একমাত্র ছেলের মৃত্যুতে কান্না থামছে না দীপুর দাদি লক্ষ্মী রানীর। তাদের সমবেদনা জানাতে এসে নিস্তব্ধ প্রতিবেশীরাও।
যেভাবে বেঁচে ফিরল দীপু: তোমার নাম কী? অকপটে জবাব মিললো- দীপু। তোমার বাবা কোথায়? প্রশ্ন করতেই এবারও মিললো উত্তর- মন্দিরে গেছে আমার জন্য খেলনা আনতে। সেদিন করতোয়ায় কী ঘটেছে কিছুই মনে নেই ওর। মনে থাকার কথাও নয়। কারণ দীপুর যখন জ্ঞান ফেরে তখন সে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। কীভাবে পৌঁছলো সেখানে ছোট্ট দীপু। জানালো তাদের প্রতিবেশী সৌরভ। সৌরভ জানান, সেদিন মহালয়ার অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য করতোয়ার আউলিয়া ঘাটে সেও গিয়েছিল। দীপুদের বহন করা নৌকাটিতে যাত্রী বেশি হওয়ায় সে পরের নৌকার জন্য অপেক্ষা করে। কিন্তু মাঝ নদীতে যখন নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে তখন সৌরভ নেমে পড়ে উদ্ধারকাজে।
সৌরভ বলেন, ‘আমি ঘাটে মাঝি ছাড়া একটি ছোট ডিঙ্গি নৌকা দেখি। সেটা নিয়েই এগিয়ে যাই। আমার নৌকার সামনেই দেখি স্রোতে ভাসছে দিপু। তাকে তড়িঘড়ি করে তুলে পাড়ে এনে দেখি অচেতন। পেটে চাপ দিয়ে পানি বের করি। পরে লোকজনের সহযোগিতায় ওকে দেবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই এবং তার পরিবারকে খবর দেই।’
দেবীগঞ্জ হাসপাতালেও জ্ঞান ফেরেনি দীপুর। চিকিৎসকরা রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করলে সেখানে জ্ঞান ফেরে বাবা-মা হারা এই হতভাগ্য শিশুর।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com