সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০৭:৪৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
দিল্লি বিমানবন্দরে বাংলাদেশী গার্মেন্টসের রফতানি বাড়ায় ভারতীয়দের আপত্তি নকলায় বিএনপির ৪ নেতানেত্রীকে বহিষ্কার পালিয়ে বাংলাদেশে এলেন আরও ৮৮ বিজিপি সদস্য ১২ দিনে পানিতে ডুবে ১২ শিশুর মৃত্যু অর্থবছরের ছয় মাসে রাজস্ব আহরণ প্রায় ১৪ শতাংশ বেড়েছে: অর্থমন্ত্রী চাঁদপুর সেচ প্রকল্প বাঁধের মাটি ইটভাটায় ব্যবহারের অভিযোগ বরিশালে ৮ ঘন্টা বন্ধ থাকার পর অভ্যন্তরীন ও দুরপাল্লার বাস চলাচল শুরু : অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন আপনাদের সহায়তায় সুস্থ জীবন চাই শ্রীমঙ্গলে সদ্যপ্রতিষ্ঠিত নূরে মদিনা মাদরাসার শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা ও লেখাপড়ার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে মতবিনিময় সভা ফুলপুরে চেয়ারম্যান প্রার্থী হাবিবের মিছিল

জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়: আট ঘন্টা অন্ধকার ছিল দেশের অধিকাংশ এলাকা

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৪ অক্টোবর, ২০২২

বিদ্যুৎ সরবরাহের জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের কারণে দেশের বড় একটি এলাকা গতকাল মঙ্গলবার বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েছিল। বেলা দুইটা চার মিনিট থেকে দেশের বড় অংশ বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে পড়ে। জাতীয় গ্রিডে ফল্ট করায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়। এতে নানা সেবা খাতে বিপর্যয় দেখা দেয়।
রাত ১০টার পর রাজধানীর বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে । বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে জেলাগুলোতেও। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এই তথ্য জানিয়েছে। রাজধানীর মিরপুর, মগবাজার, মাদারটেক, রামপুরা, গুলশান, উলন, বসুন্ধরা, ধানমন্ডি, আফতাবনগর, বনশ্রী, ধানমন্ডি (আংশিক), আদাবর, শেরে বাংলা নগর, তেজগাঁও, মিন্টু রোড, মতিঝিল, কাওরান বাজার, শ্যামপুর, পাগলা, পোস্তগোলা, সিদ্ধিরগঞ্জসহ বেশকিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে। মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে বলা হয়, ঢাকার মিরপুর, মগবাজার, মাদারটেক, রামপুরা, গুলশান, উলন, বসুন্ধরা, ধানমন্ডি, আফতাবনগর, বনশ্রী, ধানমন্ডি (আংশিক), আদাবর, শেরে বাংলা নগর, তেজগাঁও, মিন্টু রোড, মতিঝিল, শ্যামপুর, পাগলা, পোস্তগোলা, সিদ্ধিরগঞ্জসহ আরো কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে।
ইতোমধ্যে টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, জামালপুর, মানিকগঞ্জে বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল হয়েছে এবং গাজীপুর, চট্টগ্রাম, সিলেট, হবিগঞ্জ , মৌলভীবাজার, নারায়ণগঞ্জ ও সিদ্ধিরগঞ্জের আংশিক এলাকায় সরবরাহ চালু হয়েছে।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, যমুনা সেতুর পূর্ব পাশের ন্যাশনাল গ্রিডে দুপুর ২টা ৫ মিনিটে বিপর্যয় হয়েছে। বিবিসি সূত্রে প্রকাশ,এর ফলে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের বড় একটি এলাকা বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েছে। তিনি জানান, কোন গ্রিডে এবং কেন এই সমস্যার তৈরি হয়েছে, তা এখনো তারা বুঝতে পারছেন না। তবে তারা সেটি সমাধানের চেষ্টা করছেন। ইতোমধ্যে ময়মনসিংহসহ কয়েকটি এলাকার বিদ্যুৎ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। কিন্তু পুরোপুরি স্বাভাবিক করতে সময় লাগবে বলে আভাস দিয়েছেন এই কর্মকর্তা। দেশের বিভিন্ন স্থানে থাকা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো থেকে জাতীয় গ্রিডের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়ে থাকে। সংরক্ষণের সুযোগ না থাকায় জাতীয় গ্রিডের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
দেশে সর্বশেষ ২০১৭ সালের ৩ মে আকস্মিক গ্রিড বিপর্যয়ে উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমের ৩২টি জেলা কয়েক ঘণ্টা ধরে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন ছিল। তার আগে ২০১৪ সালের পহেলা নভেম্বর বড় ধরনের বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছিল। তখন বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে একাধিক রিপোর্টে বলা হয়, ভেড়ামারায় জাতীয় গ্রিডে বাংলাদেশ ও ভারতের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনে সংযোগস্থলে ওই ত্রুটি থেকেই বিভ্রাটের শুরু।
ঢাকা মহানগরীর আংশিকসহ ৬ জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক: ইউএনবি সূত্রে প্রকাশ,রাজধানীর মানিকনগর ও হাসনাবাদ গ্রিড সাবস্টেশনের অধীনে ঢাকা মহানগরীর কিছু এলাকায় এবং সিলেট, চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহের বেশ কয়েকটি জেলায় সন্ধ্যা ৭টায় বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরায় শুরু হয়েছে। কিন্তু উলন গ্রিড সাবস্টেশনের আওতাধীন এলাকায় সরবরাহ চালু করা যায়নি। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) কর্মকর্তাদের মতে, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ শহরের সব এলাকায় এবং অন্যান্য জেলার বিদ্যুৎ সরবরাহে আরো দুই ঘণ্টা সময় লাগতে পারে। গতকাল মঙ্গলবার পিজিসিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা বদরুদ্দোজা সুমন ইউএনবিকে বলেন, ‘আমরা আশা করছি রাত ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহের স্বাভাবিক অবস্থা পুরোপুরি ফিরে আসবে। তিনি বলেন, সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, জামালপুর, মানিকগঞ্জ এবং চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের সব জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি চালু হয়েছে। এর আগে জাতীয় পাওয়ার গ্রিড বিকল হওয়ার পর আজ বিকাল ৫টার দিকে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনসহ ঢাকার কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরোপুরি স্বাভাবিক হবে বলে আশা প্রকাশ করেছিলেন। দুপুর ২টা ৫ মিনিটে জাতীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন গ্রিড ব্যর্থ হলে দেশের উত্তরাঞ্চলের কিছু অংশ ছাড়া সারা বাংলাদেশে ব্ল্যাকআউট সৃষ্টি করে।
টেলিকম পরিষেবা ব্যাহত: অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশ (এএমটিওবি) জানিয়েছে, জাতীয় পাওয়ার গ্রিড বিপর্যয়ের কারণে দেশের কিছু অংশে টেলিকম পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) এক বিবৃতিতে সংস্থাটি জানায়, ‘জাতীয় পাওয়ার গ্রিড বিপর্যয়ের কারণে দেশের কিছু অংশে টেলিযোগাযোগ পরিষেবা ব্যাহত হতে পারে। এই অসুবিধার জন্য আমরা দুঃখিত।’ জাতীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন গ্রিডে বিপর্যয় হওয়ায় এদিন দুপুর ২টা ৫ মিনিট থেকে দেশের উত্তরাঞ্চলের কিছু অংশ বাদে সারা দেশ বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি) ও পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) কর্মকর্তাদের মতে, দেশের পূর্বাঞ্চলে, বিশেষ করে যমুনা নদীর পূর্ব দিকের জেলাগুলোর কোথাও কোথাও ট্রান্সমিশন লাইন ট্রিপ হয়েছে। পিজিসিবির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, রংপুর বিভাগের মাত্র কয়েকটি জেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। গ্রিড বিকল হয়ে যাওয়ায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল ও ময়মনসিংহ বিভাগে একের পর এক কেন্দ্র বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
বিপিডিবির পরিচালক (জনসংযোগ) শামীম হাসান জানান, বিপিডিবি এবং পিজিসিবি উভয়ের প্রকৌশলীরা বিদ্যুৎ সঞ্চালন পুনরুদ্ধারের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন। দুপুর ২টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত ওই বিভাগের বেশ কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে। পিজিসিবি কর্মকর্তারা অবশ্য বলেছেন যে তারা গ্রিড বিপর্যয়ের সঠিক কারণ ও অবস্থান এখনও শনাক্ত করতে পারেনি। জাতীয় পাওয়ার গ্রিড ব্যর্থতা বাংলাদেশের টেলিকম পরিষেবাকে কীভাবে প্রভাবিত করে তা এখন দেখার বিষয়। ২০১৭ সালের ২ মে দেশের ৩২টি জেলায় গ্রিড বিপর্যয়ের সর্বশেষ ঘটনা ঘটেছিল।
এটিএম থেকে টাকা তুলতে সমস্যা: জাতীয় গ্রিডের পূর্বাঞ্চলে (যমুনা নদীর এপার) বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে ব্যাংকের এটিএম সেবায় বিঘœ ঘটছে। বেশির ভাগ ব্যাংকের এটিএমে জেনারেটর বা বিকল্প বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন ব্যাংকের অনেক গ্রাহক। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ২টা ৫ মিনিটে একযোগে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এতে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও সিলেট অঞ্চলের বিস্তৃত এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। সন্ধ্যার পর কারওয়ান বাজারের বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম বুথ ঘুরে কিছু বুথ বন্ধ পাওয়া যায়। বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ায় ঢাকার বাইরের অনেক এটিএমও অচল হয়ে পড়ে। আর যেসব এটিএম বুথ চালু ছিল, তাতে ভিড় দেখা গেছে। কারওয়ান বাজারের বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএমের মধ্যে চালু ছিল ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ফাস্ট ট্র্যাক সেবা, আইএফআইসি, ব্র্যাক, অগ্রণী, এবি ও ইস্টার্ন ব্যাংকের এটিএম বুথ। আর বন্ধ পাওয়া যায় ইসলামী ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, প্রিমিয়ার, সাউথইস্ট ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের এটিএম বুথ।
ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ফাস্ট ট্রাকে আছে একাধিক এটিএম বুথ। পাশাপাশি অন্য ব্যাংকের গ্রাহকেরাও প্রতিবার বাড়তি ১৫ টাকার বিনিময়ে টাকা তুলতে পারেন। এ জন্য ফাস্ট ট্র্যাকে ভিড় দেখা গেছে।
ফার্স্ট ট্রাকের নিরাপত্তা কর্মীরা জানান, দুপুর থেকেই ভিড় শুরু হয়েছে, অন্যদিন এমন ভিড় থাকে না, তাই যেকোনো সময়ে টাকা শেষ হয়ে যেতে পারে।
ব্যাংকের এটিএম সেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা জানান, সব এটিএমে বিকল্প বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা যায়নি। আবার বিকল্প ব্যবস্থা থাকলেও তা সচল ছিল না। এমন সংকটের কারণে এখন বিকল্প ব্যবস্থার বিষয়টি ভাবতে হচ্ছে। এদিকে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে মুঠোফোনের নেটওয়ার্ক বিভ্রাট ঘটে। এতে অনেক ব্যাংকের পয়েন্ট অব সেলস (পিওএস) যন্ত্রের লেনদেনেও সমস্যা হয়। ফলে অনেক ক্ষেত্রে কার্ডের পরিবর্তে নগদ টাকায় লেনদেন করতে হয়। দেশে এটিএম বুথ আছে ১ লাখ ৩০ হাজার, এর মধ্যে প্রায় ৯ হাজার শহর এলাকার; আর পিওএস আছে এক লাখ দুই হাজার। এর মধ্যে শহর এলাকায় আছে ৯৩ হাজার। এদিকে বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে বিভিন্ন সুপারশপও কিছু সময়ের জন্য বন্ধ ছিল। কারণ, জেনারেটর দিয়ে এত দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব নয়। এতে ক্ষতির মুখে পড়েন ব্যবসায়ীরা। খুচরা বিক্রয় প্রতিষ্ঠান স্বপ্নের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, পিওএস যন্ত্র চলছিল না। আবার জেনারেটর এত দীর্ঘ সময় চালু রাখা যায়নি। ফলে মাঝে সেবা বন্ধ রাখতে হয়েছে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com