করোনাভাইরাসের এই সময়ে মানুষের কাজ, চলাচল সবকিছু কমে গেলেও বর্ষাকালের তুলনায় কমেনি বায়ু দূষণ। গত বছরের তুলনায় বৃষ্টি বেশি হলেও বেড়েছে দূষণ। সড়কে পুরনো যান চলাচল, খোঁড়াখুঁড়ি আর খোলা অবস্থায় সড়কের মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নকেই এর জন্য দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। মঙ্গলবার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বের বায়ুমান যাচাই বিষয়ক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘এয়ার ভিজ্যুয়াল’-এর বায়ুমান সূচক (একিউআই) ইনডেক্সে ২৩ নম্বরে এসেছে ঢাকা। তবে বর্ষাকাল হিসেবে গত বছরের আগস্ট মাসে যেখানে বায়ুমানের সূচক ছিল গড়ে ৭৮, সেখানে চলতি বছর তা বেড়ে হয়েছে ৮০। অথচ গত বছরের তুলনায় এবার কাজ, যান চলাচল কম হয়েছে। অন্যদিকে গত বছরের তুলনায় এ বছর বৃষ্টিও বেশি হয়েছে। আবহাওয়া অধিদফতরের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, গত বছর স্বাভাবিকের তুলনায় কম বৃষ্টি হয়েছে। চলতি বছর বৃষ্টি যা হচ্ছে তা বেশি। প্রতিবছর এই সময় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টি হয়। এবার মৌসুমি বায়ু অনেক বেশি সক্রিয়। মে মাস থেকে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারে এই বায়ুর প্রভাব। যে কারণে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হবে। তাই বারবার সতর্ক সংকেতও দিতে হচ্ছে। তবু কেন এবার দূষণের মাত্রা বেশি, জানতে চাইলে বায়ুদূষণ বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক ড. কামরুজ্জামান মজুমদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, করোনার কারণে মানুষ কম বের হয়েছে, যান চলাচল কমেছে। তবে দূষণ বাড়ার প্রধান কারণ মেগা প্রকল্পগুলো। এছাড়া সার্ভিসিং ছাড়া পুরনো যান চলাচল এবং ব্যারিকেড না দিয়ে রাস্তার কাজ করার কারণে দূষণ কমানো যাচ্ছে না। এ কারণে শীতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ছয় ধরনের পদার্থ এবং গ্যাসের কারণে দূষণের মাত্রা বেড়ে যায়। এরমধ্যে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ধূলিকণা অর্থাৎ পিএম ২.৫ কে ঢাকায় দূষণের জন্য বেশি দায়ী করা হয়। ক্ষতিকর ছয় ধরনের পদার্থের মধ্যে প্রথমেই আছে পিএম (পার্টিকুলেটেড ম্যাটার) ২.৫ অথবা ২ দশমিক ৫ মাইক্রো গ্রাম সাইজের ক্ষুদ্র কণা। এরপর পিএম-১০ হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। বাকি চারটির মধ্যে আছে সালফার ডাইঅক্সাইড, নাইট্রোজেন, কার্বন মনোক্সাইড এবং সিসা। এই ছয় পদার্থ ও গ্যাসের ভগ্নাংশ গড় করেই বায়ুর সূচক নির্ধারণ করা হয়। সেই সূচককে বলা হয় এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স। দূষণের বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুস সালাম বলেন, করোনা মহামারির প্রথম তিন মাস প্রায় সব বন্ধ ছিল। সে সময়ে দূষণের মাত্রা কমে এসেছিল প্রায় ৮০ ভাগ। কিন্তু এরপর আবার সব ছেড়ে দেওয়া হয়। এই ছেড়ে দেওয়াতে জমে যাওয়া কাজগুলো সবাই দ্রæত সারার চেষ্টা করে। ব্যক্তিগত কাজ, প্রকল্পের কাজ সবই চলছে দ্রæতগতিতে। এদিকে বন্ধের মধ্যেই ড্রেনের কাজ হচ্ছে, রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়িও চলছে পুরোদমে। তাই ধুলোবালি কিছুটা বেড়ে গেছে বলে জানান তিনি।-সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন