রাজধানীর মিরপুর থেকে তুলে নেয়ার দুদিন পর ঢাকা মহানগরীর রমনা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দিয়ে সাবেক ছাত্রদল নেতা আশিককে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে সিটিটিসি। এর আগে গত শুক্রবার বিকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে মিরপুরের বাসা থেকে তাকে তুলে নেয়ার অভিযোগ করে তার পরিবার।
গত শনিবার আশিকের বিরুদ্ধে মামলা করে সিটিটিসি। গতকাল রোববার দুপুরে তাকে আদালতে তুলে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। আদালত দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। মামলার এজাহারের বরাত দিয়ে সূত্র জানায়, আশিকের বিরুদ্ধে ধারা-ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এর ২৪/২৫/৩১/৩৫ তে কাউন্টার টেরোরিজম এন্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম এর সাইবার ইন্টেল টিম সিটি ইন্টেলিজেন্স এনালাইসিস ডিভিশন এর উপপরিদর্শক (নিরস্ত্র) মোহাম্মদ রাহাত হোসেন বাদী হয়ে মামলা করেন। এজাহারে বলা হয়, মামলার গ্রেপ্তারকৃত আসামি মফিজুর রহমান আশিক ৫/১ বাসা, সেকশন ৬, ব্লক সি, মিরপুর ৬ বসবাস করেন। পুলিশ গত ১০ই অক্টোবর থেকে ১৪ই অক্টোবর শুক্রবার পর্যন্ত বিভিন্ন সময় অনলাইন মনিটরিং-এর ভিত্তিতে জানতে পারেন, আশিক বিভিন্ন লিংক থেকে প্রচার করে যে, ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার শেষ প্রচেষ্টা হিসাবে আবারো জঙ্গি নাটক ম স্থ করার কূটচাল বেছে নিয়েছে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার। এরপর গত বৃহস্পতিবার রাত ৩টায় ঢাকার মিরপুরে পুলিশ সদস্যরা বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। ওই পোস্টগুলো মিথ্যা বিভ্রান্তিকর ও গুজব বিষয়ক রাষ্ট্রের সার্বভৌত্বকে আঘাত ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য প্রকাশ করা হয়। এ ঘটনার মূল বিষয়বস্তু ছিল, পল্লবী থানা এলাকায় একটি অবিস্ফোরিত ককটেল পাওয়া যায়। যা পরবর্তীতে পুলিশের সিটিটিসি ইউনিটের বোম ডিসপোজাল টিম দ্বারা নিষ্ক্রিয় করা হয়।
কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন অসাধু ব্যক্তি এবং তাদের সহযোগীরা সেটিকে বিকৃত করে প্রচার করে। যার মাধ্যমে সমাজে বিদ্বেষ ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হওয়ার উপক্রম হয়। এ অবস্থায় সোশ্যাল মিডিয়ায় পর্যালোচনা ও অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে কতিপয় ব্যক্তি এবং তাদের সহযোগী দ্বারা এ ঘটনার বিভিন্ন ছবি ধারণ করে তা মিডিয়ায় প্রচার করার জন্য ও দেশ বিদেশে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব, ভাবমূর্তি ও জাতীয় চেতনাকে নষ্ট করার জন্য প্রেরণ করা হয়। এবং তা পরবর্তীতে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করা হয়। তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় এবং সোস্যাল মিডিয়ার তথ্যের ভিত্তিতে এসব ছবি সরবরাহ, ধারণকারী ও পোস্টকারী ব্যক্তিকে শনাক্ত করে গত শুক্রবার রাত ৯টার সময় সিটিটিসির সাধারণ ডায়েরি করে। মূল এজাহারে উল্লেখিত অফিসার ও ফোর্সসহ অভিযান পরিচালনা করে রাত সাড়ে ১১টায় পল্লবীর সেকশন ৬, ব্লক সি, মিরপুর ৬, ঢাকা এর ৬ষ্ঠ তলার বি/৬ ভাড়া বাসা থেকে আসামি মফিজুর রহমান আশিককে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়। এ সময় তার বাসা থেকে ২টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করে আলামত হিসেবে জব্দ হয়। আসামি প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, তার সাথে আরো কিছু ব্যক্তি জড়িত রয়েছে। জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও তাদের কাছ থেকে আলামত উদ্ধারের জন্য বিভিন্ন জায়গায় সারারাত অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযান শেষে গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ৯টায় আসামিকে সিটিটিসি অফিসে আনা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে তিনি আরও জানান, তার ব্যক্তিগত মোবাইলে ফেক ফেসবুক আইডির ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তি যারা নিয়মিত রাষ্ট্রের ভাবমূর্তিকে নষ্ট করার চক্রান্তে লিপ্ত পিনাকী ভট্টাচার্য, মুশফিকুল ফজল আনসারীসহ বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে পাঠায়। যা পরবর্তীতে উপরোক্ত লিংক ১ লিংক ২ এর মাধ্যমে মিথ্যা ও গুজব আকারে প্রকাশ ও প্রচার করে। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ডিজিটাল উপায়ে ফেক আইডি দ্বারা তার পাঠানো ও প্রকাশিত ছবিগুলো দিয়ে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্যের মাধ্যমে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি এবং সুনাম ক্ষুণ্ন হয়। এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে। যা পরবর্তীতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটার উপক্রম হয়। এসকল ছবি মোবাইলে ধারণ, প্রেরণ ও প্রচার করে ও দেশে বিদেশে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রেরণ করে বিভ্রান্তিকর ও প্রোপাগান্ডামূলক মিথ্যা পোস্ট করার প্রচার প্রচারণায় যুক্ত থাকায় ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২৪/২৫/৩১/৩৫ ধারায় অপরাধ করেছে আশিকুর।