শীতের সবজির মধ্যে অন্যতম বাঁধাকপি, ফুলকপি ও শিম। পুরো শীতের মৌসুমে দেশের সর্বত্র এসব সবজি পাওয়া যায়। তবে সময়ের বিবর্তনে বদলেছে অনেক কিছু। ভ্যাপসা গরমের মধ্যেই এখন রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে মিলছে এসব সবজি। তবে দাম বেশ চড়া। শীতের মৌসুমে যে শিমের কেজি ২০ টাকায় বিক্রি হয়, তা এখন ২০০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। ছোট আকারের ফুলকপি, বাঁধাকপির পিস বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা। এমন আকাশচুম্বী দামের পরও এক শ্রেণির ক্রেতা নতুন এই সবজি কিনতে বাজারে ছুটছেন। এসব ক্রেতা বলছেন, এমনিতেই দীর্ঘ দিন ধরে বাজারে সব ধরনের সবজির দাম চড়া, এর মধ্যে নতুন আসা সবজির দাম চড়া হবে এটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া নতুন সবজির প্রতি সবারই বাড়তি এক ধরনের আকর্ষণ থাকে। এদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমান বাজার চিত্র হিসেবে নতুন সবজি হিসেবে ফুলকপি, বাঁধাকপির দাম তুলনামূলক কম। কারণ গত বছর সবজির দাম বর্তমানের তুলনায় কম ছিল। কিন্তু গত বছর ফুলকপি, বাঁধাকপি বাজারে যখন নতুন আসে তখন দাম এর চেয়ে বেশি ছিল। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, চারজনের পরিবারের এক বেলার জন্য দুটি লাগবে এমন ছোটো আকারের ফুলকপির পিস বিক্রি হচ্ছে ৩০-৫০ টাকায়। একই দামে বিক্রি হচ্ছে বাঁধাকপি। আর শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮০-২০০ টাকা কেজি।
শীতের এসব আগাম সবজির এমন দামের বিষয়ে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের হিসাবে এবার শীতের আগাম সবজি শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপির দাম তুলনামূলক কম। কারণ গত বছর নতুন অবস্থায় শিমের কেজি ২৫০ টাকা বিক্রি হয়েছে, অথচ এখন ১৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আর গত বছর নতুন অবস্থায় বাঁধাকপি, ফুলকপির পিস বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকার ওপরে, এখন ৩০ টাকা বিক্রি করছি।
তিনি বলেন, বাজারের অন্য সবজির দামের সঙ্গে তুলনা করলে দেখবেন, এখন সব ধরনের সবজির দাম বেশি। এখন তো বাজারে ৫০ টাকার নিচে কোনো সবজির কেজি বিক্রি হচ্ছে না। সেখানে ৩০ টাকা দিয়ে এক পিস ফুলকপি, বাঁধাকপি পাওয়া ক্রেতাদের জন্য সুখবরই। রামপুরা ও খিলগাঁও বাজারে শিমের কেজি ২০০ টাকা এবং বাঁধাকপি ও ফুলকপি ৫০ টাকা পিস বিক্রি করছেন ব্যবসায়ী মো. রাজীব। তিনি বলেন, শীতের আগাম সবজি শিম, ফুলকপি, বাঁধাকপি কয়েকদিন ধরেই বাজারে আসছে। নতুন আসায় এখন এগুলোর দাম একটু বেশি। আর কিছুদিন গেলে এবং সরবরাহ বাড়লে এসব সবজির দাম আরও কমে যাবে। সেই সঙ্গে অন্যান্য সবজির দামও কমবে। এদিকে বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত কয়েক সপ্তাহের মতো এখনো পাকা টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৪০ টাকা। গাজর বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা কেজি। উস্তার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০-১০০ টাকায়। বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা কেজি। এছাড়া পটল, কাঁকরোল বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা কেজি। বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা কেজি। লাউ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকা পিস। এদিকে ২৫০ গ্রাম কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৪০-৬০ টাকায়। দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকা কেজি। আর আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩৫ টাকা কেজি।
কারওয়ান বাজার থেকে বাজার করা হারুন উর রশিদ বলেন, সবজির এখন যে দাম তাতে মাছ-মাংসের চেয়ে সবজির পেছনেই বেশি টাকা খরচ হচ্ছে। দুই মাসের বেশি হয়ে গেছে ৫০ টাকার নিচে কোনো সবজি পাওয়া যাচ্ছে না। বাজারে এখন নতুন সবজি হিসেবে ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম পাওয়া যাচ্ছে। ৮০ টাকা দিয়ে দুটি ফুলকপি কিনেছি, এতে আমাদের চরজনের পরিবারে বড়জোর দুইবেলা খাওয়া হবে।
শরিফুল ইসলাম নামের এক ক্রেতা বলেন, দামের কারণে সবজি খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছি অনেক দিন হয়ে গেছে। কিন্তু একেবারেই সবজি না খেলে হয় না। তাই মাঝে মধ্যে অল্প পরিমাণ সবজি কিনি। এরপরও ১০০ টাকার সবজি দিয়ে একদিন চলে না। খিলগাঁও থেকে বাজার করা রাবেয়া খাতুন বলেন, নতুন সবজি হওয়ায় শখ করে ৫০ টাকা দিয়ে একটি ফুলকপি কিনেছি। কিন্তু এই ফুলকপির সাইজ এতো ছোট, আমাদের চারজনের পরিবারে এক বেলাও ঠিকমত হবে না। অন্য সবজিও তো বাড়তি পরিমাণে কেনার উপায় নেই। বাজারে ২০০ টাকা নিয়ে সবজি কিনতে আসলে দেখা যায়, অনেকটা খালি হাতেই ফিরতে হচ্ছে।