রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০২:১৬ অপরাহ্ন

খুলনায় বিএনপির পর সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ২২ অক্টোবর, ২০২২

বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে তৎপর হয়ে উঠেছে খুলনা আওয়ামী লীগ। তারা বলছে, এ কর্মসূচি ঘিরে যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা না হয় সে জন্য সতর্ক নেতাকর্মীরা। বিএনপির সমাবেশের আগের দিন আজ শুক্রবার নগরীতে মিছিল ও সমাবেশ করবে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ। এ ছাড়া বড় আকারে একটি সমাবেশ করার সিদ্ধান্তও নিয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। খুলনা নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম ডি এ বাবুল রানা বলেন, খুলনা নগর ও জেলা আওয়ামী লীগ যৌথভাবে খুলনায় একটি মহাসমাবেশ করবে। তবে কবে ওই সমাবেশ হবে তা এখনো ঠিক হয়নি। বিএনপির শনিবারের সমাবেশ থেকে আওয়ামী লীগ বা দেশের সার্বিক উন্নয়ন নিয়ে কটূক্তি করা হলে পরে আওয়ামী লীগের সমাবেশ থেকে তার পাল্টা জবাব দেওয়া হবে বলে জানান তিনি। ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ গতকাল শুক্রবার নগরীতে সমাবেশ ও মিছিল করবে বলে জানান নগর আওয়ামী লীগের এ নেতা। তিনি জানান, বিকেলে বেলা সাড়ে তিনটায় শিববাড়ী মোড়ে খুলনায় সরকারের উন্নয়ন প্রচারে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সমাবেশ ও মিছিলে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতারা অংশ নেবেন। তবে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ আয়োজিত এ সমাবেশে আসা মিছিল যেন বিএনপির সমাবেশস্থলের পাশ দিয়ে না যায়, সে ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে সভায়।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুজিত অধিকারী বলেন, বিএনপির সমাবেশের দিন খুলনা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান করবেন। গত মঙ্গলবার বিশেষ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা না হয়, মানুষের জানমালের ক্ষতি না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক এবং সবাইকে সহনশীল অবস্থানে থাকতে বলা হয়েছে।
আজ শনিবার শহরের ডাকবাংলো ও ফেরিঘাট মোড়ের মাঝামাঝি সোনালী ব্যাংক চত্বরে গণসমাবেশ করবে বিএনপি। এ সমাবেশকে ঘিরে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে দলটি। এরই মধ্যে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি)। এ ব্যাপারে পুলিশ কমিশনার মাসুদুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, সমাবেশ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। সমাবেশের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন থাকবে । এদিকে বিএনপির প্রস্তুতির মধ্যেই সমাবেশের দিন ও আগের দিন বাস চলাচল বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে খুলনা জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ, মাইক্রোবাস মালিক সমিতি। এরসঙ্গে একাত্ম প্রকাশ করেছে খুলনা জেলা শ্রমিক ইউনিয়ন। বিএনপির অভিযোগ, সমাবেশে যাতে বেশি লোকের সমাগম না হতে পারে, সে জন্য ষড়যন্ত্র করে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তারপরও এক লাখ লোক জমায়েতের পরিকল্পনা রয়েছে দলটির।
তবে বিএনপি নেতাদের অভিযোগ অস্বীকার করে খুলনা নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমডিএ বাবুল রানা জানান, বিএনপি পূর্বনির্ধারিত সমাবেশ আহ্বান করেছে। এটা প্রতিহত করতে হবে বা বাধা দিতে হবে, এটা আমরা বিশ্বাস করি না। বাস বন্ধ করেছে বাস মালিক সমিতি। এটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার।
খুলনায় লঞ্চ চলাচল বন্ধ: খুলনায় চলছে দুই দিনের বাস ধর্মঘট। এরই মধ্যে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে লঞ্চ চলাচলও। বেতন বাড়ানোসহ ১০ দফা দাবিতে এ ধর্মঘট ডেকেছে নৌযান শ্রমিকরা। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে খুলনা লঞ্চ টার্মিনাল থেকে কোনো লঞ্চ ছেড়ে যায়নি। এর ফলে খুলনা থেকে দক্ষিণ দিকে যাওয়ার সব লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে যাত্রীরা। বাংলাদেশ লঞ্চ লেবার অ্যাসোসিয়েশনের খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, শ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধিসহ ১০ দফা দাবিতে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। দাবি মেনে নেয়া হলে যেকোনো মুহূর্তে ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হবে।
খুলনায় সমাবেশের পূর্বে বিএনপির ১৩ নেতাকর্মী আটক: খুলনা মহানগরীর বসুপাড়া এলাকা থেকে বিএনপির জ্যৈষ্ঠ নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের সাথে পরিকল্পিত জনসভার আগে দেখা করতে এলে ১৩ জন বিএনপি নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।
দলটির নেতাকর্মীরা শুক্রবার এমন দাবি করেন। খুলনা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন জানান, খুলনা জনসভা সমন্বয় কমিটির প্রধান উপদেষ্টা গয়েশ্বর বৃহস্পতিবার বিকেলে দলের খুলনা বিভাগীয় সমাবেশে যোগ দিতে খুলনায় আসেন। সমাবেশ শনিবার হওয়ার কথা আছে। তিনি বাগেরহাট জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি কাজী খায়রুজ্জামান শিপনের বসুপাড়ার বাসায় অবস্থান করছেন। রাতে গয়েশ্বরের সাথে দেখা করতে আসা ১৩ নেতাকর্মীকে এলাকায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ আটক করে। গয়েশ্বর অভিযোগ করেন, ‘কেউ কেউ হাতে লাঠি ও কোমরে পিস্তল নিয়ে ঘরে ঢুকে ত্রাশের সৃষ্টি করে। তারা পুলিশ কি না বোঝার উপায় ছিল না। আমাকে দেখতে আসা ১৩ জনকে আটক করেছে তারা।’
নগরীর সোনাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমতাজুল হক বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে তারা বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন মামলায় আসামিদের ধরেছে। বৃহস্পতিবার রাতে তিনি বলেন, ‘কোন এলাকা থেকে কাকে ধরা হয়েছে তা সকালেই জানাতে পারব।’
এদিকে, খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুল আলম মনা অভিযোগ করেছেন, সমাবেশে যোগ দিতে আসা নেতাকর্মীদের আটক করতে বৃহস্পতিবার রাতে নগরীর বিভিন্ন বাসা-বাড়ি ও হোটেলে অভিযান চালায় পুলিশ। এর আগে ২৮ সেপ্টেম্বর বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবি, দলের নেতাকর্মীদের হত্যা ও মামলা দায়ের এবং জ্বালানি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ১০টি বিভাগীয় শহরে জনসভা করার ঘোষণা দেয় বিএনপি। দলটি ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহে দুটি বিশাল সমাবেশের আয়োজন করেছে এবং তৃতীয়টি শনিবার খুলনায় অনুষ্ঠিত হবে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে আন্দোলন করছি। এরই অংশ হিসেবে আজ ২২ অক্টোবর খুলনায় আমাদের সমাবেশ। এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে সরকার একটি সন্ত্রাসের রাজত্ব তৈরি করছে খুলনায়। পথে পথে আমাদের নেতা কর্মীদেরকে সাধারণ মানুষদেরকে গ্রেফতার করা হচ্ছে।’




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com