রাসূলে আকরাম সা: শিশুদের খুব ভালোবাসতেন, আদর করতেন, চুমু খেতেন- এমনকি সালামও দিতেন। সত্য কৌতুক করতেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে রসিকতাও করতেন। তিনি তাঁর আদরের নাতিদ্বয় হজরত হাসাহ ও হোসাইন রা:কে অত্যন্ত ভালোবাসতেন ও কোলে নিতেন এবং সময় দিতেন। উম্মুল মুমিনিন আয়েশা রা: থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, জনৈক বেদুইন সাহাবি রাসূলুল্লাহ সা:-এর কাছে এসেছে। রাসূলুল্লাহ সা: এক শিশুকে চুমু দিলে সে বলল- হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি শিশুদের চুমু খান? উত্তরে নবীজী বললেন, ‘হ্যাঁ’। সে বলল, আমরা তো শিশুদের চুমু দিই না। এ কথা শুনে রাসূলে আকরাম সা: বললেন, ‘আল্লাহ তোমার দিল থেকে রহম ছিনিয়ে নিলে আমার কী করার আছে! ’(বুখারি-৫৯৯৮, মুসলিম-২৩১৭) শিশুদের প্রতি প্রিয় নবীজীর আদর-স্নেহ-শিশুদের প্রতি দয়া ও মুহাব্বাতের বিষয়ে রাসূলে আকরাম সা: বলেন, ‘যে আমাদের ছোটদের প্রতি রহম করে না এবং আমাদের বড়দের অধিকারের প্রতি লক্ষ রাখে না, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।’ (আবু দাউদ-৪৯৪৩, তিরমিজি-২০৩২) আবু হুরায়রা রা: বর্ণনা করেন- একদা রাসূলুল্লাহ সা: তাঁর নাতি হাসান রা:কে চুমু খেলেন। আকরা ইবনে হাবিস রা: পাশে বসা ছিলেন। তিনি বললেন, আমার ১০টি সন্তান। একজনকেও আমি কখনো চুমু দিইনি। রাসূলে আকরাম সা: তার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘নিশ্চয় যে দয়া করে না তার প্রতিও দয়া করা হবে না।’ (বুখারি-৫৯৯৭, মুসলিম-২৩১৮) খাদেমে রাসূল হজরত আনাস রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: আনসারদের জিয়ারতে যেতেন। আনসারি শিশুরা নবীজীর চতুর্দিকে ভিড় করত। তিনি শিশুদের সালাম দিতেন, মাথায় হাত বুলাতেন এবং তাদের জন্য দোয়া করতেন। (নাসায়ি-১০০৮৮, মুসনাদে বাযযার-৬৮৭২, সহিহ ইবনে হিব্বান-৪৫৯)
এতিম শিশুদের কল্যাণের জন্য দোয়া করতেন রাসূলে আকরাম সা:। রাসূলে আকরাম সা: এতিম শিশুদের খোঁজখবর নিতেন এবং স্নেহের পরশ বুলিয়ে দিতেন। জাফর রা: মুতার যুদ্ধে শহীদ হলে তার শোকাহত পরিবারের খোঁজখবর ও সান্তানাদির জন্য রাসূলে আকরাম সা: জাফর রা:-এর বাড়িতে যান। তার পরিবারের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেন এবং তার সন্তানদের আদর করেন, স্নেহের পরশ বুলিয়ে দেন। জাফর রা:-এর ছেলে আবদুুল্লাহ রা: বড় হয়ে সে মধুর স্মৃতি বর্ণনা করেছেন এভাবে- রাসূলে আকরাম সা: এসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করলেন এবং আমাদের জন্য দোয়া করলেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি নিজেই জাফরের সন্তানদের অভিভাবক হয়ে যান।’ (মুস্তাদরাকে হাকেম-১৩৭৯) আবদুুল্লাহ ইবনে সালাবা রা: হিজরতের চার বছর আগে জন্মগ্রহণ করেন। মুসআব ইবনে আবদুুল্লাহ রাহ: বলেন, মক্কা বিজয়ের বছর আবদুুল্লাহ ইবনে সালাবাকে রাসূলুল্লাহর কাছে আনা হলো। তিনি তার চেহারায় হাত বুলিয়ে দেন এবং তার জন্য বরকতের দোয়া করেন। (মুস্তাদরাকে হাকেম- ৫২১৫)
জাবের ইবনে সামুরা রা: বলেন, আমি রাসূলে আকরাম সা:-এর সাথে ফজরের নামাজ পড়লাম। নামাজের পর তিনি বাড়ির দিকে রওনা হলেন। আমিও তার সাথে বের হলাম। কয়েকজন শিশু তাঁর সামনে এসেছে। তিনি একজন একজন করে প্রত্যেকের গ-দ্বয়ে কোমল স্পর্শ দিলেন। আমার গালেও পবিত্র হাতের শীতল স্পর্শ দান করলেন। তাঁর হাত থেকে তখন এমন শীতলতা ও সুঘ্রাণ পেয়েছি, (মনে হলো) যেন এইমাত্র তাঁর হাত তুলে এনেছেন আতরওয়ালার পাত্র থেকে। (সহিহ মুসলিম-২৩২৯, মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা-৩২৪২৪, মুসনাদে বাযযার-৪২৫৭) শিশুদের সাথে প্রিয় নবীজীর রসিকতা : রাসূলে আকরাম সা: প্রায়ই শিশুদের সাথে রসিকতা করতেন। হাসি-আনন্দ করতেন। আনাস রা: রাসূলুল্লাহ সা:-এর খেদমত করতেন। তিনি ছিলেন খুব চ ল। রাসূলুল্লাহ সা: রসিকতা করে তাকে দুই কানওয়ালা বলে ডাকতেন। আনাস রা: বলেন, রাসূলে আকরাম সা: তাকে হে ‘দুই কানওয়ালা’ বলে ডেকেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, নবীজী তার সাথে রসিকতা করে এভাবে ডেকেছেন। (আবু দাউদ-৫০০২, জামে তিরমিজি-২১০৯) উম্মে সুলাইম রা:-এর এক সন্তানের নাম ছিল আবু উমাইর। ছোট্ট শিশু। তার একটা ‘নুগাইর’ পাখি ছিল। সে এটি দিয়ে খেলা করত। আনাস রা: বলেন, উম্মে সুলাইম রা:-এর এক ছোট্ট ছেলে ছিল। নাম আবু উমাইর। তার একটি নুগাইর পাখি ছিল। রাসূলে আকরাম সা: যখনই উম্মে সুলাইম রা:-এর ঘরে আসতেন আবু উমাইরের সাথে হাসি-ঠাট্টা করতেন। একদিন তার কাছে এসে দেখেন, তার মন খারাপ। বললেন, ‘কী হলো আবু উমাইরের, মন খারাপ কেন?’ লোকেরা বলল, সে যে নুগাইর পাখিটা দিয়ে খেলা করত সেটি মারা গেছে। এরপর থেকে যখনই রাসূলুল্লাহ সা: তাকে দেখতেন, বলতেন, ‘আবু উমাইর! তোমার নুগাইরটির কী হলো! (দেখছি না যে!)’ (সহিহ বুখারি-৬২০৩, সহিহ মুসলিম-২১৫০) এভাবেই আমাদের প্রিয় নবীজী শিশুদের সাথে হাসি রসিকতা করতেন। তিনি কখনোই কঠোরতা অবলম্বন করতেন না। এমনি অনুপম চরিত্রের অধিকারী ছিলেন প্রিয় নবী সা:। লেখক : খতিব, বড় চাঁদপুর পূর্বপাড়া জামে মসজিদ, সরসপুর, মনোহরগঞ্জ, কুমিল্লা