পবিত্র কোরআনের একটি সুরার নাম হাদিদ। যার অর্থ লোহা। এই সুরায় আল্লাহ লোহা সম্পর্কে বলেছেন, ‘আমি পৃথিবীতে লোহা বর্ষণ করেছি, যাতে আছে প্রচ- শক্তি এবং আছে মানুষের জন্য বহুবিধ কল্যাণ। ’ (সুরা হাদিদ, আয়াত : ২৬) উল্লিখিত আয়াতে কয়েকটি বিষয় গবেষণার দাবি রাখে।
তা হলো: ১. লোহা বর্ষণ করেছি : উল্লিখিত আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘আমি লোহা বর্ষণ করেছি। ’ যা থেকে ধারণা পাওয়া যায় লোহার সৃষ্টি এই পৃথিবীতে হয়নি। লোহার বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণও বিষয়টিকে সমর্থন করে। ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে কেলভি ইনস্টিটিউট অব পার্টিকেল এস্ট্রোফিজিকস অ্যান্ড কসমোলজি (কেআইপিএসি) এবং স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব এনার্জির যৌথ গবেষণায় উঠে আসে, ‘প্রায় ১০ বিলিয়ন বছর আগে ক্লাস্টার গ্যালাক্সিগুলোর মধ্যে ভয়ানক সংঘর্ষের ফলে লোহা সব গ্যালাক্সির মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। ’ ধারণা করা হয়, সে সময় পৃথিবীতেও লোহা ছড়িয়ে পড়ে। পরবর্তী সময়ে চৌম্বকীয় আকর্ষণের ফলে পৃথিবীর কেন্দ্রস্থলে তা পূঞ্জীভূত হয়।
২. যাতে আছে প্রচ- শক্তি : আল্লাহ লোহাকে প্রচ- শক্তিশালী পদার্থ বলেছেন। আর বিজ্ঞানের ভাষায় লোহা প্রচ- রকম শক্তিশালী পদার্থ। কেননা প্রতিটি পদার্থের পরমাণু ভাঙলে কেন্দ্রে নিউক্লিয়াস পাওয়া যায়, যেখানে প্রোট্রন ও নিউট্রন থাকে। আর ইলেকট্রনগুলো কেন্দ্রের চারদিকে ঘোরে। আর সব পদার্থের মধ্যে লোহার কেন্দ্রই সবচেয়ে শক্তিশালী। লোহার একটি পরমাণু সৃষ্টির জন্য ৫ বিলিয়ন ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার প্রয়োজন হয়, যা সৌরজগতের সামগ্রিক তাপমাত্রার চেয়েও বেশি। বিজ্ঞানীদের দাবি, এখন থেকে ১০-১২ বিলিয়ন বছর আগে মহাবিশ্বে বিলিয়ন বিলিয়ন নক্ষত্রের ভয়াবহ সংঘর্ষে হিলিয়ামের চেয়ে ভারী মৌলিক কণিকার সৃষ্টি হয়েছিল। যার মধ্যে লোহার পরমাণু ছিল অন্যতম। সুপারনোভা বিস্ফোরণের সময় প্রায় ১০ মিলিয়ন ডিগ্রি তাপমাত্রার সৃষ্টি হয়েছিল, যা এসব মৌলিক কণিকা সৃষ্টির জন্য দায়ী।
৩. আছে বহুবিধ কল্যাণ : কোরআনে আল্লাহ লোহাকে বহুবিধ কল্যাণের ধারক বলেছেন। আর নৃ-তাত্ত্বিকরা বলেন, লৌহ যুগ তথা যখন থেকে মানুষ লোহার ব্যবহার শিখেছে, তখন থেকেই তাদের জীবনে আমূল পরিবর্তন আসতে শুরু হয়েছে। বলা হয়, লৌহ যুগই আধুনিক যুগের সূতিকাগার। আধুনিক যুগেও লোহার বহুমুখী ব্যবহার কোরআনের এই বাক্যের সত্যতার সাক্ষ্য দেয়। এ ছাড়া মানব দেহের সুস্থতার জন্য লোহার প্রয়োজন হয়। লোহার অভাবে মানবদেহে রক্তের উৎপাদন ব্যাহত হয়, রক্তশূন্যতা দেখা দেয়।
সুরা হাদিদ ও বিস্ময়কর কিছু তথ্য : সুরা হাদিদ কোরআনের ৫৭ নম্বর সুরা। আর লোহার চারটি আইসোটপের একটি হলো ৫৭ঋব। লোহার পারমাণবিক সংখ্যা হলো ২৬ এবং আরবি ‘হাদিদ’ শব্দের গাণিতিক মানও ২৬। তা এভাবে যে আরবি হাদিদ লিখতে চারটি বর্ণ লাগে। হা, দাল, ইয়া, দাল। আর ‘হা’-এর মান ৮, ‘দাল’-এর মান ৪, ‘ইয়া’-এর মান ১০ ও অপর দালের মান ৪। সুতরাং হাদিদ শব্দের গাণিতিক মান ২৬। এ ছাড়া বিজ্ঞানীর মতে, পৃথিবীর ঠিক কেন্দ্রস্থলে তথা পাঁচ হাজার ১০০ কিলোমিটার গভীরে স্ফটিক আকারে লোহার স্তর আছে। আর সুরা হাদিদও পবিত্র কোরআনের ঠিক কেন্দ্রস্থলে আছে। কেননা কোরআনের মোট ১১৪টি সুরার মধ্যে সুরা হাদিদের অবস্থান ৫৭তম।