মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
ভোলার বিভিন্ন চরাঞ্চল অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত লালমোহনে ডা. আজাহার উদ্দিন ডিগ্রি কলেজের সভাপতিকে সংবর্ধনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহিদ ও আহতদের স্মরণে স্মরণসভা সিংড়ায় পরিবেশ রক্ষার্থে ৫৩৬টি ডাস্টবিন বিতরণ কাজী আজিম উদ্দিন কলেজে শিক্ষার্থীদের সাথে ছাত্রদলের ৩১ দফা নিয়ে মতবিনিময় সভা পটুয়াখালীতে শিক্ষক দম্পতি হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন টুঙ্গিপাড়ায় ভিক্ষুক ও হতদরিদ্রদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলো সমাজসেবা অফিস জুডিসিয়াল সার্ভিস কমিশনের আওতায় এনে সহায়ক কর্মচারী অন্তর্ভুক্ত ও বিচার বিভাগের আলাদা সচিবালয় গঠনের নিমিত্তে দাবি পেশ দাউদকান্দিতে সড়কের মাটি ধসে পড়ল খালে, দুর্ঘটনার আশংকা সীতাকুন্ডে বিতর্কিত মাদ্রাসা পরিচালকের করা মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে মানববন্ধন

চক্ষুরোগ গবেষণায় মুসলমানদের অবদান

মাইমুনা আক্তার
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২২

প্রায় হাজার বছর আগে মুসলিমরা চিকিৎসাবিজ্ঞানের ওপর যেসব বই লিখে গেছেন, তার প্রায় প্রতিটিতেই চোখের চিকিৎসার কোনো না কোনো বিষয়ের ওপর আলোকপাত করা হয়েছে। যেহেতু সরাসরি মানব চোখের বদলে পশুর চোখের ওপর তাঁদের গবেষণা চালাতে হয়েছে, তাই তাঁদের গবেষণায়ও বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। সে যুগে মানব শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যবচ্ছেদকে অবমাননাকর হিসেবে দেখা হতো। তবু এই বাধাগুলো মানব চোখের ব্যবচ্ছেদের আদিতম চিত্রগুলো তৈরি করা থেকে গবেষকদের থামাতে পারেনি।
দশম থেকে তেরো শতকের মুসলিম চক্ষু সার্জন বা চক্ষরোগের চিকিৎসকরা চোখের অস্ত্রোপচার, ব্যবচ্ছেদের পাশাপাশি চক্ষুবিষয়ক গবেষণা ও তার ফলাফল চিকিৎসাশাস্ত্রের বিভিন্ন পাঠ্য বইয়ে লিখেছেন এবং ছবির মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেছেন।
বিংশ শতকের বিখ্যাত জার্মান অধ্যাপক চিকিৎসাবিদ জুলিয়াস হির্শবার্গের মতে, সে সময় চক্ষুরোগের চিকিৎসার ওপর প্রায় ৩০টির মতো টেক্সট বই লেখা হয়েছিল, যার মধ্যে ১৪টি এখনো আছে। এসব বইয়ে কনজাংটিভা, কর্নিয়া, ইউভিএ ও রেটিনার মতো আধুনিক বিভিন্ন টার্ম বা শব্দ ব্যবহার করা হয়েছিল। ট্রাকোমা বা চোখের পাতার সংক্রামক রোগের বিভিন্ন অস্ত্রোপচার ছিল খুবই সাধারণ চিকিৎসার মতো। গ্লুকোমার চিকিৎসা বা চোখের ভেতরের রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার চিকিৎসা ছিল খুব জনপ্রিয়। তবে চক্ষুরোগ চিকিৎসার ক্ষেত্রে মুসলিমদের সবচেয়ে বড় অবদান হলো চোখের ছানি অপসারণ। ছানির আরবি নাম হলো ‘আল-মা আল-নাজিল ফিল আইন’ কিংবা চোখের ভেতরে পানি জমে যাওয়া। চোখের ভেতরে পানি জমে চোখকে আর্দ্র ও দৃষ্টিশক্তিকে অস্পষ্ট করে তোলাকেই ছানি নামে অভিহিত করা হয়। ছানি রোগীদের দৃষ্টিশক্তি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য দশম শতকের দিকে ইরাকের আল-মাওসিলি এক ধরনের ফাঁপা সুই তৈরি করেন, যার সাহায্যে ছানি অপসারণ করা হতো। চোখের কর্নিয়া ও কনজাংটিভার সংযোগকেন্দ্রের সীমানা দিয়ে এই সুই প্রবেশ করিয়ে পানি টেনে নেওয়া হতো। অন্য আরো পদ্ধতির সঙ্গে চোখের ছানি অপসারণের এই প্রক্রিয়া কিছু আধুনিক প্রযুক্তির মিশেল ঘটিয়ে আজও অনুসরণ করা হয়। নিজের গবেষণা ও চিকিৎসক হিসেবে অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করে আল-মাওসিলি ‘বুক অব চয়সেস ইন দ্য ট্রিটমেন্ট অব আই ডিজিজেস’ নামের একটি বই লেখেন। এ বইয়ে প্রায় ৪৮ ধরনের বিভিন্ন চক্ষুরোগের ওপর আলোচনা করা হয়েছে। এই পান্ডুলিপি এখনো স্পেনের মাদ্রিদ শহরের এসকোরিয়াল লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত আছে। বিংশ শতাব্দীর আগ পর্যন্ত আল-মাওসিলির বইগুলো আরবি এবং ১৩ শতকের কিছু হিব্রু অনুবাদে পাওয়া যেত। ১৯০৫ সালে জার্মান অধ্যাপক হির্শবার্গ জার্মান ভাষায় বইগুলোর অনুবাদ শুরু করেন। আল-মাওসিলির সমসাময়িক ইরাকের বাগদাদে আলী ইবনে ঈসা নামে আরেকজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ ছিলেন এবং তিনিই সম্ভবত ইসলামের সবচেয়ে বিখ্যাত চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ। তিনি ‘এ নোটবুক অব দ্য অকুলিস্ট’ নামের একটি বই লেখেন, যেটাকে চক্ষুরোগ বিষয়ের ওপর সবচেয়ে পূর্ণাঙ্গ টেক্সটবুক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। লাতিন ভাষায়ও বইটি অনুবাদ করা হয় এবং ১৪৯৭ খ্রিস্টাব্দে ভেনিস থেকে অনুবাদটি প্রকাশিত হয়।
ইবনে ঈসাই কিন্তু একমাত্র মুসলিম চক্ষু সার্জন নন, যিনি চোখের বিভিন্ন রোগকে অন্যান্য অসুখের মতো বলে বিবেচনা করেছেন। আবু রুহ মুহাম্মদ ইবনে নেসুর ইবনে আব্দুল্লাহ, যিনি মূলত পরিচিত আল-জুরজানি নামে। পারস্যের অধিবাসী জুরজানি ১০৮৮ খ্রিস্টাব্দে ‘দ্য লাইট অব দ্য আই’ নামের একটি বই লেখেন। এই বইয়ের একটি সম্পূর্ণ অধ্যায়ে তিনি এমন সব রোগের বিষয়ে আলোচনা করেছেন, যার উপসর্গ চোখ এবং তা দৃষ্টির মাধ্যমে জানা যায়। যেমনÍতৃতীয় স্নায়ুর বৈকল্য, রক্তের বিভিন্ন রোগ, বিষক্রিয়াÍএগুলো কিন্তু চোখের দৃষ্টি দেখেই বোঝা সম্ভব। দক্ষিণ স্পেনের কর্ডোভায় একটি আবক্ষ মূর্তি অমর করে রেখেছে মুহাম্মাদ ইবনে কাসাম ইবনে আসলাম আল-ঘাফিকিকে। ঘাফিকি একজন চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ, যিনি কর্ডোভা শহরে বাস করতেন এবং এ শহরেই চিকিৎসক হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছেন। তাঁর লেখা একটি বইয়ের নাম ‘দ্য রাইট গাইড ইন অফথ্যালমিক ড্রাগ’। এই বইয়ে শুধু চোখের বিভিন্ন রোগের বিষয়েই আলোচনা করা হয়নি, বরং মাথা এবং মস্তিষ্কের নানা রোগের ওপরও আলোকপাত করা হয়েছে। বিবিসির অ্যান ইসলামিক হিস্টোরি অব ইউরোপ অনুষ্ঠানে রাগেহ ওমর বলেন, ‘ঘাফিকি যেভাবে চোখের ট্র্যাকোমা রোগের চিকিৎসা করতেন, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত সেই পদ্ধতি অনুসরণ করা হতো। ১৯৬৫ সালে তাঁর ৮০০ বছর পূর্তিতে কর্ডোভার মিউনিসিপ্যাল হসপিটালে ঘাফিকির আবক্ষ মূর্তি স্থাপন করা হয়। ’ যুক্তরাজ্যে ৫০ বছরের বেশি বয়স্ক লোকদের অন্ধত্বের একটি বড় কারণ হলো চোখের ছানি। রয়াল কলেজ অফথ্যালমোলজিস্টসের মতে, অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ছানির সম্পূর্ণ অপসারণ সম্ভব এবং এর ফলে রোগীদের কোনো রকম ক্ষতির সম্ভাবনা একেবারে শূন্যের কোটায়। যুক্তরাজ্যে সম্ভাব্য সবচেয়ে বহুল সংঘটিত অস্ত্রোপচারও হলো এই ছানির অপসারণ। কে জানত! দশম শতাব্দীর একজন আল-মাওসিলি একবিংশ শতাব্দীর অন্যতম জনপ্রিয় একটি অস্ত্রোপচারের ভিত গড়ে যাবেন! তথ্যঋণ : মুসলিম সভ্যতার ১০০১ আবিষ্কার




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com